ঢাকা | রবিবার
৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উত্তাল একাত্তরের অশান্ত প্রহরগুলি

উত্তাল একাত্তরের অশান্ত প্রহরগুলি

বেলা তিনটায় চাচীর বাবার বাড়িতে পৌঁছালাম। কদিন ধরে স্রোতের মতো অনেক লোকজন আসছে নানার এ বাড়িতে। রক্তহিম করা গুজব কানে এলো। অনেক মুক্তিযোদ্ধাও মারা যাচ্ছে যুদ্ধে। হাত-পা কেমন অবশ হয়ে যাচ্ছে। চাচী বললেন, রাতে মুক্তিযোদ্ধারা এ বাড়িতে আসে নানা তাদের যখন যা প্রয়োজন ঔষধ, কাপড়, টাকা, চিড়া, গুড় ইত্যাদি দিয়ে সহযোগিতা করেন।

সাতদিন পর ছোট চাচা আসলেন, উদগ্রীব মন নিয়ে ছুটে গেলাম বাড়ির খবর জানতে। চাচা বললেন, দাদাকে গতকাল ক্যাম্পে ধরে নিয়ে গেছে পাকবাহিনী। বুকের পাঁজর সংকুচিত হয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল আমার। শুরু হলো আমাদের মহা সর্বনাশা পর্ব। অস্থির যন্ত্রণা আর শূন্যতা বুকে হতাশায় রাত কাটালাম। গ্রামেও রাজাকার আর শান্তি বাহিনীর ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। রঞ্জুদা হলদিবাড়ির হাসনা ফুফুমার বাসায় এসেছিল। সুযোগ পেয়ে আমাদের দেখতে এসেছে। আব্বার খবর তারা জেনেছে, আব্বার খরব পেয়ে তুতুল ছুটে এসেছিল হলদিবাড়ি। সেখানে রৌউফদার সঙ্গে ওর দেখা হয় নাই খবর পেয়েছে।

তুতুল আর্মিদের সঙ্গে সরাসরি গেরিলা যুদ্ধে গিয়েছিল। অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। যুদ্ধের মধ্যেই যুক্ত আছে মনে প্রাণে অসীম সাহসে। কান ঘেঁষে গুলিটা পাশ কেটে চলে যায়। ঐ যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় নীলফামারীর সেই চারজন মুক্তিযোদ্ধা কাদার ভিতরে থাকা মাইনের উপর পা পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। মাইন ব্লাস্ট হয়ে টুটুলের একটা পা উড়ে যায়। বাকি তিনজন ওকে ঘাড়ে করে নিয়ে পালিয়ে কোনো মতে বেঁচে গেছে।

ধীরাজ চাচা ছিল খুব সাহসী। তবে.. বলেই রঞ্জুদা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ধীরাজ চাচা যুদ্ধ করে ফিরে এসে রাইফেল পরিষ্কার করার সময় লোড করা বন্দুকের স্ট্রিগারে হাত লেগে ফায়ার হয়। এতে ওর মাথার খুলি উড়ে যায়। রাত ভোর হলে সমস্যা হবে বলে রঞ্জুদা উঠে দাঁড়ালো। নানা আগে বাইরে দেখে এসে ওকে কিছুদূর পার করে দিল।
রঞ্জুদাকে সাবধানে এগিয়ে দিয়ে নানা ঘরে ঢুকতেই নানার হাত ধরে চাপা স্বরে বললাম, নানা আমিও যুদ্ধে যাব। নানা বললেন, হ্যাঁ, তুই আমার মতো ঘরে বসে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোদ্ধা হয়ে কাজ করবি।

নানার পরামর্শ মতো মুক্তিযোদ্ধাদের দেবার জন্য চিড়া, ছাতু, গুড়, ঔষধ, ব্যান্ডেজ, ডেটল, ফাস্টএইড, গামছা, শীতবস্ত্র প্যাকেট করা ও শুকনা খাবার, টাকা, সাবধানে রাখার জন্য কোমর বন্ধ, গোপন পকেট তৈরির কাজটা শিখিয়ে দিলেন। আমরা দু’বোন গোপনে ঘরে বসে এ কাজ করে অনেক স্বস্তি পেলাম। ৫ আগস্ট ’৭১ শবে-বরাতের রাত। আব্বার জন্য দোয়া করলাম। মুক্তিবাহিনী ও গেরিলাদের অ্যাকশন যেন সফল হয় তাদের জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করলাম। (চলবে)

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন