ইতিহাস-ঐতিহ্য
অযত্ন অবহেলায় ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, মোঘল আমলে নির্মিত ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্বাক্ষী নাঙ্গলকোটের বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের দাঁড়াচো গ্রামের খোন্দকার বাল্লেগশাহ ফকির তিন গম্বুজ জামে মসজিদ। দাঁড়াচো গ্রামের ছায়া-সুনিবিড় সুপারি গাছ বেষ্টিত তিন গম্বুজ মসজিদটি দেখতে দুর-দুরান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ এবং তরুণরা আসেন। দাঁড়াচো গ্রামের শিক্ষাবিদ মরহুম আব্দুল আউয়াল ও পাশ^বর্তী মসজিদের মোতাওয়াল্লি ডা. মাকসুদুর রহমান বলেন, সুদুর ইয়েমেন থেকে হযরত শাহজালাল রা. সহ বাল্লেগশাহ ফকির ও তালেবশাহ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রথমে ভারতের দিল্লী আসেন। পরে দিল্লী থেকে বাল্লেগশাহ ফকির নাঙ্গলকোটের বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের দাঁড়াচো গ্রামে যান। দাঁড়াচো গ্রামটি ওই সময়ে বন জঙ্গলবেষ্টিত ছিল। সেখানে বাঘ বসবাস করতো। খোন্দকার বাল্লেগশাহ দাঁড়াচো গ্রামকে ধর্ম প্রচারের জন্য বেছে নেন এবং এলাকাবাসীর নিকট ধর্ম প্রচার শুরু করেন। এক সময় এলাকাবাসী ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ওই সময় মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য কোনো মসজিদ না থাকায় বাল্লেগশাহ ফকির ইট-শুরকি দিয়ে মসজিদের ভিতর ও বাহিরে সু-নিপুণ কারুকাজ খচিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ করেন। ওই সময় এলাকার দুর-দুরান্তে অবস্থিত নুরপুর, বেরী, গোবিন্দপুর ও হাঁলচো গ্রামের মানুষও মসজিদটিতে নামাজ পড়তে আসতেন। মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় এক সময় হিন্দুরের বসবাস ছিল। যার ফলে মসজিদের সামনের পুকুরটি নাপিত পুকুর হিসেবেও সবার নিকট পরিচিত।
গত ১০ বছর পূর্বেও এলাকাবাসী মসজিদটিতে নামাজ পড়তেন। মসজিদটিতে প্রায় ৩০ জন মুসল্লি নামাজ পড়তেন। তবে মসজিদের নিচ থেকে পানি উঠা এবং মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় এলাকাবাসী পাশ^বর্তী পশ্চিমপাশে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণ করে নামাজ আদায় করেন।
নতুন মসজিদ নির্মাণের পর থেকে ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্বাক্ষী বাল্লেগশাহ ফকির মসজিদটি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে। গত ১০বছর থেকে পরিত্যাক্ত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির গম্বুজ এবং দেওয়ালে শ্যাওলা জমে সৌন্দর্যহানি ঘটছে। মসজিদের ভিতরের নিপুণ কারুকাজ গুলোর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মসজিদটির সামনে ইটের টুকরা এবং বালির স্তুপ রাখায় মসজিদটির সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া এলাকাবাসীর চরম অবহেলায় মসজিদটির ভিতর জেনারেটর কক্ষ এবং পরিত্যক্ত ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
দাঁড়াচো গ্রামের সৌদিআরব প্রবাসী সোহেল রানা বলেন, মসজিদটি এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। তিনি সরকারিভাবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মাধ্যমে মসজিদটি সংস্কার করে সংরক্ষণ করার দাবি জানান।
এই বিষয়ে বাঙ্গড্ডা ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, মসজিদটি অতি প্রাচীনতম এটি সংস্কার করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহন করব।
এ বিষয়ে সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার লামইয়া সাইফুল বলেন, মসজিদটির বিষয় আমার কোনো ধারণা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবো।