ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক

ধর্ষণের ঘটনা দেশে দিনকেদিন বৃদ্ধিই পাচ্ছে। প্রতিদিন পত্র-পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়া, টিভির স্কিন সব জায়গাতেই ধর্ষণের ঘটনার খবর দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিদিনই দেশের কোন না কোন জায়গায় ধর্ষণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেশে ধর্ষণ যেন এক মামুলি ব্যাপারে পরিণত হয়ে উঠেছে। ধর্ষণ করে ধর্ষকেরা খুব সহজে পারও পেয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী দ্বারা দেশে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ধর্ষকরা খুব সহজে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়ার কারণে দিনদিন এর মাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমাদের সমাজে মূল্যবোধ এর অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। আজকাল ছেলেমেয়েরা হাতের কাছেই সস্তা ইন্টারনেট পেয়ে যাওয়ার কারণে খুব সহজে পর্ণগ্রাফি ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দিকে দিন দিন ঝোঁকে পড়ছে। এর ফলে সমাজে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, খুন, সন্ত্রাস, রাহাজানি ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এক স্বামীকে রুমে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে সবাই মিলে গণধর্ষণ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে দেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। পরবর্তীতে প্রশাসন আসামিদের গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়।

গত ৪ অক্টোবর সন্ধা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাড় খাল এর পাশে এক নারীকে ৭/৮ জন যুবক বিবস্ত্র করে শরীর ও যৌনাঙ্গে প্রচন্ড নির্যাতন করে। নির্যাতিত নারী তাদের পায়ে ধরে, বাবা ডেকেও নির্যাতন থেকে মুক্তি পায়নি। ধর্ষকদের করা ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা হলে তা মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত ঘটনা ইতিমধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষ উক্ত ঘটনার দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছে।

এমনসব হাজার হাজার ঘটনা দিনের পর দিন ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু অনেক ঘটনায় প্রকাশ না হওয়ার কারণে লোক সম্মুখের আড়ালে থেকে যাচ্ছে এবং সেগুলোর কোন বিচারও হচ্ছে না। ধর্ষণের শিকার অধিকাংশ নারীই সামাজিক মানসম্মানের ভয়ে অভিযোগ দিতে চায় না। এর ফলে হাজারো ঘটনা মাটিচাপাই থেকে যাচ্ছে দিনের পর দিন। আবার অনেক নারী এসব ঘটনা জানাজানি হলে মানসম্মান এর ভয়ে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কিন্তু এভাবে আর কত? যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নারী সেই দেশের নারীরা কেন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে?

দেশের এইসব ধর্ষণ ও নির্যাতনের কারণে আজকাল বাবা-মা’রা তাদের মেয়ে সন্তানদেরকে নিয়ে শঙ্কার মাঝে আছে। রাস্তায় বের হলেই যদি তাদের সাথেও এমন ঘটনা ঘটে যায় তাহলে তারা তখন কি করবে? এসব হাজার প্রশ্ন এখন তাদের মনে। মেয়ে সন্তানদেরকে এখন পরিবারের জন্য অভিশাপ মনে করা হচ্ছে। ধর্ষকরা আবার ধর্ষণ করে খুব সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে। যদিও মুষ্টিমেয় ধর্ষক গ্রেফতার হয় তারা আবার আইনের ফাঁকে, রাজনৈতিক নেতাদের ধরে ঠিকই বেরিয়ে যাচ্ছে এবং পূর্বের চেয়ে বেশি নৃশংস হয়ে উঠছে। ফলে দিনদিন ধর্ষণ এর মাত্র বৃদ্ধিই পাচ্ছে। দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এমনটা হচ্ছে বলে অনেকে মনে করে থাকেন।

এক জরিপের মাধ্যমে উল্লেখ করা হয় দেশে গত নয় মাসে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১০৮৩ জন নারী!

ধর্ষকদের যদি এখনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় না আনা হয় তাহলে দেশে ধর্ষণের মাত্রা বাড়তেই থাকবে। নাজির মূলক দৃষ্টান্ত শাস্তির মাধ্যমেই কেবল ধর্ষণ রোধ করা সম্ভব হবে। দল, মত নির্বিশেষে যেই ধর্ষণ করুকনা কেন তাদের সবাইকে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখে যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাহলে খুব শীগ্রই দেশ থেকে ধর্ষণ শূণ্যের কোঠায় চলে আসবে বলে আশা করা যায়। আর ধর্ষকদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। কোন ধর্ষকদের স্হান সমাজে দেয়া যাবেনা। যতদিন পর্যন্ত না ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা না হবে ততদিন পর্যন্ত এইসব ঘটনা অহরহ ঘটতে থাকবে। একটি সুস্থ বাংলাদেশের জন্য হলেও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

লেখক: মাহমুদুল হাসান
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

আনন্দবাজার/শাহী/মাহমুদুল

সংবাদটি শেয়ার করুন