ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম

মেহেদী হাসান অর্ণব

বেশ কয়েক মাস ধরে করোনার সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও মার্চের প্রথম সপ্তাহের পর থেকেই তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালস্থ হওয়া ও মৃত্যুবরণের উর্ধ্বমুখী পরিসংখ্যান নিদারুণ উদ্বেগজনক পরিস্থিতির জানান দিচ্ছে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও নতুন করে ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু দৃশ্যত সরকার ঘোষিত লকডাউন এবং করোনা বিধিনিষেধ দেশের অনেক জনগণই মানছেন না। ফলে দেশে করোনার সংক্রমণ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে মাস্ক পরিধানের মতো অতি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়টিকেও মানুষ ছেলে খেলায় পরিণত করেছে। কেউ মাস্ক দিচ্ছে থুতনির নিচে আবার কেউবা মাস্ক হাতে নিয়ে দিব্যি রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।

অনেকেই আবার মাস্ক ছাড়াই রাস্তা-ঘাট, বাজার এবং বহুল জনসঙ্গম এলাকায় নিবিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ বিষয়ে কখনো যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের ধরে এরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ফলে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা যে অনেক বেশি তা সহজে অনুমেয়। এদিকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় হাসপাতালের আইসিইউগুলোতে আসন সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যাবধানেই বড় ধরনের এই পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন চিকিৎসকরা। করোনার নতুন কোনো ধরনের বিস্তার ঘটছে সেটি হতে পারে বাইরে থেকে এসেছে অথবা বিদ্যমান ভাইরাসই নিজেকে বদলে আরও শক্তিশালী হয়েছে। যেমনটি বিশ্বের ৭৭ টি দেশের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, “এক বছরের মধ্যে করোনার ধরনের পরিবর্তন ঘটবে। অকার্যকর হয়ে যাবে আবিষ্কৃত সব টিকা”। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিত্যনতুন রূপে হানা দিচ্ছে করোনা। কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। এ পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে হলেও এত দিনকার জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেদিকে উর্ধ্বমুখী সেদিকে মানুষের সচেতনতার হার একেবারে নিন্মমুখী, প্রায় নেই বললেই চলে। আমরা যদি এখন থেকে আরও সতর্ক না হই, তাহলে মারাত্মক বিপর্যয় আমাদেরকে ভয়াবহ ক্ষতির দিকে ধাবিত করবে। তবে বাংলাদেশে সংক্রমণের চেয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বেশি। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে আমাদেরকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে; হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখতে হবে; যেকোনো কাজের পূর্বে হ্যান্ড স্যানিটাইজার অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহার শেষে নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে নয়তো দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকবে; সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধুতে হবে; বাইরে থেকে আসার পরে এবং খাবার গ্রহণের পূর্বে হাতের প্রতিটি অংশ ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে; পাবলিক ট্রান্সপোর্টে প্রয়োজন ছাড়া কোনো হাতল বস্তু স্পর্শ করা যাবে না, যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে; হ্যান্ডশেক এবং আলিঙ্গন বিনিময়ে বিরত থাকতে হবে; মাছ, মাংস এবং ডিম খাবার পূর্বে যথাযথভাবে সিদ্ধ করে নিতে হবে; বর্তমান সময়ে পশু-পাখি লালন বা পালন থেকেও বিরত থাকতে হবে; কোনো কারণ ছাড়াই দেশের মধ্যে কিংবা দেশের বাইরে ভ্রমণে বিরত থাকতে হবে; তাছাড়া সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব মেনে চলাফেরা করতে হবে।

সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব স্থাপন কোনো প্রতিষেধক নয়, কিন্তু সংক্রামক রোগ বিস্তার প্রতিরোধের জন্য এটি সর্বোত্তম ওষুধবিহীন পদক্ষেপ। সুতরাং করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যক্তি পর্যায়ে পরিচ্ছন্নতা এবং নিজেকে অন্যের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখাই প্রধান অবলম্বন।

লেখক: মেহেদী হাসান অর্ণব
শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা

সংবাদটি শেয়ার করুন