চট্টগ্রাম কাস্টমস–
- ১০৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ
- দুদকে ফাঁসলেন কাস্টমসের ১৬ জন
পণ্য চালানের আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে উচ্চ শুল্কহারযুক্ত সিগারেট আমদানি ও খালাসের ঘটনায় চট্টগ্রাম কাস্টমসের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নামমাত্র শুল্কের পণ্যের আড়ালে আমদানি করা হয় উচ্চ শুল্কহারযুক্ত সিগারেট, জিপার, চাইনিজ টায়ার, বোতাম ও সেফটিপিনের ঘোষণা দিয়ে আনা হয় দামি সিগারেট। সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিতেই মূলত এমন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।
এভাবে ২০১৮ সালের ১৪ মে থেকে ১৯ ডিসেম্বর এবং ১১ জুন থেকে ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোট ১০টি চালানের মাধ্যমে সরকারি- বেসরকারি চক্র আত্মসাৎ করে নিয়েছে ১০৫ কোটি টাকা। এসব ঘটনায় গত শনিবার দুদক জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এ পৃথক এই তিনটি মামলা করেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
মামলার আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক, শুল্কায়ন গ্রুপের সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও বর্তমানে ঢাকার কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার জনি, প্রাক্তন রাজস্ব কর্মকর্তা ও বর্তমানে রাজশাহীর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট মো. হাবিবুল ইসলাম, এআইআর শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা সুলতান আহম্মদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, উ”চমান সহকারী মো. আব্দুল্লাহ আল মাছুম এবং অফিস সহায়ক মো. সিরাজুল ইসলাম।
অপর আসামিরা হলেন- ঢাকার কোতোয়ালি থানার গুলশান আরা সিটির জারার এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহবুবুর রহমান, সিফাত ট্রেডিংয়ের মো. সালাউদ্দিন টিটো, মুভিং ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং পার্টনার মিজানুর রহমান চাকলাদার, মো. মফিজুল ইসলাম লিটন, আব্দুল হান্নান দেওয়ান ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স চাকলাদার সার্ভিসের হাবিবুর রহমান (অপু) চাকলাদার। এছাড়া আব্দুল গোফরান, জহুরুল ইসলাম ও আবুল কামাল নামের তিনজনকেও অনুপ্রবেশকারী হিসাবে মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। তারা চট্টগ্রামের চান্দগাঁও, জোরারগঞ্জ ও ফরিদপুরের বাসিন্দা।
দুদক সূত্রমতে, তিন মামলার একটিতে ১২ জনের বিরুদ্ধে ৫৬ কোটি ৬৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৭৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। বাকি দুটি মামলার একটিতে ৮ জন ও অপরটিতে ১১ জনের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ৩২ কোটি ২৭ লাখ ১ হাজার ৬৩৫ টাকা এবং ১৬ কোটি ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৭৫০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলা দায়ের সংক্রান্ত তথ্য নিশ্চিত করে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর উপপরিচালক নাজমু সাদাত বলেন, পণ্য চালানের আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য আমদানি ও খালাস করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন আসামিরা। এর মাধ্যমে তারা পৃথকভাবে সর্বমোট ১০৫ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি আরো বলেন, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা, জালিয়াতি ও অসদাচরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন, যা দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আসামিদের মধ্যে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের হাবিবুর রহমান (অপু) চাকলাদার, কাস্টম হাউসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক, এআইআর শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা সুলতান আহম্মদ, একই শাখার কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, উচ্চমান সহকারী আব্দুল্লাহ আল মাছুম ও অফিস সহায়ক মো. সিরাজুল ইসলাম তিন মামলার আসামি।
কাস্টম হাউসের শুল্কায়ন গ্রুপের সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও বর্তমানে ঢাকার কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার জনি এবং প্রাক্তন রাজস্ব কর্মকর্তা ও বর্তমানে রাজশাহীর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট মো. হাবিবুল ইসলাম একটি মামলার আসামি। জারার এন্টারপ্রাইজের মাহবুবুর রহমান একটি, মুভিং ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং পার্টনার মো. মিজানুর রহমান চাকলাদার, মো. মফিজুল ইসলাম লিটন ও আব্দুল হান্নান দেওয়ান একটি এবং সিফাত ট্রেডিংয়ের মো. সালাউদ্দিন টিটু একটি মামলার আসামি। এছাড়া অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত মো. আব্দুল গোফরান, মো. জহুরুল ইসলাম ও মো. আবুল কামাল দুটি মামলার আসামি।