ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজনৈতিক বিভেদ নয়, মানুষ বাঁচানোই আসল কাজ

কাওসার শাহীন

আমরা কেন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তার মূল কথা বলা আছে আমাদের মহান সংবিধানের প্রস্তাবনায়। সেই প্রস্তাবনাকে ধারণ করেই তৈরি করা হয়েছিল আমাদের সংবিধান। আমাদের রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব কি তা সুনির্দিষ্ট করে বলে দেয়া আছে আমাদের সংবিধানে। যা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনও বটে।

সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা। এজন্য রাষ্ট্র নিজেকে নিয়োজিত রাখবে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পর আমাদের দেশে কোটি কোটি মানুষ ভুখা। আবার লুটপাট করে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাঁচার হয়েছে আমাদের দেশ থেকে। কেমন আছে আমাদের দেশটি করোনা আমাদের একেবারে নাঙ্গা করে দেখিয়ে দিয়েছে। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার কি হাল তা তো চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি।

একটি কল্যাণকর রাষ্ট্রে চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকে পুরোপুরি কিংবা প্রায় পুরোপুরি সরকারি নিয়ন্ত্রণে। এটি রাষ্ট্রকে করতে হয়। তার দায়িত্ব এটি। কোনভাবেই সে তার দায়িত্ব থেকে সরে আসতে পারেনা। সরে আসার সুযোগ নেই। কারণ জনগণের শেষ আশ্রয় রাষ্ট্র।

বিভিন্ন গবেষণা ও তথ্যে জানা যায়, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ১%। যা প্রয়োজনের তুলনায় কত যে কম তা করোনা আমাদের হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দিয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শতকরা মাত্র ৩০ ভাগ পাই সরকারি হাসপাতাল থেকে আর বাকি ৭০ ভাগ আসে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে। আর করোনার এই দুর্যোগের সময়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলো আমাদের জনগণকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। ফলে মাত্র ৩০ ভাগ সক্ষমতার সরকারি হাসপাতাল গুলোকে পুরো দেশের জনগণের চিকিৎসার ভার নিতে হচ্ছে। ফলে এই দুর্যোগের সময়ে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে। রাষ্ট্র যখন তার মৌলিক দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হয় তখন এ সমস্যা তৈরি হয়। আর দিনের পর দিন আসল কর্তব্য থেকে সরে আসার ফলে দুর্যোগের মুহূর্তে আমরা হয়ে পড়েছি নিধিরাম সর্দার। ফলে সব দিকেই হয়ে পড়েছে লেজেগোবরে।

আমরা যদি কল্পিত জিডিপির পিছনে না দৌড়ে হ্যাপি ইনডেক্সের পিছনে ছুটতাম তবে তখন হতো আমাদের কল্পিত রাষ্ট্র। যেমনটা উল্লেখ আছে আমাদের সংবিধানে। তাই করোনার এই সময়ে কোনো রাজনৈতিক বিভেদ নয়, দেশের মানুষকে বাঁচানোই আসল কাজ। কারণ মানুষ না বাঁচলে রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে যায়। অতীতে বহু রাজ্য বা এলাকা এমনিভাবে পরিত্যক্ত হয়েছিল। এজন্য সব সেক্টরের সকল জ্ঞানী গুণী মানুষকে এক কাতারে এনে তাদের পরামর্শ নেয়ার ও সে অনুযায়ী কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ সময় যে বয়ে যায়।

লেখক :
কাওসার শাহীন
সাবেক শিক্ষক
যোগাযোগ ও গণমাধ্যম শিক্ষা বিভাগ
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ-ইউডা

সংবাদটি শেয়ার করুন