করোনাকালে চরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) গ্রহণকারীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। সরকারি ভাতা বা সহায়তা মোবাইল অ্যাকাউন্টে দেয়ার কারণেই এমনটি ঘটেছে। এতে এমএফএসের ওপর চরের মানুষের আস্থা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে।
চরাঞ্চলে প্রান্তিক মানুষের এমএফএসের ব্যবহার বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয় পরিচালিত এক মাঠ-জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশে এমএফএসের দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে শনিবার ঢাকায় উন্নয়ন সমন্বয় এবং নলেজ অ্যালায়েন্সের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘এমএফএস-এর ১০ বছর: করোনা-পরবর্তি মাঠ-বাস্তবতা’ বিষয়ক এক সেমিনারে গবেষণার ফলাফলে এই তথ্য উঠে আসে।
সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান, গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ. মনসুর, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক অসীম কুমার দাশগুপ্ত এবং নলেজ অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা খন্দকার সাখাওয়াত আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মাঠ জরিপে দেখা গেছে, চরবাসী এমএফএসের খুটিনাটি বোঝার জন্য প্রধানত এমএফএস এজেন্টদের ওপর নির্ভরশীল। তবে মহানগর এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এজেন্ট নির্ভরতা ধারাবাহিকভাবে কমছে, কারণ গ্রাহকরা নিজেরাই অ্যাপ ব্যবহার করে মোবাইল আর্থিকসেবা নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, এক দশক আগে যখন আমরা বাংলাদেশে মোবাইল আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয়, তখন প্রান্তে বসবাসকারী নিম্ন আয়শ্রেণীর মানুষের কাছে সুলভে সহজ ডিজিটাল আর্থিক সেবা পৌঁছানোই প্রধানতম লক্ষ্য ছিল। এই করোনাকালে আমরা দেখেছি যে, মহানগরি থেকে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে সর্বত্রই নিম্ন আয়শ্রেণীর মানুষ এমএফএসের সুবিধা ভোগ করেছেন। সে বিবেচনায় বলা যায় যে এমএফএস ‘করোনার পরীক্ষায় পাশ’ করেছে।
ড. আহসান এইচ. মনসুর বলেন, টাকা পাঠানো এবং উত্তোলনের পাশাপাশি অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও এমএফএসের ব্যবহার উৎসাহিত করার ওপর জোর দেন। তাঁর মতে এমএফএস-এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাওয়া খুবই সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে ড. আতিউর রহমান বলেন, ডিজিটাল ন্যানো লোন এবং ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মতো নতুন নতুন উদ্যোগ মোবাইল আর্থিক সেবায় যুক্ত হচ্ছে। এগুলো চরাঞ্চলের মতো প্রান্তিক এলাকাগুলোতে কার্যকরভাবে নিয়ে যাওয়াকে অগ্রাধিকার দেয়া দরকার।
খন্দকার সাখাওয়াত আলী বলেন, অনেক দরিদ্র মানুষ কেবল সরকারি ভাতার জন্যই এমএফএস একাউন্ট খুলেছিলেন বলে বর্তমান মোট এমএফএস অ্যাকাউন্টের অর্ধেকই অচল।
আনন্দবাজার/এফএ