দ্বিতীয় দফায় বেড়েছে মেলায় সময়। মেলা চলবে আগামী ১৭ই মার্চ পর্যন্ত। এতে খুশি লেখক ও প্রকাশকরা।সেই সাথে গত সিজনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার স্বপ্নও দেখছেন তাঁরা। আগমনে ঘাতটি নেই বইপ্রেমীদেরও। মেলা ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করছেন পছন্দের বইটি। তবে সেই পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকছে উপন্যাস সংগ্রহের আগ্রহ। সরেজমিনে মেলা দর্শন করেও সেটি লক্ষ্য করা যায়।
উপন্যাস হলো গদ্যে লেখা দীর্ঘাবয়ব বর্ণনাত্মক কথাসাহিত্য। কবিতা, নাটক ও ছোটগল্পের ন্যায় উপন্যাস সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা। উপন্যাসে পরিবেশ, বর্ণনা, রূপরেখা, চরিত্র, সংলাপ ইত্যাদি যখন মানুষের জীবনের কাহিনীকে সুন্দর ও স্বার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলে তার মধ্যে জীবনের কোনো অর্থ বা ভাষ্য প্রকাশ করা হয়। জীবনের এই রূপায়ণ উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠকের কাছে বাস্তব বলে প্রতীয়মান হয়। আধুনিক সাহিত্যে এটি তুলনামূলকভাবে নতুন আঙ্গিক।সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার মধ্যে উপন্যাস সর্বাধুনিক এবং সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় শাখা। বইমেলায় গত দু’বছরের চিত্র লক্ষ্য করলে সেটি আরও স্পষ্ট হয়।
গতবছর করোনা মহামারীর কারণে অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৮ই মার্চ থেকে ১৪ ই এপ্রিল পর্যন্ত। মেলায় মোট নতুন বই এসেছিলো ২ হাজার ৬৪০টি। যার মধ্যে গল্প ৩৪২টি, উপন্যাস ৪০৫ টি, প্রবন্ধ ১৫৮ টি, কবিতা ৮৯৮টি, গবেষণা ৪৭ টি, ছড়া ৫২ টি, শিশুতোষ ৪১ টি, জীবনী ৮২ টি, রচনাবলী ১৬টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৮৪টি, নাটক ১৩টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ৪২টি, ভ্রমণবিষয়ক ৩৪টি, ইতিহাস ৬০টি, রাজনীতির ১৬টি, চিকিৎসা স্বাস্থ্য ১২টি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৫১টি, রম্য/ধাঁধা ১৬টি, ধর্মীয় ৩৫টি, অনুবাদ ৩০টি, সায়েন্স ফিকশন/গোয়েন্দা ২১টি এবং অন্যান্য ১৮৫টি বই।
এবারের মেলা করোনা সংক্রমণের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের দুই সপ্তাহ পর শুরু হয়। ফেব্রুয়ারীর ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও করোনা সংক্রম শনাক্তের হারে নিয়ন্ত্রণ থাকায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চলতি মাসের ১৭ মার্চ পর্যন্ত। চলতি মেলায় এখন অবধি নতুন বই এসেছে ১ হাজার ৫২৬ টি (২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত)। যার মধ্যে গল্প ১৮১টি, উপন্যাস ২৪৪টি, প্রবন্ধ ৮২টি, কবিতা ৪৪১টি, গবেষণা ৩৮টি, ছড়া ২১টি, শিশুতোষ ৩৫টি, জীবনী ৪৬টি, রচনাবলী ৬টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৫৯টি, নাটক ৮টি, বিজ্ঞান ৩৩টি, ভ্রমণ বিষয়ক ৩২টি, ইতিহাস ৩৯ টি, রাজনীতির ৯টি, চিকিৎসা স্বাস্থ্য ৭টি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৩৯টি, রম্য/ধাঁধা ৬টি, ধর্মীয় ২০টি, অনুবাদ ১২টি, অভিধান ৪টি, সায়েন্স ফিকশন/ গোয়েন্দা ৩১ টি এবং অন্যান্য ১৩৩ টি বই।
গত দুই বছরের হিসেবে সর্বাধিক প্রকাশিত হয়েছে কবিতার (১,৩৩৯ টি) বই এবং দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাসের (৬৪৯টি) বই। তবে পাঠকের সংগ্রহের দিকে উপন্যাসের ধারেকাছেও নেই কবিতার বই। কথা হয় প্রথমা প্রকাশনী, পার্ল পাবলিকেসন্স, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স, অন্যপ্রকাশ প্রকাশনী, অনন্যা প্রকাশনী, কথাপ্রকাশ প্রকাশনী, অনুপম প্রকাশনী, তাম্রলিপি প্রকাশনী এবং সময় প্রকাশনীসহ বড় বড় প্রকাশনীগুলোর সঙ্গে।
‘বেশি বিক্রিত বইয়ের ’ কথায় সবার একই উত্তর। যে বইটা বেশি বিক্রি হইতেছে সেটা হচ্ছে উপন্যাস। নির্দিষ্ট কয়েকটি উপন্যাসের নামও বলেন দোকান সংশ্লিষ্টরা যেগুলো এবারে বেশি বিক্রি হইতেছে। অনন্যা প্রকাশনী জানায়, নিশাত ইসলামের থ্রিলার উপন্যাস ‘মন’ তাদের স্টলে সর্বাধিক বিক্রি হচ্ছে। অন্যপ্রকাশ প্রকাশনী জানায়, তাদের স্টলে হুয়ামূন আহমেদ এবং সাদাত হোসাইনের উপন্যাস বেশি বিক্রি হচ্ছে। জহির রায়হানের ‘আরেক ফাল্গুন’ উপন্যাস বেশি বিক্রি হইতেছে অনুপম প্রকাশনীতে এবং তাম্রলিপি প্রকাশনী জানায় জাফর ইকবালের ‘আহা টুনটুনি ওহ ছোটাচ্চু’ সিরিজের কথা।
নিজের পছন্দের উপন্যাসটি সংগ্রহ করতে পারায় সন্তুষ্ট বইপ্রেমীরা। আল মামুন বলেন, সামাজিক সম্পর্কের উপন্যাস পড়তে ভালো লাগে। উপন্যাস জীবনের কথা বলে, নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় উপন্যাসে। তাই নিয়মিত উপন্যাস পড়ি। মিনহাজ মারফি জানায়, থ্রিলার উপন্যাস পড়তে ভালো লাগে। জুনায়েদ ইভানের ‘অন্যমনস্ক’ থ্রিলার উপন্যাসটি সংগ্রহ করেছি। পছন্দের সংগ্রহে কোনো প্রকার অলসতা করি না।