ঢাকা | শনিবার
১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বন্যার মধ্যেই নদীভাঙ্গন

বন্যার মধ্যেই নদীভাঙ্গন

টাঙ্গাইলে যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। নদীতে পানির স্রোতের কারণে পাড় ধ্বসের সাথে সাথে শুরু হয়েছে ভাঙন। এতে নতুন করে গৃহহীন হচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ। এছাড়া নদী পথ পরিবর্তন হওয়ায় নতুন নতুন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এদিকে গেল ২৪ ঘন্টায় ভূঞাপুর যমুনা নদীতে ১০ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া ও চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় ভাঙন ও নদীর পাড়ে ধ্বস নেমেছে। এতে ভাঙনরোধে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে নদীতে বালুভর্তি প্লাস্টিকের বস্তা ফেলছে। এছাড়া পানিবৃদ্ধি হওয়ায় গাবসারা ও অর্জূনা ইউনিয়ন চরাঞ্চলের কয়েকগ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে চরম দূর্ভোগ নেমেছে বন্যা কবলিত পরিবারগুলোতে।

এছাড়া কালিহাতী উপজেলার গোবিন্দপুর, গোহালিয়া বাড়ি ইউনিয়ন এবং টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বেশ কিছু এলাকার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার একর জমির পাট, আউস ধান, তিল, বাদামসহ বিভিন্ন ফসল। তবে যমুনা ধ্বস ও ভাঙন ঠেকাতে কোন উদ্যোগ নেয়নি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

ভূঞাপুরের কষ্টাপাড়া গ্রামের শ্যামল ভৌমিক জানায়, নদীতে পানি বাড়ায় স্রােতে বসতভিটা ধ্বসে নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। ভাঙতে ভাঙতে এখন শুধু বাড়ির ঘরটিই অবশিষ্ট রয়েছে। তিন বছর ধরে ভাঙন শুরু হয়েছে। বসতভিটার সামনে নদীর দিকে অনেক বসতি ছিল। কিন্তু যমুনার ভাঙনে পরিবারগুলো তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।

গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মনির বলেন, ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে এখন শুধু বাড়িটিই অবশিষ্ট রয়েছে। গেল কয়েকদিনের যমুনা নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানির স্রােত পূর্বে দিকে হওয়ায় নদীর পাড়ে ধ্বস শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ঘর বাড়ি নদীর গর্ভে চলে গেছে। ভাঙন ও ধ্বস ঠেকাতে নদীতে জিও ব্যাগ ফেলার জোরদাবী জানাই।

এদিকে টাঙ্গাইলে দুইটি উপজেলায় বাঁধ ও সড়ক ভেঙে প্রায় ২০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও সড়ক পথে যাতায়াতও বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। রবিবার কালিহাতী উপজেলার আনালিয়াবাড়ী এলাকায় বাঁধ ও বাসাইল উপজেলার আন্ধিরাপাড়া-বালিনা সড়কের বালিনা উত্তরপাড়া এলাকায় সড়কটি ভেঙে যায়।

বাসাইল উপজেলা আন্ধিরাপাড়া-বালিনা সড়কের বালিনা উত্তরপাড়া এলাকার সড়কটির ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। পরে অতিরিক্ত স্রোতের কারণে সড়কটি ভেঙে যায়। এছাড়াও রবিবার সকালে আন্ধিরাপাড়ায় আরও তিনটি স্থানে সড়ক ভেঙে যায়। দুইদিনে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করে উপজেলার বালিনা, আন্ধিরাপাড়া, আদাজান, কাঞ্চনপুর ও কোদালিয়াপাড়াসহ কয়েকটি এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতও বন্ধ রয়েছে। ফলে কয়েকটি গ্রামের মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে মানুষ নৌকা দিয়ে যাতায়াত করছে।

পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কটির চারটি জায়গায় ভেঙে গেছে। সড়ক দিয়ে পানি প্রবেশ করে বালিনা, আদাজান, ভোরপাড়া, আন্ধিরাপাড়া, কাঞ্চনপুরসহ ৮টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। এখন নৌকা নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’ অন্যদিকে কালিহাতী উপজেলার আনালিয়াবাড়ী এলাকায় বাঁধটি ভেঙে যায়। ফলে এ বাঁধ দিয়েও বর্তমানে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।

সল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম বলেন, ‘পানির অতিরিক্ত চাপের কারণে বাঁধটি ভেঙে গেছে। এ কারণে উপজেলার আনালিয়াবাড়ী, ভাওয়াল, নরদৈ, গড়িয়া, হাবলা, দেওলাবাড়ীসহ ১০ থেকে ১২ টি গ্রামের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এখানে গত বছরও ভেঙে গিয়েছিল।

যমুনার পাশাপাশি ধলেশ^রী, ঝিনাই, বংশাই, লৌহজংসহ বিভিন্ন নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে জেলার ১২টি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হচ্ছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, যমুনা ও ঝিনাই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও অন্য সকল নদীর পানিও বাড়ছে। এতে করে জেলায় বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহ্সানুল বাশার জানান, বন্যায় যমুনা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় পাট, আউস ধান, তিল, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি সপ্তাহখানেরকের মধ্যে নেমে গেলে ফসলের খুব একটা ক্ষতি হবেনা। তবে তার থেকে সময়সীমা বেশি হলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।

জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

সংবাদটি শেয়ার করুন