শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মায়ের ভালোবাসায় স্বার্থপরতার কোন স্পর্শ নেই

সমগ্র বিশ্ব জুড়ে আজ পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মা দিবস’। আজকের এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে বিশ্বের সকল মাকে উৎসর্গ করে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের বাংলাদেশেও বেশ কয়েক বছর ধরে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব মা দিবস। বাংলাদেশে এ বছর করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় পাল্টানো পরিস্থিতিতে এবার থাকছে না ‘মা’ দিবসের তেমন কোন আয়োজন ।

তবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে রয়েছে বেশে কিছু আয়োজন। আরোও আছে মাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় মায়ের সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করা আর সাকে নিয়ে অসংখ্য হৃদয় ছোয়াঁ স্ট্যাটাস।

এই সুন্দর পৃথিবীর সব থেকে বিশুদ্ধ,পবিত্র ও মধুর শব্দের নাম ‘মা’। আমার মা-ই- হচ্ছে আমার প্রথম শিক্ষক। আমার মায়ের কাছ থেকেই আমি শিখেছি মায়ের ভাষা বাংলাতে কথা বলা। পৃথিবীর সকল মাকে উৎসর্গ করা একটা দিন বিশ্ব মা দিবস।

অনেককেই  বলতে দেখেছি, মাকে ভালোবাসতে আবার কোন নির্দিষ্ট দিন লাগে নাকি? মা তো সব সময়ই মা। সারা বছরই ভালোবাসার বন্ধনে অটুট থাকুক পৃথিবীর সেরা উপহার মায়ের প্রতি ভালোবাসা। ধরে নিলাম কথা ঠিক আছে, তবে বছরের একটা দিন যদি প্রিয় মায়ের জন্য বরাদ্দ থাকে, মাকে উপহার দেওয়ার উপলক্ষে যদি এই দিনটি তৈরি করে দেয়, মা দিবসে যদি দূরে অবস্থান করা কোন সন্তান মায়ের কাছে ফিরে আসে তাহলেই আন্দাজ করা যায় মা আর আদরের সন্তানের মধ্যে যে কত কালের ভালোবাসা নিহিত ছিলো।

আরও পড়ুনঃ  অনুসন্ধান ও গবেষণা জোরদার করা দরকার

মায়ের সন্তানেরা যতই বড় হোক না কেন, পৃথিবীর প্রতিটি মায়ের কাছেই তাদের সন্তানেরা সেই ছোট্ট বেলার আদরের খোকা ও খুকি। আদরের সন্তান দূর থেকে কাছে আসার দিনে যদি হয় মা দিবস, তাহলে নিঃসন্দেহে মা দিবসটি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই দিনে আমরা দেখতে চাই মায়ের মুখের হাসি। কারণ ……মধুর আমার মায়ের হাসি… চাঁদের মুখে ঝরে।

সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মা যাবতীয় মমতার আশ্রয়স্থল ও অফুরন্ত ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু। পৃথিবীতে প্রতিটি শিশু সন্তানের প্রথম শেখা বুলিও হচ্ছে ‘মা’। এই পৃথিবীর ইতিহাসে সকল ধর্মই মাকে দিয়েছে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার আসন। তবে মানুষ ছাড়াও এই পৃথিবীতে অবুঝ প্রানীদের মধ্যেও প্রবল মাতৃত্ববোধ চোখে পড়ে। অন্য কারো ভালোবাসার মধ্যে স্বার্থ নিহিত থাকলেও, এক মাত্র মায়ের ভালোবাসায় কোন ধরণের স্বার্থপরতার স্পর্শ নেই, আর নেই কোন চাওয়া-পাওয়ার সমীকরণ।

একমাত্র মা-ই সন্তানকে বুক ভরা ভালোবাসা দিয়ে লালন-পালন করেন। মায়ের আচঁল/কোলই সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তাই মাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানোর জন্য কোন নির্দিষ্ট দিনক্ষণ নেই। মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রতিদিনের, প্রতি মুহূর্তের, প্রতিক্ষণের। তারপরও এই বিশ্বের সকল মানুষ যাতে একসঙ্গে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে, সেজন্য প্রতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার সমগ্র বিশ্বে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মা দিবস।

এদিকে মা দিবস উদ্যাপনের প্রথম ভাবনাটি আসে মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ডের মাথা থেকেই। ১৮৭০ সালে আমেরিকার জুলিয়া ওয়ার্ড হাও নামের এক গীতিকার মা দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। তিনি আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় একটি দেশাত্ববোধক গান লিখেছিলেন। সে গানটা সে সময় বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। এদিকে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল কারণে বা অকারণে। এক মায়ের সন্তান আরেক মায়ের সন্তানকে হত্যা করেছিলো অবলীলায়। এই সব মানুষের হত্যাযজ্ঞ দেখে জুলিয়া খুবই ব্যাথিত হয়েছিলেন। তিনি এটা বন্ধ করার জন্য আমেরিকার সব মাকে এক সাথে করতে চাচ্ছিলেন। আর এ কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক মা দিবস পালন করতে চেয়েছিলেন। মা দিবসটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের কাছে প্রচুর লেখালেখি করেন।

আরও পড়ুনঃ  একটা কিছু হোক

এদিকে মা দিবস পালনের রীতিকে সাংগঠনিক ভিত্তি দেন মারিয়া রিভস জারভিস নামের আরেক আমেরিকান নারী। তার মা আনা জারভিস দরিদ্র জনগোষ্টিকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে ছিলেন। ১৯০৫ সালে আনা জারভিস মারা গেলে মেয়ে মারিয়া রিভস মায়ের স্মৃতি রক্ষার জন্য সচেষ্ট হন। আর ওই বছর তিনি তা সান ডে স্কুলে প্রথম এ দিনটি মাতৃদিবস হিসেবে পালন করেন। ১৯০৭ সালের এক রোববার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। আর সেই ঘোষনার পর থেকেই বিশ্ব মা দিবসের যাত্রা।

এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া,ব্রাজিল,কানাডা,চীন, রাশিয়া ও জার্মানীসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালিত হচ্ছে। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হলে একটি গানের চরণ উল্লেখ করতেই হয়। ‘মধুর আমার মায়ের হাসি, চাঁদেও মুখে ঝরে/মাকে মনে পড়ে , আমার মাকে মনে পড়ে…’।

প্রতিটি মানুষই কোন না কোন মায়ের সন্তান। মাকে বাদ দিয়ে সন্তান হয়না, মানুষ হয় না। মাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা করার শিক্ষা পুরো মানবজাতিকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা করারই নামান্তর। মানব সম্পদের যথার্থ বিকাশ এবং মানব সমাজের সার্বিক অগ্রগতির জন্য মা জাতির প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়িত্বশীলতা এবং ভালোবাসা অবশ্যই অপরিহার্য এবং পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আনন্দবাজার/ মোহাম্মদ সবুজ, গাজীপুর প্রতিনিধি

সংবাদটি শেয়ার করুন