ঢাকা | রবিবার
১০ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৫শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নান্দনিক-আজব রেলস্টেশন

নান্দনিক-আজব রেলস্টেশন

রূপের ঐ প্রদীপ জ্বেলে কী হবে?

নান্দনিকতা উপচে পড়লেও স্টেশন দুটির কোনো সেবা নেই। অনেকটা নীরব নিথর হয়ে যেন দাঁড়িয়ে থাকার জন্যই এসব স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী

বাংলায় জনপ্রিয় একটি গান রয়েছে- রূপের ঐ প্রদীপ জ্বেলে কী হবে তোমার/ কাছে কেউ না এলে আর/ মনের ঐ এতো মধু কেন জমেছে/ যদি কেউ না থাকে নেবার..। এই গানের মতোই মনে হবে, কুমিল্লার লালমাইয়ে অতি নান্দনিক অথচ আজব দুটি রেলস্টেশনকে। এখানে সৌন্দর্য্যের বাহার দেখা গেলেও কোনো সেবা নেই স্টেশন দুটির। অনেকটা নীরব নিথর হয়ে যেন দাঁড়িয়ে থাকার জন্যই স্টেশন দুটি তৈরি করা হয়েছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন লালমাইবাসী। রেলসেবার জন্য তাদের এখন কুমিল্লা বা লাকসাম জংশনের ওপর নির্ভর করতে হয়।

এলাকাবাসী জানান, লালমাই উপজেলায় আলীশহর ও লালমাই নামে দুটি রেলস্টেশন রয়েছে। এরপরও ট্রেনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত এখানকার মানুষ। লালমাইয়ে যাত্রাবিরতি নেই রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্রগ্রামের আন্তঃনগর ট্রেনের। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে যাতায়াতের জন্য লালমাইবাসীকে কুমিল্লা বা লাকসাম জংশনের ওপর নির্ভর করতে হয়। 

সূত্রমতে, লালমাই স্টেশনে একজন স্টেশন মাস্টার, দুজন সহকারী স্টেশন মাস্টারসহ ১৫ জন স্টাফ রয়েছেন। এরপরও এখান থেকে ট্রেনে যাত্রী এবং পণ্য ওঠানামা করা যাচ্ছে না। এলাকাবাসী লালমাই স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রা বিরতির দাবি জানান। এতে চাঁদপুর জেলার একাংশ উপকৃত হবেন বলেও জানান তারা। পাশাপাশি রেলের আয়ও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।

অপরদিকে, আলীশহর স্টেশনেও ঝুলছে তালা। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এখানকার মানুষও ট্রেনসুবিধা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত। লালমাই রেলস্টেশনে চট্টগ্রামগামী দুটি মেইল ট্রেন ডাউন ট্রিপে যাত্রাবিরতি দেয়। তবে সে বিরতির নির্ধারিত কোনো শিডিউল না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আর কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর ও নোয়াখালীগামী ডেমু কমিউটার এখানে যাত্রাবিরতি করলেও এ দুটি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে না। এলাকাবাসী লালমাই উপজেলার এ দুটি স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবি জানান। 

সূত্রমতে, লাকসাম থেকে আখাউড়া ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইন মেগা প্রকল্পে সরকারের ব্যয় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। অথচ এত টাকা ব্যয়ের রেলস্টেশনে ঝুলছে তালা। সেবার চিহ্নও মিলছে না। আলীশহর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, রেলসেবা আমাদের জন্য আশীর্বাদ আর তাই চালু হলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।

বাগমারা রূপালি ইলেকট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী আবদুল হান্নান মিয়াজি আনন্দাবাজারকে বলেন, ব্যবসায়ী কাজে বেশিরভাগ সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়া আসা করে থাকি। ট্রেনসেবা চালু হলে নিরাপদ যাতায়াত করা যাবে। 

ভোগান্তির কথা তুলে ধরে লালমাই ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক অমরকৃষ্ণ মানিক বনিক আনন্দবাজারকে বলেন, কিছুদিন আগে এক রাতে হঠাৎ শুনতে পেলাম চট্টগ্রামে আমার দূর সম্পর্কের এক শ্বশুর খুব অসুস্থ। শোনার সঙ্গে সঙ্গে কনকনে শীতের রাতে স্ত্রী আর ছোট মেয়েটাকে নিয়ে ছুটলাম লাকসাম রেলস্টেশনের দিকে। রাতের বেলা একটা অটোও পাচ্ছিলাম না। বহু কষ্টে রেলস্টেশন গিয়ে পৌঁছালাম। যদি আলীশহর কিংবা লালমাই রেলস্টেশনে রেলসেবা চালু থাকতো তাহলে এতো ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।

লালমাইয়ের বিশিষ্ট সমাজসেবক ও সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী আবদুর রহিম আনন্দবাজারকে বলেন, সরকারের বিশাল অংকের টাকা ব্যয়ে নির্মিত লালমাই ও আলীশহর রেলস্টেশনে যদি আন্তঃনগর ট্রেন সুবিধা চালু করা হয় তাহলে যাতায়াতে সুবিধা পাবে এলাকার মানুষ। বাড়বে সরকারের আয়।

লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম আনন্দবাজারকে বলেন, লালমাই এবং আলীশহর আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি হলে লালমাই, সদর দক্ষিণসহ আশেপাশের উপজেলার মানুষগুলোর যাত্রাপথে অনেক ভোগান্তি কমে আসবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে জনজীবনে পরিবর্তন আসবে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আনিসুল ইসলাম আনন্দবাজারকে বলেন, একটি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা। দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লালমাই এবং আলীশহর দুটি রেলস্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেন চালু হলে উপকৃত হবে মানুষ। বাড়বে সরকারের আয়। তাছাড়া এটি একটি যৌক্তিক দাবি। এখানে ট্রেন সেবা চালু হলে এক এলাকার মানুষের সঙ্গে অন্য এলাকার মানুষের সেতুবন্ধন তৈরি হবে। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও।

চট্টগ্রাম ডিভিশনাল কমার্শিয়াল অফিসার আনসার আলী আনন্দবাজারকে বলেন, আলীশহর ও লালমাইয়ে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন