ঢাকা | রবিবার
১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুক্তিযোদ্ধার কবর দখল!

মুক্তিযোদ্ধার কবর দখল!

বীর মুক্তিযোদ্ধা মনছুর রহমানের কবরটি তার শরিকরা দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য থেকে চেয়ারম্যান পর্যন্ত গড়ালে মিলছে না সমাধান। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তান জন্মেছিলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ঘাটাইল সদর ইউনিয়নের শাহপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে। মনছুর রহমানের শহীদ বেসামরিক গেজেট নম্বর ১৫০৯ এবং লাল মুক্তিবার্তা নম্বর ০১১৮০৪০৬৫৯।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা মনছুর রহমানের বাবা মশর উদ্দিন স্বাধীনতা যুদ্ধের আগেই মারা যান। ১৯৭১ সালে সবেমাত্র কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দিয়েছেন মনছুর। এরই মধ্যে শুরু স্বাধীনতা যুদ্ধ লাল-সবুজের পতাকার শপথে ধরলেন জীবন বাজি। দেশ স্বাধীন করলেন। কিন্তু স্বাধীনতার ফল গ্রহণ করতে পারলেন না। চূড়ান্ত বিজয়ের দিন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন।

তাঁর সহযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী আফসোস করে বলেন, স্বাধীন দেশে সাড়ে তিন হাত জায়গাও কি পাওয়ার অধিকার রাখেন না একজন মুক্তিযোদ্ধা? একই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার জানান, একজন শহীদের কবর নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা চলছে। কবর ভেঙে এরই মধ্যে ঘর তোলা হয়েছে। বর্তমানে ঘাটাইলে সরকারিভাবে ৩১ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর পাকাকরণের কাজ চলছে।

ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম আয়নাল জানান, মনছুর রহমানের কবরে কাজ করতে গেলে দেখা দেয় বিপত্তি। বাধা আসে। তাই কাজ বন্ধ। তাঁর চাচাতো ভাতিজা মোজাম্মেল অন্য জায়গায় দেখিয়ে সেখানে কবর বাঁধাতে বলেন।

মনছুর রহমানের বড়ভাই ইনছান আলী (৭০) জানান, তাঁর ভাইকে যখন কবর দেওয়া হয় তখন যৌথ পরিবার ছিল। পরে জমি ভাগবাটোয়ারা করা হলে কবরের অংশ পড়ে যে মোজাম্মেলদের ভাগে। তাদের অনুমতি নিয়েই ঠিকাদারকে কবর বাঁধানোর অনুমতি দেওয়া হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোজাম্মেল হোসেন (৬৫) বলেন, ‘কবরের কারণে আমরা থাকার ঘর নির্মাণ করতে পারছি না। হাদিসে আছে কবর স্থানান্তর করা যায়।’ ইনছান আলীর তো ঘরভিটা ছাড়া জমি নেই তাহলে কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাঁর বসবাসের ঘরের চালের একফালা টিন খুললেই কবর স্থানান্তর করা যায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম জানান, বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ তাঁরা। ঘাটাইল মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক অর্থ কমান্ডার এমদাদুল হক খান হুমায়ুন বলেন, উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা অনেকেই বিষয়টি জানেন। ঘাটাইলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নেই। বর্তমানে ইউএনও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বে আছেন। বিষয়টি লিখিতভাবে তাকে জানাতে বলা হয়েছে। তবে ইউএনও মুনিয়া চৌধুরী জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন