ঢাকা | সোমবার
১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শরণখোলায় তরমুজ চাষে সম্ভাবনা

শরণখোলায় তরমুজ চাষে সম্ভাবনা

বাগেরহাটের শরণখোলায় উপজেলার ঝিলবুনিয়া গ্রামে বাণিজ্যিকভিত্তিতে তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন লোকমান সরদার ও তার দুই বন্ধু। কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই তারা ৩ জন মিলে প্রতিবেশীদের ৩ বিঘা জমি নগদ রেখে তরমুজ চাষের উদ্যোগ নেন। তিন বিঘা জমির নগদ টাকা, উন্নত বীজ সংগ্রহ, পানি সেচ ও বালাইনাশক পদ্ধতির ব্যবহার বাবদ তাদের মোট ব্যয় হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। তবে চলতি বছরে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।

এ পর্যন্ত প্রথম ধাপে ৪০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে কেটে জমিয়ে রাখা তরমুজের মূল্য এক লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হবে। এছাড়া মাঠে থাকা তরমুজ ও ফলন অনুযায়ী, তারা আরো দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন। এক প্রতিবেশীর পরামর্শে ভুল ঔষধ ব্যবহার করে তরমুজের মাঠ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা না হলে এবারে তারা আট থেকে ১০ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারতেন বলে ধারনা করছেন সফল চাষি লোকমান সরদার ও তার দুই বন্ধু।

শরণখোলা উপজেলা সদরের নিকটবর্তী ও বলেশ^র নদীর তীরবর্তী গ্রাম ঝিলবুনিয়া। এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষের পেশা মাছ ধরা। বংশ পরম্পরায় যুবক লোকমান সরদার ও একজন জেলে। ছোট বেলা থেকেই জাল, নদী আর নৌকার সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক। এখন থেকে বছর পাচেঁক আগে জেলে লোকমান সরদার শখের বশে সামান্য জমিতে তরমুজের চাষ করে তেমন সফলতা পাননি। তবে তরমুজ চাষের নেশা তাকে ছাড়েনি।

বলেশ^রে এখন আর আগের মত মাছ পরছেনা। এক দিকে কাজের অভাব, অন্যদিকে নতুন করে বেশী জমিতে তরমুজ চাষের স্বপ্ন। সে অনুযায়ী লোকমান সরদার প্রতিবেশী মামুন ও মানিক কে সাথে নিয়ে নতুন করে  জিলবুনিয়া গ্রামেই তাদের প্রতিবেশীদের তিন বিঘা জমি নগদ রাখেন। এর   প্রতি বিঘা নগদ হিসাবে রাখতে বছরে ৮ হাজার করে মোট ২৪ হাজার টাকা, উন্নত তরমুজের  ৪০ গ্রাম বীজ ৩৫ হাজার টাকা, সার ও বালাই নাশক বাবদ ৮০ হাজার টাকা, নেটের বেড়া ও পানি সেচ বাবদ সব মিলিয়ে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান তারা। এতে তারা প্রত্যেকে ৬০ হাজার টাকা করে বিনিয়োগ করে তরমুজ চাষের কাজ শুরু করে। তিন জনের সমান বিনিয়োগ, তিন জনেই মাঠে কাজ করেন। তিন জনেই সমান  ভাগে লাভের টাকা ভাগ করে নেন।

জিলবুনিয়া গ্রামে তিন বন্ধুর এ তরমুজ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। কাজের ফাঁকে সফল চাষী লোকমান সরদার গল্পের মত তার তরমুজ চাষের নেপথ্য কথা আর আগামীর স¦প্নের কথা গুলো বলছিলেন। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শরণখোলার মাটি তরমুজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এখানে তরমুজ আকারে যেমন বড় হয়, তেমনি খেতে ও অনেক সুস্বাদু হয়। এসব জমিতে একবার আমন ধান ফলানোর পড়ে সারা বছর পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। তাই পতিত এ জমি ব্যবহার করে শরণখোলায় পরিকল্পিত তরমুজ চাষের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে সফল চাষী লোকমান সরদারের অভিমত।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়াসিম উদ্দিন বলেন,  বলেশ্বর ও ভোলা নদী বেষ্ঠিত শরণখোলায় তরমুজ চাষের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে । কারন এ অঞ্চলের পানিতে সহনশীল মাত্রার লবনাক্ততা আছে । যা তরমুজ চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী । কম সময়ে, কম পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়ার জন্য তরমুজ একটি ভালো অর্থকরী ফসল। এ চাষে আগ্রহী চাষীদের উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান তিনি ।

সংবাদটি শেয়ার করুন