ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংকখাতে নৈতিকতার চর্চা গুরুত্বপূর্ণ

ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেয়াসহ এর বাস্তবায়ন সম্ভব হলে তা আদর্শ হিসেবে বিবেচ্য হয় বলে জানিয়েছেন বিআইবিএম গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। একই সঙ্গে বলেন, ব্যাংক খাতের করপোরেট গভর্নেন্সের চর্চার লক্ষে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আলাদা করা হয়েছে।

গত সোমবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে ২০তম নুরুল মতিন মেমোরিয়াল লেকচার ‘ইথিকস ইন ব্যাংকিং’ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

ব্যাংক খাতের নৈতিকতার চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে ফজলে কবির বলেন, এক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ভূমিকা পুরো ব্যাংকের পারফরমেন্সের ওপর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেয়া এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে তা আদর্শ হিসেবে বিবচনা করা যায়।

ব্যাংক খাতের আর্ন্তজাতিক চর্চাগুলো বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আলাদা করে দেয়া হয়েছে জানিয়ে ফজলে কবির বলেন, যাতে ব্যাংক খাতের করপোরেট গভর্নেন্সের চর্চা করা সম্ভব হয়।

মূল প্রবন্ধে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ বলেন, ১৯৯৭ সালের শেষের দিকেও ব্যাংকিং খাতে অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্থ এবং অদক্ষ সরকারি ব্যাংকগুলির আধিপত্য ছিল। যা মোট আমানতের ৬৭ শতাংশ এবং মোট ঋণের ৬৩ শতাংশ ছিল। দুর্বল শৃঙ্খলা ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে এসব ব্যাংকের অনেক ঋণই খেলাপি হয়েছে। সংক্ষেপে, ব্যাংকিং নৈতিকতা তৎকালীন বেশ দুর্বল ছিল। তবে সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

ড. সাদিক আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং নৈতিকতার বিভিন্ন দিক রয়েছে, এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ব্যাংকিং গভর্নেন্স। ১৯৯৮ সালে শুরু হওয়া সংস্কার কর্মসূচির আগে, ব্যাংকিং সেক্টরের প্রশাসন খুবই দুর্বল ছিল। এখন ব্যাংকিং নৈতিকতা আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ১৯৯৮ পরবর্তী সময়ে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারগুলি মূলত ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ও নৈতিকতার অনেকাংশ পুনরুদ্ধার করেছিল। এসময়ে ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন আইন কানুন, নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিকক অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।

স্বাগত বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিআইবিএম প্রতিবছর এ এফ এম নুরুল মতিন স্মরণে মর্যাদাপূর্ণ স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে। এ বছর ২০তম স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টরে প্রত্যেক বছর নৈতিকতার বিষয়ে নতুন বার্তা পেয়ে থাকে। এ বছর ড. সাদিক আহমেদ মহোদয়ের বক্তৃতা ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. আশরাফ আল মামুন।

উল্লেখ্য, এ এফ এম নুরুল মতিন ১৯২৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫১ সালে তদানিন্তন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের গবেষণা বিভাগে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে তার চাকরি ঐ ব্যাংকের অপারেশন বিভাগে স্থানান্তরিত হয়। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকেই বাংলাদেশের ব্যাংকিং পরিকাঠামো নির্মাণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনালাইজেশন অর্ডার ১৯৭২ প্রনয়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সত্তর দশক এবং পরবর্তীতে ব্যাংকিং খাতের উন্নতির জন্য নীতি নির্ধারণী বিষয়ে তার অবদান উচ্চমহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তিনি ১৯৭৮ সালে ব্যাংকিং খাতে তার অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে মৃত্যুবরণ করেন। ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা শীর্ষক এ মেমোরিয়াল লেকচার ১৯৯৮ সাল থেকে চালু করেছে বিআইবিএম।

আনন্দবাজার/টি এস পি

সংবাদটি শেয়ার করুন