ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাষিদের লাভ খেয়েছে ঝড়বৃষ্টি

চাষিদের লাভ খেয়েছে ঝড়বৃষ্টি

বাজারে দাম বাড়লেও সুফল পাচ্ছেন বোরো চাষিরা

উত্তরাঞ্চলে বোরোর ফলন আর দাম বেশি হলেও সুফল পাচ্ছেন না উৎপাদনকারী চাষিরা। ভরা মৌসুমে ধানের ভাণ্ডারখ্যাত নওগাঁ ও দিনাজপুর জেলার বাজারগুলোতে বেড়েছে নতুন ধানের সরবরাহ। দাম ভালো তবুও মলিন কৃষকের মুখ। ভরা মৌসুমে প্রকার ভেদে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪শ’ টাকা পর্যন্ত। তবে ছোট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অধিক লাভের আশায় পুঁজিপতিরা অবৈধভাবে ধান মজুত করছেন। ফলে আগামীতে চালের বাজার আরো অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

নওগাঁ: ক্রেতা আর বিক্রেতায় সরব হয়ে উঠেছে নওগাঁর ধানের বাজার। কৃষক পর্যায়ে ধান কিনছেন আড়ৎদাররা। সেখান থেকে গুদাম ভরছেন পুঁজিপতি মিলার ও ব্যবসায়ীরা। নওগাঁ জেলায় ধানের সবচেয়ে বড় আড়ৎ মহাদেবপুর হাট, মাতাজি হাট, মান্দা হাট, আবাদপুকুর হাট, ধামইরহাট, পোরশা ও সাপাহারে ‘ভালো মানের জিরাশাইল ১৩শ’ ৫০ থেকে ১৪শ’, কাটারি ১৩৫০, হাইব্রীড ১২শ’ থেকে ১২৫০ টাকা পর্যন্ত বেচা-কেনা হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দর কিছুটা বেড়েছে বলছেন আড়ৎদাররা।

কৃষকরা বলছেন, দর বারলেও সবাই ভালো দাম পাচ্ছে না। দুএক জন কৃষকের লাভ হলেও অধিকাংশ কৃষকের লাভ হচ্ছে না। কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, বোরো মৌসুমের শেষে পাকা ধান ঘরে তোলার আগ মহূর্তে কয়েকদফা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে। অধিকাংশ ক্ষেতে ধানের ফলন, মান ও রং নষ্ট হয়েছে। আর এসব ধান নিয়ে বাজারে গেলে আড়ৎদাররা কিনতে চায় না। ফলে অনেক কম মূল্যে তা বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে লাভ তো দূরের কথা খরচ ঠিকমত উঠছে না।

মাতাজি হাটে ধান বিক্রি করতে আশা কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আড়ৎদাররা খুব হিসাব করে ধান কিনছেন। যাদের ধান দুর্যোগে ক্ষতি হয়নি শুকনো ঝরঝরে তারা ধানের দাম বেশি পাচ্ছেন। আর আমার মতো যে সব কৃষক বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের কপাল পুড়েছে। আড়ৎদাররা ধানের মান একটু নিম্ন হলে তা আর নিতে চাচ্ছেন না। আর নিলেও তা অনেক কম দাম দিচ্ছে। এতে বাজারে ধানের দাম বেশি হলেও আমাদের কোনো লাভ হচ্ছে না।

আড়ৎদার মোরশেদ আলম বলেন, এবার কৃষকের ন্যায় আমরাও অনেক সমস্যায় আছি। কারণ বাজারে আসা ধানের মধ্যে কোনটা ভালো কোনটা খারাপ তা দেখে বুঝে কিনতে হচ্ছে। আমরা এসব ধান কিনে মিলে দিয়ে চাল উৎপাদন করি। ধানের মান ও দানা যদি ভালো না হয় তাহলে চালের মানও কমে যাবে।

একাধিক ছোট ব্যবসায়ী বলছেন, বড় ব্যবসায়ী মিলাররা কৃষকদের কাছ থেকে নানান অজুহাতে কম দামে বেশি বেশি ধান কিনছেন। অধিক লাভের আশায় গুদামজাত করছেন। ফলে বাজারে কমছে সরবরাহ। আগামীতে এর প্রভাব পড়বে চাল উৎপাদনের ওপর। ছোট ব্যবসায়ীরা ধানের অভাবে চাল উৎপাদন করতে পারবে না। তখন বড় ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়বে চাল উৎপাদন। আর অস্থির হয়ে উঠতে পারে চালের বাজার।

স্থানীয় মিলার ইসমাইল হোসেন জানান, করপরেট হাউজগুলো যারা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক তারা একচাটিয় ভাবে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। তারা ধানের বাজারে একেক দিন একক রেট দিচ্ছেন। ফলে তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে ছোট ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদামত ধান ক্রয় করতে পারছে না।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, বাজারের চাহিদা মত চাল সরবরাহ করতে পাছি না। সরকারের উচিত এখনি এসব বড় বড় প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দেওয়া।

দিনাজপুর: দিনাজপুরে চালের দাম দিনদিন বেড়েই চলেছে। সাতদিনের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩-৫ টাকা। ধান মৌসুমে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সিন্ডিকেটের কারসাজি বলছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। তবে মিলাররা বলছেন, ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দামও বেড়েছে।

চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েক দিন আগেও মিনিকেট চালের মিল রেট ছিল ২ হাজার ৭৫০ টাকা, আর পাইকারি দাম ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ গত এক সপ্তাহে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫০ টাকা, আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১০০ টাকায়।

বাহাদুর বাজারে চাল কিনতে আসা হোটেল ব্যবসায়ী আমজাদ আলী বলেন, চালের দাম এখন প্রতি সপ্তাহে বাড়ছে। গত সপ্তাহে আটাশ চাল কিনলাম ৪৭ টাকা কেজি দরে। আজ সেটা ৫০ টাকা কেজি দরে কিনলাম। বাজারে সব জিনিসের দামের সঙ্গে চালের দামও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
বাহাদুর বাজারের চাল ব্যবসায়ী রেদওয়ান জানান, গত কয়েক দিনে চালের দাম বস্তা প্রতি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। মিলাররা চাহিদার থেকে কম চাল কম চাল বিক্রি করছেন আমাদের কাছে। আমরা টাকা দিয়েও চাল সময় মতো পাচ্ছি না।

বাজারের আরেক চাল ব্যবসায়ী আলাল জানান, অনেক কারণে বাজারে চালের দাম বাড়ছে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে এবার সবাই মিলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আবার অনেকে এ সময় সারাবছরের চাল কিনে মজুত করেন। আর এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়িয়েছে।

মিলাররা বলছেন, ভরা মৌসুমে ধানের দাম বাড়ার কারণ বোধগম্য নয়। দাম বেশি থাকায় মিল মালিকরা মিল চালাতে বাধ্য হয়ে বেশি দামে ধান কিনছে। পাশাপাশি চাল উৎপাদনের খরচ, স্টাফ বেতন, ব্যাংকের সুদ সব কিছুই হিসাবে রাখতে হয়। সর্বোপরি মিল পর্যায়ে যদি দাম বাড়ে ২ টাকা, তাহলে খুচরা বাজারে তা ৫ টাকা বেড়ে যায়।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, চালের নিয়মিত মনিটরিং অব্যাহত আছে। বাজারে ধানের সরবরাহ এখনো পর্যাপ্ত নয়। বাজারে ধানের সরবরাহ স্বাভাবিক হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন