ঢাকা | বুধবার
১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগাম বৃষ্টি-উজানের ঢলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

আগাম বৃষ্টি-উজানের ঢলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

হঠাৎ বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীগুলোর পানি বেড়ে যাওয়ায় পানিতে ডুবে গেছে নদী তীরবর্তী আবাদি জমি। ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসল নষ্ট হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পরেছে কৃষক। মাথায় বেড়েছে ঋণের বোঝা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কুড়িগ্রাম সদর ও রাজারহাট উপজেলায় বোরো ধান, বাদাম, পিঁয়াজ, করলা ও মরিচসহ শাক-সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আগামীতে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে তিস্তা পাড়ের কৃষকদের।

 রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ গ্রামের তিস্তার চরে শত-শত কৃষক লক্ষ-লক্ষ টাকা ধার-দেনা আর সম্পদ ব্যয় করে বোরো ধাম, বাদাম, পেঁয়াজ, পটোল, ঝিঙা, মরিচ, করলা, শসা, চিচিঙ্গা এবং শাক-সবজি আবাদ করেছেন। বৃষ্টির আকস্মিক পানি বাড়ার কারণে এসব ফসল পানিতে ডুবে পঁচে যাচ্ছে। অনেকেই কাঁচা ধান কেটে আনছেন গবাদি পশু কে খাওয়ানোর জন্য। হাঁটু পানিতে নেমে পঁচা পিয়াজ, রসুন, বাদাম, ধান কেটে এনেছেন অনেক কৃষক। ঋণ করে সার, কীটনাশক, ওষুধ,বীজসহ সব মিলিয়ে লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ করেছেন এখানকার কৃষক। কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন তা ভেবে দিশেহারা হয়ে পরেছেন তারা।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় প্রায় ১৬২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ ও ১ লাখ ১৬ হাজার ১শ ২০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে আকস্মিক বন্যায় প্রায় ৮০ হেক্টর জমির পেঁয়াজ ও ২৭৫ হেক্টর জমির বোরো আবাদ নষ্ট হয়েছে। তরমুজ, পাট, ভুট্টা, চিনাবাদাম ও শাক-সবজিও আক্রান্ত হয়েছে।

কৃষক মনসুর আলী বলেন, এরকম অসময়ে বৃষ্টির পানি আমরা দেখি নাই।  আমরা কৃষকরা এভাবে লোকসানে পড়ি অথচ সরকার আমাদের গুরুত্ব দেয় না । আমাদের এলাকার অধিকাংশ ফসল বিভিন্ন জেলায় যায়।

রাজারহাটের বিদ্যানন্দ এলাকার তিস্তার অববাহিকায় পেঁয়াজ চাষী আজিজুল হক বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমিতে পেয়াজের চাষ করেছি। নদীর পানি প্লাবিত হয়ে প্রায় দেড় বিঘা জমির পেয়াজ ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এতো বড় ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেব তা আল্লায় ভালো জানেন!

কুড়িগ্রামের কদমতলা এলাকার বোরো চাষী আইনুল মিয়া বলেন, ধরলা নদীর অববাহিকায় প্রায় ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছিলাম। কিন্তু নদীর পানি প্লাবিত হয়ে প্রায় দুই বিঘা বোরো আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। অসময়ে এমন পরিস্থিতি পূর্বে কখনও দেখিনি।

সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা বলেন, অসময়ে বৃষ্টি আর পানি বাড়ার কারণে আমাদের ইউনিয়নের কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। কুড়িগ্রাম কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ বলেন, জেলার ৫টি উপজেলায় বৃষ্টিপাত বেশি হলে ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা প্রস্তুত শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আউশ মৌসুমে সরকারি প্রণোদনায় অন্তর্ভুক্ত করারও আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

সংবাদটি শেয়ার করুন