সীতাকুণ্ডে নিহত—
আমার ছেলে বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করেছে। বয়স কম, তাই ভিসা হচ্ছে না। বিদেশ যেতে হলে আরো এক বছর লাগবে। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে এনে দেন। আমার বুকের ধন মানিক কই রে। কই গেলিরে বাবা। এসব কথা বলে বার বার জ্ঞান হারিয়ে পেলেন নিখোঁজের মা রাশিদা বেগম।
শনিবার রাতে চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের পর বিস্ফোরণের ঘটনায় নিজ কাজে কর্মরত অবস্থায় মো. রাসেল নামের এক একুশ বছর বয়সী তরুণ নিখোঁজ হয়। সে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল ইউপির হিয়াজোড়া গ্রামের পশ্চিম পাড়ার হতদরিদ্র শাহ আলমের ছেলে। ঘটনার গত দু’দিন অতিবাহিত হলেও রাসেলের কোনো সন্ধান মিলেনি রাসেলের।
সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে মায়ের সঙ্গে কথা হয় তার। তখন রাসেল তার মা রাশিদা বেগমকে বলেন, মা আপনি কি করেন। আব্বা কই? বাড়ির সবাই ভালো আছেনি। ভাই বোনদের দিকে খেয়াল রাখবেন। কয়েক দিনের মধ্যে বাড়িতে টাকা পাঠামু। এ বলে পরে ফোন রেখে দেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রাসেল বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট বানিয়ে তার মায়ের কাছে রাখেন। বয়স কম হওয়ার কারনে আপাতত বিএম কনটেইনার ডিপোতে ইঞ্জিন মেকানিকের কাজ নেন। গত তিন বছর ধরে ওখানে ওই কাজের দায়িত্বে থেকে সুনামের সহিত কাজ করে আসছেন। তার মাসিক বেতন ১৫ হাজার টাকা। ওই টাকা দিয়ে চলে তাদের সংসার। ঘটনার দিন রাত ৯ টা ৩০ মিনিটের সময় কথা হয় মামাতো ভাই শরীরের সঙ্গে। পরে রাত ১০ টা ৩০ মিনিটের পর তার ব্যবহারিত মুঠো ফোনেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর থেকে আর কোন যোগাযোগ নেই রাসেলের। রবিবার সকালে তার পিতা শাহ আলম ছেলে খোঁজার জন্য যান চট্টগ্রামে। সোমবার পর্যন্ত রাসেলের সন্ধান মিলেনি বা রাত লাশটাও পাচ্ছেন না তারা।
পিতা শাহ আলম ও বাড় ভাই মিলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ ঘটনাস্থল এলাকায় অনেক ঘুরাঘুরি করছেন রাসেলকে জীবিত বা মৃত. উদ্ধারের জন্য। একটু লাশটা পাওয়ার জন্য। দেশে এনে রাসেলের লাশ পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের এক নজর দেখিয়ে বাড়ির পাশে কবর দিবেন এমনটাই আশা পরিবারের।
এ বিষয় রাসেলের বড় বোন শাহিনুর বেগম বলেন, জীবিত হোক আর মৃত হতো আমার ভাইকে ভিক্ষা দেন। আমরা ভাইকে চাই। সরকারের কাছে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এ হতদরিদ্র পরিবারের দু’ভাই ও তিন বোনের মধ্যে রাসেল সবার ছোট। সকল বোনদের বিষয়ে হয়ে গেছে। তার ভাইও পিতক রয়েছেন। অপরদিকে চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের পর বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ফায়ার কর্মী মনিরুজ্জামান মনিরের লাশ রবিবার রাতে তার নিজ বাড়ি নাঙ্গলকোট উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউপির নাইয়ারা গ্রামে আনা হয়। সোমবার সকালে নাইয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিহতের জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।