তাসনিম হাসান মজুমদার
সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত বিষয় হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। যা সাইবার অপরাধ নির্মূলে সংসদে কন্ঠে ভোটে পাস করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ সহ মোট ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তে, বাংলাদেশের সংসদে কণ্ঠভোটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পাস হয়। এ আইনটি প্রস্তাবের পর গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমের কর্মী সহ বিভিন্ন মহল তীব্র সমালোচনা করে।
তাদের মতে ৫৭ ধারায় অপরাধের ধরনগুলো একসঙ্গে উল্লেখ ছিল, নতুন আইনে শুধুমাত্র সেগুলো বিভিন্ন ধারায় ভাগ করে দেয়া হয়েছে। ৩২ ধারায় সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন সাংবাদিকরা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন প্রথম করা হয় ২০০৬ সালে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে শাস্তি বাড়িয়ে আইনটিকে আরও কঠোর করা হয়। ডিজিটাল আইনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ৫৭ ধারা।
৫৭ ধারা কী?
নিম্নে ৫৭ ধারা হুবহু তুলে ধরা হলোঃ
তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ২০০৬। ইলেক্ট্রনিক ফরমে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ ও উহার দণ্ড। ধারা- ৫৭
১/ কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহা ইহলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ৷
২/ কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বৎসর এবং অন্যূন সাত বৎসর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন৷
উল্লেখ্য ২০০৬ সালের আইনে শাস্তির বিধান “অনধিক দশ বৎসর কারাদণ্ডে” থাকলেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন) আইন, ২০১৩ (২০১৩ সনের ৪২ নং আইন) এর ৪ ধারা বলে শাস্তির বিধান বাড়িয়ে “অনধিক চৌদ্দ বৎসর এবং অন্যূন সাত বৎসর কারাদণ্ড” করা হয়।
শুরুতে অনেকে ৫৭ ধারা কে সাধুবাদ জানালে ও এখন অনকে ৫৭ ধারা নিয়ে আশংঙ্কা করছেন। অনেক সাংবাদিক মনে করছেন, ৫৭ ধারা তাঁদের মত প্রকাশের অধিকার ক্ষুন্ন করছে। তাই বিভিন্ন সময় সাংবাদিক মহল এর প্রতিবাদ করেছেন। ধারাটি ভালো হলে ও মাঝে মধ্যে দেখা যায়, এর অপব্যবহার করে বিভিন্ন সাংবাদিকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। জেল হাজতে নিয়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিবিসি বাংলার এক জরিপে দেখা গেছে, চলতি বছরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০০ জন গ্রেফতার হয়েছেন। মানুষ নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেকে মনে করে থাকেন, সরকার যে উদ্দেশ্যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করেছেন। তার অপব্যবহার করছেন। কিছু কুচক্রী মহল। সংসদে যখন আইন পাস হয়, জন সাধারণের কথা মাথা রেখেই প্রস্তাবটি পাস হয়। তারপর প্র্যাক্টিকেল ভাবে দেখা যায়, এর সুবিধা নিচ্ছে স্বল্প সংখ্যক মানুষ।
লেখকঃ তাসনিম হাসান মজুমদার
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম।
আনন্দবাজার/শাহী/তাহা