ঢাকা | বুধবার
১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নালিমের ফলনে হতাশ চাষি

নালিমের ফলনে হতাশ চাষি

মাগুরায় বাঙ্গি জাতীয় ফল নালিমের ফলন কম হওয়ায় হতাশ চাষি। কারণ হিসেবে কৃষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদের কারনে অতিমাত্রায় বৃষ্টি হওয়ায় অর্থকরি ফল নালিম চাষ বিলম্বিত হয়েছে। স্থানীয় কৃষি অফিস ও কৃষকরা জানিয়েছেন, বিলম্বিত হওয়ার কারনে নালিমের আশাতীত ফলন পাননি তারা। ফলে অধিকাংশ কৃষকই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ মৌসুমে নালিম ক্ষেতে দিনমুজুরী করে অন্তত ১০ হাজার পরিবার জীবিকা নির্বাহ করেন।  ফলে নালিম ক্ষেতে তেমন কাজ না থাকায় তারা জীবিকার প্রয়োজনে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। অন্য ফসল আবাদের চেয়ে নালিম চাষ অধিক লাভজনক। যে কারনে কৃষকদের মাঝে এ চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, মাগুরার কৃষকরা গত বছর ১৬২ হেক্টর জমিতে নালিমের চাষ করেছিলেন। সেখানে এ বছর মাত্র ৯১ হেক্টর জমিতে এটির চাষ হয়েছে। কৃষকরা জানান, রমজান শুরু হওয়ার আগেই নালিমের আগাম বাজার ধরতে এটির চাষ করেন কৃষকরা। কিন্ত জাওয়াদের কারনে অতিমাত্রায় বৃষ্টি হওয়ায় তারা দেরিতে এটির চাষ করেছেন। যে কারনে ফলন হয়েছে মোটামুটি। আগাম বাজারে তুলতে না পারায় নালিমের কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না বলে দাবি করেন কৃষকরা।

সরেজমিন মাগুরা সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষকদের সাথে। শিবরাপুর গ্রামের কৃষক ও ব্যবসায়ী রিপন শেখ জানান, ১০ বিঘা জমি ৩ মাসের জন্য দেড় লাখ টাকায় লিজ নিয়ে নালিমের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এ বছর অতিমাত্রায় বৃষ্টির কারনে আশাতীত ফলন পাননি তিনি। ১০ বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকার বেশি। ঢাকার পাইকারি বাজারে এক ট্রাক নালিম পৌছাতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। নালিম বিক্রি শেষে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা ঘাটতি রয়েছে তার। রোজা প্রায় শেষ হতে চললো। ঈদের পরে নালিমের চাহিদা কমে যায়। ফলে স্থানীয় বাজারে এটির দামও অনেক কমে যায়। এছাড়া এ মৌসুমে নালিম ক্ষেতে কাজ করে অনেক মানুষই শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। নালিম ক্ষেতে কাজ করতে আশা রকিব জানান, তিনি ভ্যান চালানোর পাশাপাশি এ মৌসুম জুড়েই নালিম ক্ষেতে কাজ করে যে অর্থ পান তা দিয়ে চার সদস্যের পরিবারের ব্যয় ভার বহন করেন।

মাগুরা নতুন বাজার এলাকার কৃষক শাহিনুর ইসলাম এবছর ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ২২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে নালিমের চাষ করেছেন। তিনি জানান, চাষকৃত জমি থেকে তিনি প্রায় ১২ লাখ নালিম বিক্রির আশা করেছিলেন। কিন্তু মোটামুটি ফলন হওয়ায় নালিম বিক্রির কাঙ্খিত অর্থ তিনি পাননি। তবে ৮ লাখ টাকায় তিনি তার ক্ষেতের নালিম ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৭ লাখ টাকা। সে অর্থে নালিম চাষে তিনি তেমন লাভবান হননি বলে দাবি করেন।

মাগুরা সদর উপজেলার আলাইপুর গ্রামের কৃষক রফিক মন্ডল জানান, তিনি এ মৌসুমে ৩ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে নালিমের চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। নালিম বিক্রি করে যে অর্থ পাবেন তার অর্ধেক অংশ জমির মালিককে দেয়ার পর খরচ বাদে অবশিষ্ট তেমন অর্থ তার কাছে থাকবে না।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হায়ত মাহমুদ জানান, ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদের কারনে অতিমাত্রায় বৃষ্টি হয়েছে। তাই নালিম চাষ বিলম্বিত হয়েছে। ফলে কৃষকরা আশাতীত ফলন পায়নি। এরপরও অনেক কৃষক নালিম চাষের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। তবে অপেক্ষকৃত নিচু জমিতে পানি জমে থাকার কারনে অনেক কৃষকই সঠিক সময়ে নালিমের চাষ করতে পারেননি।

সংবাদটি শেয়ার করুন