শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এডিআর বৃদ্ধিতেও কমছে না আগ্রাসী বিনিয়োগ

বাংলাদেশ ব্যাংক

ঋণ-আমানত অনুপাতসীমা (এডিআর) বাড়িয়েও ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী বিনিয়োগ ঠেকাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনেক ব্যাংক এডিআর সমন্বয় করতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা এডিআর নিয়ে জানুয়ারির রিপোর্টে উঠে এসেছে এমন তথ্য। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত আইনে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে টানা পাঁচবার এডিআর সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তারপরও অনেক ব্যাংক এটি সমন্বয় করতে পারেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন প্রচলিত ধারার একটি ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৮৭ টাকা এবং ইসলামী শরিয়াভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংকগুলো ৯২ টাকা পর্যন্ত ঋণ বা বিনিয়োগ করতে পারে। এ সুবিধা পাওয়ার পরও ১১টি ব্যাংকের এডিআর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রচলিত ধারার রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৯০ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এছাড়া বেসরকারি এবি ব্যাংকের ৮৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৯১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, পদ্মা ব্যাংকের ৯৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ, এনআরবিসি ব্যাংকের ৮৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং দেশে পরিচালত বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংক আল-ফলাহ সীমা অতিক্রম করে ঋণ দিয়েছে ৮৮ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এছাড়া ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইনি সীমার বাইরে বিনিয়োগ রয়েছে বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের ৯৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৪ দশমিক ২১ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯২ দশমিক ১৫ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৯৬ দশমিক ২০ শতাংশ এবং পূবালী ব্যাংকের শরীয়াহ শাখা সীমালঙ্ঘন করে বিনিয়োগ করেছে ৯৬ দশমিক ১৪ শতাংশ।

আরও পড়ুনঃ  আসছে কোরবানিতে চামড়া সংরক্ষণে লবণ সংকট হবে না

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমানতের বিপরীতে ব্যাংক কত টাকা ঋণ দিতে পারবে তার একটা সীমা নির্ধারণ করা দেওয়া আছে। তারপরও কয়েকটি ব্যাংক সীমা লঙ্ঘন করে কেন ঋণ দিচ্ছে এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেখা উচিত। ব্যাংকগুলো কেন বেশি ঋণ দিচ্ছে তা তদারকি করে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকই ঠিক করবে বলে তিনি জানান।

আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি দিলে ব্যাংক ঝুঁকিতে থাকে জানিয়ে মির্জা আজিজুল বলেন, ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ের চিত্র এখন খুব একটা সন্তোষজনক নয়; এমন অবস্থায় অতিরিক্ত ঋণ দিয়ে যদি খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে যায় এতে করে আমানতকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কাও থাকে। তাই এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ দরকার বলে জানান সাবেক এ অর্থ উপদেষ্টা।

বেসরকারি পূবালী ব্যাংকের কনভেনশনাল ব্যাংকিংয়ে এডিআর স্বাভাবিক ধারায় থাকলেও ইসলামি ব্যাংকিং শাখায় এডিআর সীমা অতিক্রম করেছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমানতের বিপরীতে কত টাকা ঋণ দিতে পারবে এর একটি সীমা নির্ধারিত করে দেওয়া আছে। তবে এ আমানতের অনুপাত বিভিন্ন সময় পরিবর্তন ঘটে। কারণ হঠাৎ করে বড় আমানত ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়; অনুরূপ কোনো গ্রাহক আমানত তুলে নিলে তখন ঋণ দেওয়া ক্ষমতা কমে যায়। তখন ব্যাংক তার এডিআর সীমার বাইরে চলে যায়। এটা স্বাভাবিকভাবে হতে পারে।”

“তবে আমরা যেটা বেশি নজর দেই তা হলো দীর্ঘমেয়াদী এডিআর সীমার বাইরে কোনো ব্যাংক রয়েছে কি না, থাকলে কেন রয়েছে তা তদারকি করি। অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই। যেমন সাম্প্রতিক সময়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকে এডিআর না কমালে ঋণ দিতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এমনইভাবে অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলেন ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ সংস্থার এই মুখপাত্র।

আরও পড়ুনঃ  বাড়তে শুরু করেছে জ্বালানি তেলের দাম

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঋণ বিতরণ করেছে ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। যা মোট আমানতের ৭৩ দশমিক ৭০ শতাংশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন