ঢাকা | মঙ্গলবার
১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা যুগের শেষে শুদ্ধ সভ্যতায় স্বাগত

মো. জামাল হোসেন

বিশ্ব এখন করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যস্ত। করোনা দুনিয়ার খ্যাতিমান বিজ্ঞানী, গবেষক কিংবা বিশ্বমোড়লদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। সভ্যতাকে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। অন্ধকারের পরেই থাকে আলোর ছটা। এই সংকটও মানুষ কাটিয়ে উঠবে- এমনটাই প্রত্যাশা করি।

করোনা যুগের পরে নতুন বিশ্ব কেমন হবে? বর্তমান পরিস্থিতি থেকে কী আমরা শিখবো? নাকি সেই পুরনো নীতি নিয়েই নতুন যুগের সূচণা হবে? এটির উত্তর মেলানো কঠিন। সময় হয়তো সেটি বলে দিবে।

মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন। কোরআনে উল্লেখ আছে- আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের আগেও বহু মানবগোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, যখন তারা সীমা অতিক্রম করেছিল। তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনসহ রাসুল এসেছিল; কিন্তু তারা তা বিশ্বাস করেনি। এভাবেই আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিফল দিয়ে থাকি।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ১৩)

মানে হলো- আল্লাহ পাপীদের সঠিক পথে আসার জন্য সুযোগ দেন। সুযোগ দেয়ার পরও না শুধরালে বহু জাতির ওপর দুনিয়াতেই আজাব এসেছে; কিন্তু সে আজাব থেকে তারা শিক্ষা গ্রহণ করেনি। আয়াতে আরব জাতির কথা বিশেষভাবে বলা হলেও এটির আবেদন সর্বজনীন। কোনো জাতি যখন আল্লাহর প্রদর্শিত ন্যায় ও সত্যের পথে চলে তখন তারা সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করে। আবার যখন তারা সে পথ ত্যাগ করে তখনই তাদের পতন ঘটে।

কোরআনে হজরত নুহের (আ.) আমলে সংঘটিত মহাপ্লাবন ও নৌকা সম্পর্কে আলোচনা এসেছে। যারা মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিলেন তারাসহ প্রতিটি জীবজন্তু, পশুপাখি একজোড়া করে নৌকায় স্থান পেয়েছিল।

হাদিসেও এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। সেসময়ে আল্লাহর বিশ্বাসীরাসহ প্রত্যেক প্রজাতির পশুপাখির জোড়া নিয়ে হজরত নুহ (আ.) নৌকায় উঠলে মহাপ্লাবন শুরু হয়। দীর্ঘ এই মহাপ্লাবনে নৌকার আরোহীরা বাদে সবাই ডুবে মারা যায়।

ইতিহাস সাক্ষী, অভিশপ্ত লুত জাতিকে সমকামের অপরাধে আল্লাহ ধ্বংস করেছিলেন। ফেরআউন সম্প্রদায়কে কুষ্ঠরোগ এবং পঙ্গপাল দিয়ে শাস্তি দিয়েছিলেন। নমরুদকে মেরেছেন মস্তিষ্কে মশা প্রবেশ করিয়ে। এমন নানা ঘটনার বর্ণনা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত রয়েছে। সকল ধর্মেই প্রাকৃতিক শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে।

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়- অনেক সভ্যতাই হারিয়ে গেছে। মেসোপটেমিয়া, সুমেরীয়, ব্যাবেলিয়ন, চৈনিক, হিব্রু, গ্রীক, রোমান, মায়া, ইনকা সভ্যতা- এসব আজ ইতিহাস। প্রায় প্রতিটি সভ্যতা ধ্বংস করেছে প্রকৃতি। আবার প্রকৃতি নতুন সভ্যতা সৃষ্টি করেছে। ডায়নোসর যুগও ধ্বংস করেছে প্রকৃতি।

এবার বলি- একবার চিন্তা করুণ তো, করোনাভাইরাসের কারণে আমরা কেউ বাসা থেকে বের হতে পারলাম না। তাহলে ক্ষেতের কৃষি কাজ করবে কে? দীর্ঘদিন ক্ষেতে না যেতে পারলে ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হবে। খাদ্যের অভাব দেখা দিবে।

আবার শ্রমিক যদি কলকারখানায় না যায়? তাহলে একসময় এসব বন্ধ হয়ে যাবে। দেখা দিবে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসের অভাব। সহজ কথায়, ঘুম থেকে উঠে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত ব্যবহার্য সবকিছুর অভাব হবে। শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাবে। পৃথিবীতে এমন কোন রাষ্ট্র নেই যেখানে জনগণকে দীর্ঘসময় বাসায় বসিয়ে খাওয়াতে পারবে। প্রবাদ আছে, বসে খেলে একসময় রাজার গোলাও ফুরিয়ে যায়।

মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা- স্বাধীনচেতা। মানুষ কাজ করে, ঘুরেফিরে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। মানুষ ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করবে জীবিকার তাগিদে। আর রাষ্ট্রযন্ত্র বল প্রয়োগ করবে বাসায় ডুকাতে। হয়তোবা রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে জারি হবে জরুরি অবস্থা। যখন রাষ্ট্রীয় কোষাগারও খালি হয়ে যাবে তখন সরকার প্রধানরাও হাত পা গুটিয়ে বসে পড়বে। না খেয়ে, রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে মানুষ।

হয়তো থাকবে না কোন দেশ। কেউ বলবে না, এটা আমার দেশ, ওটা তোমার দেশ। এটা ধনীর দেশ, ওটা গরিবের দেশ। এটা এই ধর্মের দেশ, ওটা ওই ধর্মের দেশ। হয়তোবা কিছু প্রাণী টিকে যাবে নতুন কোন সভ্যতা সৃষ্টির আশায়। এ সবই আমার কল্পনা।

আমি চাই, কল্পনাটা যেনো কল্পনাতেই থাকে। মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছি। স্বাভাবিক মৃত্যু চাই। আর চাই আগামী প্রজন্ম ভালো থাকুক। এখনি সময়- প্রকৃতির কাছে ফেরার, শৃঙ্খল জীবনযাপন করার। বৃক্ষেরোপণের টাকা বৃক্ষরোপণেই খরচ করুন। নদী খননের টাকা নদী খননেই খরচ করুন। শিল্প কারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করুন। প্রাকৃতিক সার দিয়ে কৃষিকাজ করুন। ভেতরের লোভ নামক রোগটাকে নিয়ন্ত্রণ করুন। বেশি লাভের আশায় কৃষিপণ্যে বিষ দেয়া বন্ধ করুন।

শিল্প বিপ্লব চাই
তবে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে।
অবশ্যই কৃষি বিপ্লব চাই
রাসায়নিক না ব্যবহার করে।
প্রকৃতিকে ভালোবাসুন
প্রকৃতি আপনাকে ভালোবাসবে।
সৃষ্টির ভালোতে
সৃষ্টিকর্তাও আপনাকে ভালোবাসবে।

অন্যথায় হয়তোবা আমার কল্পনাই সত্যি হয়ে যাবে! যদিও আমি চাই আমার কল্পনা মিথ্যে হোক। আমরা অভিশপ্ত কিংবা বিলুপ্ত সম্প্রদায়ের অংশ হতে চাই না! আর যদি করোনা যুদ্ধে টিকে যাই তাহলে করোনা সময় থেকে শিক্ষা নিতে হবে। নিজেদের পাল্টাতে হবে। নব দুনিয়ার জন্য পরিশুদ্ধ মানুষ হয়ে উঠতে হবে। শুদ্ধ সভ্যতায় আপনাকে স্বাগতম…

লেখক : মো. জামাল হোসেন
সম্পাদক
দৈনিক আনন্দবাজার

সংবাদটি শেয়ার করুন