দেশের ব্যাংকগুলোয় সম্পদ মানের ক্রমাবনতি বলবৎ থাকবে। করপোরেট সুশাসনের অনুপস্থিতি এবং আইনি ও নিয়ন্ত্রণগত দুর্বলতার চিত্র দেখা যায় দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংগুলোর ক্ষেত্রে। এই কারণে ঋণের অর্থও পুনরুদ্ধার করা যাচ্ছে না।
দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ধারক সংস্থা মুডি’সের এক পর্যবেক্ষণে এ কথা উঠে এসেছে।
মুডি’স ইনভেস্টরস সার্ভিসের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্দ ঋণের দিক থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অবস্থা নাকাল। দেশের খেলাপি, পুনর্গঠিত ও পুনঃতফসিলকৃত মোট ঋণের অর্ধেকই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। দেশের উচ্চপ্রবৃদ্ধির হারের চিত্র ও ব্যাংকিং খাতের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে।
সংস্থাটির আশঙ্কা, ক্রেডিট কস্ট বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয়ের সক্ষমতাও কমে যাবে। অভ্যন্তরীণ মূলধন বৃদ্ধি করতে না পারায় ব্যাংকগুলোর মূলধন হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
মুডি’সের ভাষ্যমতে, দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের সিংহভাগই বড় কোম্পানিগুলোর। অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ঋণের ভারও কমছে না। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করার ক্ষেত্রে করপোরেটগুলোর অক্ষমতার চেয়ে অনিচ্ছাই প্রধান কারণ। কঠোর আইনি ও তদারকি ব্যবস্থার অভাবে এমনটি হচ্ছে। অথচ ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে আইনি সহায়তা পাওয়ার কথা ছিল ব্যাংকগুলোর।
প্রতিবেদনে দেশের বেসরকারি খাতের অন্যতম শীর্ষ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঋণমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর আয়ের বিপরীতে ব্যয় যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি সমস্যাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে হ্রাস পেয়েছে নগদ তারল্য।
এ পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে যেসব ব্যাংককে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে সেগুলো হলো ইস্টার্ন, ব্র্যাক, দ্য সিটি, ডাচ্-বাংলা, মার্কেন্টাইল, এনসিসি, আল-আরাফাহ্ ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
সার্বিক বিচারে মুডি’সের পর্যবেক্ষণে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার নেতিবাচক পরিস্থিতির আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে। তবে সংস্থাটি মনে করছে, ঋণঝুঁকি কমানো, শক্তিশালী করপোরেট সুশাসনের উপস্থিতি, আইনি সংস্কার ও ঋণ আদায় নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিচালন দক্ষতা বৃদ্ধি ও পরিচালন ব্যয় কমাতে পারলে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকের মুনাফা বাড়বে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে সংস্থাটি।
আনন্দবাজার/ইউএসএস