ঢাকা | মঙ্গলবার
৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৈরুত থেকে সীতাকুণ্ড

  • রাসায়নিক গুদামে বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে অর্থনীতি

লেবাননের রাজধানী শহর বৈরুত বন্দরে ২০২০ সালের ৪ আগস্ট ঘটেছিল ভয়াবহ কেমিক্যাল বিস্ফোরণ। সাগরের কোলঘেঁষে রাসায়নিকের মুজতে একের পর এক ঘটেছিল বিস্ফোরণ। প্রথমে ছোট বিস্ফোরণে আগুনের ওপরে ধোঁয়ার মেঘ সৃষ্টি হয় এবং ফ্ল্যাশিং লাইট তৈরি করে। দ্বিতীয় বিস্ফোরণ আরও বড় আকারের। যা মধ্য বৈরুতকে কাঁপিয়ে দিয়ে বাতাসে ধূলিকণার লাল মেঘ সৃষ্টি করে। যে বিস্ফোরণ অনুভূত হয় প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার দূর থেকে। যে ভয়াবহ ঘটনায় কমপক্ষে ১০০ জন প্রাণ হারায়। সাড়ে চার হাজার মানুষ আহত হয়।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে গত শনিবার রাতে যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে তার সঙ্গে বৈরুতের ঘটনার তুলনা করা যায়। বিএম কনটেইনার ডিপোটিতে ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’ নামের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ছিল। যা উত্তপ্ত হওয়ায় তাপীয় বিয়োজনে বিস্ফোরকে পরিণত হয়েছে। রাসায়নিক বিস্ফোরণে গোটা সীতাকুণ্ডের আকাশ বাতাস বিষাক্ত ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে।

অগ্নিকাণ্ডের পর একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে সীতাকুণ্ডের আশপাশের চার উপজেলার বিস্তৃত এলাকা। ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণে চোখের সামনে উড়ে গেছে কনটেইনার, মানুষ। প্রাণ হারিয়েছে অর্ধশতাধিক। আহত হয়েছেন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসকর্মসহ তিন শতাধিক মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে কেউ নিশ্চিত হতে না পারলেও বিস্ফোরণের আগে ও পরের অগ্নিকাণ্ডে পণ্যভর্তি বহু কনটেইনার উড়ে ও পুড়ে গেছে। বৈরুতে ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণ এতই ভয়াবহ ছিল যে অর্থনীতি আর রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।

জার্মানির লুডভিগসহাফেন শহরের বিএএসএফ কেমিক্যাল কোম্পানির কারখানায় বড় রকমের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেমিক্যাল কোম্পানি হিসেবে পরিচিত বিএএসএফ-এর এই কারখানায়।

বাংলাদেশেও ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ভবনটির নিচতলায় কেমিক্যালের গোডাউন থাকায় মুহূর্তে আগুন ভয়াবহ রূপ নেয়। এতে ঘটনাস্থলেই পুড়ে মারা যান ৬৭ জন। এরপর আরও চারজন মারা যান চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ জনে।  মামলার ৩ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো বিচার শুরু হয়নি।

এবার নতুন সামনে এলো সীতাকুণ্ড ট্রাজেডি। অগ্নিকাণ্ডের পর প্রায় ১৯ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বিপরীতে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। ৪/৫ মাইল দূর থেকেও টের পাওয়া গেছে ভয়াবহতা। স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা মিলেছে অগ্নিগর্ভ দৃশ্য। সঠিক ব্যবস্থাপনা সমস্যায় এ সংকট এখানেই হয়তো শেষ নয়। তবে এ থেকে কতটা শিক্ষা নিতে পারবো আমরা সে প্রশ্ন থেকেই যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন