- ভ্যাট অব্যাহতি জরুরি বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা
দেশীয় শিল্পের স্বার্থে কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি বহার রাখার জরুরি বলে মনে করছেন ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন খাত সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এ খাতে দীর্ঘমেয়াদে সুযোগ-সুবিধা দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। ‘চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেটে কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা রযেছে। এ সুবিধা শেষ হচ্ছে চলতি বছরের জুন মাসে।’
সংশ্লিষ্টদের মতে, উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির কারনে স্থানীয় পর্যায়ে এ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ হয়। নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি আমদানি ব্যয় সাশ্রয়সহ দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এতে বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রয়োজনীয় পণ্য রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এসেছে। দেশে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও হচ্ছে। এতে বিদেশি আয় বাড়ছে।
কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশের অপ্রতুলতা দেখা দিয়েছি। বিপরীতে দামও বেড়েছে। ইতোমধ্যেই ভোক্তা পর্যায়ে রেফ্রিজারেটরের মূল্যও বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় করোনার ক্ষতি কাটিয়ে যখন খাতটি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তখন উৎপাদন পর্যায়ে সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সামনে দিনগুলোতে না পেলে দেশীয় শিল্পগুলো বিকাশে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে বলেও আশঙ্কা করা যাচ্ছে। তাই সবদিক বিবেচনায় কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে সহায়ক নীতিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পক্ষে রয়েছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা।
ভ্যাট অব্যাহতিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দেশীয় শিল্প খাতের বিকাশ ও সুরক্ষায় বর্তমান সরকার বহুমুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। সামনের দিনগুলোতেও নেবে। যাতে দেশীয় শিল্প পণ্যের প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন সহজ হয়। দেশীয় কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদন শিল্পে সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ শিল্পে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার বিষয়টি সামনে বহাল রাখার বিবেচনাযোগ্য বলেও করেন তিনি।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের জন্য শিল্পবান্ধব বাজেট খুব বেশি জরুরী। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে এ খাতে বিনিয়োগ আরো বাড়াতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা শিল্পবান্ধব বাজেটেরই একটি অংশ। কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে দেশ অনেক এগিয়েছে। সামনে আরো যাবে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই ভালো করছে এমন মন্তব্যে করে আবু আহমেদ বলেন, সামনে আরো ভাল করা জরুরী। এ ভাল করার ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বাড়ানো জরুরি। করপোরেট কর প্রসঙ্গে অধ্যাপক বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ করপোরেট কর অনেক বেশি। এটি কমানো উচিৎ। এই কর ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা দরকার।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত এক যুগে সরকারের বিভিন্ন শিল্প সহায়ক নীতিসহ শতভাগ বিদ্যুতায়নের কারণে দেশের কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদন খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়। বাংলাদেশ বিশ্বের ১৪তম কম্প্রেসর উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আবির্ভুত হয়। বিপুল পরিমাণ আমদানি ব্যয় সাশ্রয় এবং স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানির সম্ভাবনাময় উৎস হয়ে উঠেছে খাতটি। নতুন করে বিনিয়োগ হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ইনভার্টার এবং ফিক্সড স্পিড কম্প্রেসর ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট, গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) মেধাসম্পদ (প্যাটেন্ট, ডিজাইন এবং সফটওয়্যার লাইসেন্স), ৫৭টি দেশে ট্রেডমার্কসহ ৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ৩টি ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের স্বত্ব পেয়েছে। দেশীয় হাই-টেক শিল্পে টেকসই প্রবৃদ্ধির এই ধারা বজায় রাখতে এ খাতের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিকল্প নেই।
এ শিল্পের বিকাশ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন বলেন, কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদন শিল্পে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেশীয় শিল্প বিকাশে সহায়ক। এটি অব্যাহত থাকতে পারে। এই খাতে যারা জড়িত, তারা যদি এ বিষয়ে কোনো নীতিগত বা কোনো রকম সহায়তা চায় সে বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবো বলে মত প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের শিল্প সহায়ক যে কোনো বিষয়েই সরকারের আগ্রহ রয়েছে। এ ধরনের শিল্পের পণ্য বাইরে রপ্তানির ক্ষেত্রে এমনিতেই ভ্যাট দেয়া লাগেনা। স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার বিষয়ে বিভিন্ন অনুষঙ্গ জড়িত থাকে। আমি মনে করি, এ শিল্পের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে রয়েছে। তার উপর ভিত্তি করে আগামীতে এই ভ্যাট অব্যাহতির বিষয়ে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
দেশীয় শিল্প বিকাশের স্বার্থে কম্পেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতির দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলেও জানান শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার, তা অর্জনে দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি খাত বিশেষ করে কম্প্রেসর ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ। এ খাতে সহায়তা বাড়ানো হলে তা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে। ২০৪১ সালের মধ্যে শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণ সহজও হবে।