রাবেয়া মাহাবুব
করোনাভাইরাস এর কথা আমরা সবাই কমবেশি জানি, তবে এ করোনাকালীন সময়ে সবাই মোটামুটি ঘরে বন্দী। এ সময়ে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন- শিশু- প্রাপ্ত বয়স্ক –বয়স্ক মানুষ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
সাধারণত মানসিক স্বাস্থ্য বলতে বুঝি, যা আমাদের সংবেদনশীল, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক কল্যাণ এর অন্তর্ভুক্ত। এটি আমাদের চিন্তা- ভাবনা, অনুভূতি এবং আচরণকে প্রভাবিত করে।
মানসিক অবসণ্ণতা এমন একটি শব্দ যা তীব্র মানসিক সংকটকালীন সময়কে বর্ণনা করে এবং এটির ফলে যেকোনো কাজ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে। বিভিন্ন ধরনের অবসন্নতা প্রকাশ করে।
বেড়েছে হতাশা, আর্থিক চাপ, চাকরি হারানোর ভয়, খাদ্য সংকট, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা , ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হবার আশংকা। তবে, স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেভাবে বাড়ছে বেড়ে চলছে অপরাধ প্রবণতা। অনেক জায়গা থেকে উঠে আসছে নির্যাতনের চিত্র।
সম্প্রতি জাতিসংঘের একটি তথ্য উপাত্তে দেখা গেছে যে, চলমান করোনা সংকটে ৭৭% বাচ্চাদের মনোযোগহীনতা দেখা গেছে। ৩৯% বাচ্চাদের অস্থিরতা ও খিটখিটে মেজাজ আছে। স্নায়ুবিক দুর্বলতা দেখা গেছে ৩৬% বাচ্চাদের থেকে। একাকীত্বে ভুগছে ৩১% শিশু।
আবার, ওয়ার্ল্ড ভিশনের এর জরিপ অনুসারে, ৯১ ভাগ শিশু মানসিক চাপে ব্যাহত হয়। শিশু ও তরুণদের ওপর করোনা এর অবস্থা জানতে বাংলাদেশ সহ ১৩ টি উন্নয়নশীল দেশে জরিপ করা হয়।
ইতিহাসে এতো সংখ্যক মানুষ একসাথে এই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সংকট এর মুখোমুখি হয়নি আগে। তাই আমাদের সবার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অতীব জরুরি। পাশাপাশি দারিদ্রতা বেড়েই চলেছে। একদিকে যেমন ছন্দপতন হচ্ছে আরেকদিকে মানসিক চাপও বেড়েই চলেছে।
শরীরকে ফিট রাখার জন্য যেমন ব্যায়াম করা হয়, তেমন মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১। নিজের প্রতি সদয় হতে হবে ।
২। যথাসম্ভব রুটিন বজায় রাখুন।
৩।নিজের জন্নে সময় বের করুন ।
৪।সম্ভব হলে, প্রকৃতি থেকে বেরিয়ে আসা যেতে পারে।
৫। অনুশীলন করতে হবে।
৬। ভাইরাস এর বিস্তার রোধে নিয়মিত গাইড লাইন অনুসরণ করুন ।
৭। অনুদান দিয়ে অন্যদের সাহায্য করুন।
৮। সৃষ্টিশীল / সৃজনশীল কাজ করা যেতে পারে।
এই করোনাকালীন সময়ে আমাদের নিজেদের প্রতি যেমন যত্নশীল হতে হবে তেমনি পরিবারের বয়স্ক মানুষের প্রতি আরও বেশি যত্নবান হতে হবে। যেমন- পুরানো ছবি এবং স্মরণীয় জিনিসগুলো নিয়ে ভাবা যায়। গল্প করা যেতে পারে। কোন রেসিপি রান্না করা যেতে পারে। পরিবারের অন্যান্য মানুষের সাথে প্রিয় গান/সিনেমা উপভোগ করা যেতে পারে। বিকেলে ছাদে/পার্কে একসাথে হাঁটা- চলাফেরা করা যেতে পারে। এতে করে মানসিক প্রশান্তি বাড়বে, একাকীত্ব দূর হবে। মনে রাখতে হবে যে, অনেক বয়স্ক মানুষ যারা দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ তাদের প্রতি আরও যত্নশীল হতে হবে এবং অবশ্যই মানসিক সুস্বাস্থ্য এর প্রতিও। ভিডিও, ই-মেইল বা অন্য যে কোন উপায়ে চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। এসময় ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন।
কোভিড-১৯ মহামারিটি আমাদের প্রতিদিনের জীবনের বিভিন্ন দিক ব্যাহত করছে। তবে এর মধ্যে প্রতিবন্ধী মানুষ উল্লেখ্য। যারা নির্ভরযোগ্য বা শারীরিকভাবে মানিয়ে নেয়ার মত আপত্তির সম্মুখীন হতে পারে। প্রতিবন্ধীকতার উপর বিশ্ব রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত ডেটা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ৫০% প্রতিবন্ধী মানুষরা স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত এবং তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ অবস্থায় প্রতিবন্ধী মানুষদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পেতে অসুবিধা হতে পারে। কমপক্ষে ২ সপ্তাহের জন্য ওষুধ, স্বাস্থ্যকর পণ্য মজুদ রাখতে হবে। তাকে সময় দিতে হবে। তার কথা শুনতে হবে। অনলাইন/যেকোনো স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে হবে। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এর কাছে সাহায্যের কথা বলুন। মানসিক ভাবে কেমন বোধ করছে তাও বলা যেতে পারে। ঘরের ভেতরে- বাইরে হুইলচেয়ার ইত্যাদি সব সময় জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।
এ পর্যন্ত পৃথিবীতে অনেক মহামারি ও দুর্যোগ এসেছে, বরাবরই আমাদের টিকে থাকার জন্য লড়াই করতে হয়েছে। এখনও করব, একদিন আমরা সুস্থ পৃথিবীর আলো দেখব। ততক্ষণ পর্যন্ত ভাল থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
লেখক: রাবেয়া মাহাবুব
Education & Communication Officer
Alokito Shishu.