করোনাভাইরাসের কারণে অন্যসব খাতের মতোই ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের পুঁজিবাজার। ক্ষতির মধ্যেও সরকারের নীতি ও বাজারবান্ধব আইন প্রণয়নে পুঁজিবাজার এগিয়ে যাচ্ছে। এই গতি আরো বৃদ্ধিতে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজার উন্নয়ন স্বার্থে ছয়টি দাবি জানায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
গতকাল সোমবার বাজেট ঘোষণা পরবর্তী রাজধানী নিকুঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর এই দাবিগুলো জানানো হয়। এসব দাবি মধ্যে রয়েছে- ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে বন্ড বাজার সম্প্রসারণ, করপোরেট করহার হ্রাস, লভ্যাংশে করমুক্ত সীমা বৃদ্ধি, এসএমই বোর্ডের তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার মুক্ত-হ্রাস, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ আয়ের করহার হ্রাসসহ ট্রেক হোল্ডারদের উৎস কর হ্রাস করার প্রস্তাব।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএসই জানায়, ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভুত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন। তার জন্য ডিএসই আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছে।
এবারের বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশকিছু খাতকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়। এছাড়া বাজেটে বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক সম্ভবানা কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যা দেশের সামগ্রীক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনারই বহিঃপ্রকাশ। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করার কৌশল নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়ণ করা হয়। উন্নয়ন ও উৎপাদনমূখী যে সু-পরিকল্পিত কর্মপন্থা, ব্যবসাবান্ধব ও ব্যবস্থাপনা কৌশল বাজেটে প্রস্তাব করা হয়, সেজন্য ডিএসই বাজেট প্রস্তাবনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তরিত হলে সেই তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। এতে বাংলাদেশের বড় এবং স্বনামধন্য কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে। এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে জানায়। এসময় প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের বিকাশ ও উন্নয়ন লক্ষে ডিএসইর একগুচ্ছ দাবি রাখেন।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে বন্ডবাজার সম্প্রসারণ: একটি স্বতন্ত্র বন্ড মার্কেট তৈরির জন্য রেগুলেটরি এবং টেকনোলজিক্যাল কাঠামো সম্পূর্ণ রূপে তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে কর্পোরেট বন্ড মার্কেটের আকার ছোট। ডিএসই মনে করে, একটি সময়োপযোগী নীতি সহায়তার মাধ্যমে কার্যকর বন্ড মার্কেট তৈরি করা গেলে দেশের পুঁজিবাজার তথা সামগ্রিক অর্থনীতি উপকৃত হবে। সেজন্য জিরো কুপন বন্ডের মতো সকল প্রকার কর্পোরেট বন্ডের উদ্ভূত সুদ বিনিয়োগকারী নির্বিশেষে করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করছি।
করপোরেট করহার হ্রাস- প্রস্তাবিত বাজেটে ১০ শতাংশের অধিক শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তর হলে ওই তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। যা অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ। পুঁজিবাজারের টেকসই সম্প্রসারণের জন্য তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান নূন্যতম ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়।
তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের করমুক্ত সীমাবৃদ্ধিকরণ- পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ৫০ হাজার থেকে নূন্যতম ১ লাখ টাকা করার প্রস্তাব জানানো হয়। পাশাপাশি লভ্যাংশ থেকে উৎসে কর চূড়ান্ত করদার হিসেবে বিবেচনা করার দাবি জানানো হয়।
এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার হ্রাস- ২০২১ সালে ডিএসই এসএমই বোর্ড নামে একটি পৃথক বোর্ড চালু করে। যার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করে দীর্ঘমেয়াদী মূলধন যোগান ও কর্পোরেট গভর্ন্যান্স উন্নতরণ। এই বোর্ডে কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করার জন্য নূন্যতম ৫ বছরের জন্য হ্রাসকৃত ১০ শতাংশ হারে কর ধার্য্য করার
দাবি জানানো হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ আয়ের উপর করহার হ্রাস- কোম্পানিগুলো কর পরবর্তী মুনাফা থেকে লভ্যাংশ প্রদান করে। লভ্যাংশ আয়ের উপর কর প্রকৃত পক্ষে দ্বৈত কর। এজন্য কর্পোরেট শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ আয়ের উপর কর ২০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। একই সাথে কর্পোরেট করদাতাদের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ আয়ের উপর চুড়ান্ত করহার ১০ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়।
স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেকহোল্ডারদের উৎসে করহার হ্রাস- পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে ব্রোকারেজ হাউজকে ন্যায়সঙ্গত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে বিদ্যমান অযৌক্তিক করনীতি থেকে অবমুক্তি দিয়ে সিকিউরিটিজ লেনদেনের উপর প্রদত্ত অগ্রিম আয়কর দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ (পূর্বে এটি দশমিক শূন্য ১২৫ শতাংশ ছিল) করতে অথবা আয়কর অধ্যাদেশ মোতাবেক নিয়মিত হারে আয়কর প্রদানের আদেশ জারি ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
আনন্দবাজার/শহক




