- আলুর ফলন-দামে হতাশা
- সংরক্ষণে বিপাকে চাষি
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে জমি থেকে আলু উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তবে উৎপাদিত আলুর আশানুরূপ ফলন ও দাম না পেয়ে আলু সংরক্ষণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। অপরদিকে আলুর সার্বিক পরিস্থিতির কারণে ঋণগ্রস্ত আলু চাষিরা এবারও লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন। বাধ্য হয়েই এখনই লোকসানে আলু বিক্রি না করে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত আলু হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য চেষ্টা করছেন তারা। এতে হিমাগারগুলো ধারণক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে। খুচরা বাজারে আলুর কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হলেও পাইকারি বাজার দও হিসেবে প্রতিমণ আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা করে। সে হিসাবে কৃষকের প্রতিকেজি আলুর দাম ধরা হচ্ছে ১১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ টাকা কেজি দরে। নগদ টাকায় পাইকারি এ দামেও আলু নিতে আগ্রহ নেই বেপারীদের। এমনটাই বলছেন এ অঞ্চলের আলু চাষিরা। আলু উৎপাদনের শীর্ষ জেলায় এবার আলু ভিত্তিক অর্থনীতি হোচট খাচ্ছে।
স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, মৌসুমের প্রথম দিকে জাওয়াদের প্রভাবে শ্রীনগরে টানা বৃষ্টির কারণে আলুবীজ রোপণকৃত প্রায় ৬০০ হেক্টর জমি নষ্ট হয়। এ উপজেলায় ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। আলু সংরক্ষণের জন্য এখানে রয়েছে ৩টি হিমাগার।
মুন্সীগঞ্জে মোট ৬টি উপজেলায় আলুর আবাদ করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। ধারণা করা হচ্ছে এ বছর জেলায় ১০ লক্ষাধিক মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হবে। জেলায় সচল মোট ৬৮টি হিমাগারের ধারণক্ষমতা প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন। তাই আলু সংরক্ষণও চ্যালেঞ্জ। আলু উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। তবে লক্ষ্য পূরণ হয়নি। অসময়ের বৃষ্টিতে ১১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির আলু পুরো নষ্ট হয়ে যায়। তাই জমি শুকানো অপেক্ষাকৃত কম মান সম্পন্ন বীজ দিয়ে আবার আলু রোপণ করে ক্ষতিগ্রস্ত আলু চাষিরা। এখন দামও পাচ্ছেনা। তাই কৃষক মহাবিপাকে। মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খুরশিদ আলম এসব তথ্য দিয়ে জানান, পুরো বিষয়টি উপর মহলে অবহিত করা হয়েছে।
শ্রীনগর কৃষক রোমেল, সোহেল, মো. নাছির, আলম বেপারীসহ অনেকেই বলেন, আলুর দাম নেই। তাই আলু হিমাগারে রাখার চেষ্টা করছি। প্রতি কানি জমিতে (১৪০ শতাংশ) আলু চাষে খরচ হয়েছে পৌণে ২ লাখ টাকা। কোথাও কোথাও কৃষকের খরচের পরিমান আরো বেশি হয়েছে। প্রতিমণ আলু উৎপাদনে জমিতেই প্রতিমণ আলু খরচ হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। গড়ে প্রতি কানিতে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ মণ আলু উৎপাদনের ধারনা করছেন তারা। অতিরিক্ত আলু হিমাগারে রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
শ্রীনগরে হিমাগার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আটপাড়ায় হিমাগারের ধারণক্ষমতা (৫০ কেজি ওজনের) ১ লাখ ২০ হাজার বস্তা, সোন্ধারদীয়া হিমাগার প্রায় ৭০ হাজার বস্তা ও শ্রীনগর সদর এলাকায় আল-আমিন কোল্ড ষ্টোরে ধারণক্ষমতা ৯০ হাজার বস্তা। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী লৌহজং উপজেলার নওপাড়া বাজার এলাকার হিমাগারগুলোর চিত্র প্রায় একই। শ্রীনগর উপজেলার পূর্ব এলাকার শতশত কৃষক নওপাড়ার হিমাগারে আলু রাখার চেষ্টা করছেন। প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণের খরচ ধরা হচ্ছে ২২০ টাকা করে।
শ্রীনগর কোল্ড ষ্টোরেজের ম্যানেজার শিশির আহমেদ জানান, আমাদের এখানে সব ফিলাপ হয়ে গেছে। যারা আলু রাখতে চাচ্ছেন তাদেরকে অন্যত্র পাঠাচ্ছি।