ঢাকা | রবিবার
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বাধীন বাংলাদেশে ৭ নভেম্বর একটি কলঙ্কিত অধ্যায়

ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর আজ। ৭ নভেম্বর ঘিরে রয়েছে নানা ঘটনা, জড়িয়ে আছে রক্তপাতের ইতিহাস। মূলত ৩ নভেম্বরের জেলহত্যা ছিল  ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানানোর যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল একই লক্ষ্যে ৭ নভেম্বরে আরও একটি কালো ইতিহাস তৈরি হয়। এই কালো দিনে কাউকে ঝুলতে হয়েছে ফাঁসিতে, নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে অনেক সৈনিককে। জাতির পিতার পুরো পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যার মাত্র ৭৮ দিন পর সেই অশুভ শক্তিই ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করে জাতীয় ৪ নেতাকে। এসব ঘটনাকে কন্দ্রে করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে ঢাকা সেনানিবাস। এই প্রেক্ষাপটে ৩ থেকে ৭ নভেম্বর সামরিক বাহিনীর মাঝে অভ্যূত্থান ও পাল্টা অভ্যূত্থান ঘটে। এক অবস্থায় গৃহবন্দী হয় জিয়াউর রহমান। এইসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা কর্মকর্তার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। সেদিন বিপ্লবের নামে প্রথমে হত্যাকান্ডের শিকার হন তিন খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধা- খালেদ মোশররফ বীর উত্তম, কে এন হুদা বীর উত্তম এবং এটিএম হায়দার বীর বিক্রম। এই ঘটনার নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল (অব.) আবু তাহের বীরউত্তম। বন্দীদশা থেকে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেন তিনি। মুক্ত হয়ে জিয়াউর রহমান প্রথমে উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ দখল করেন। একপর্যায়ে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বিচারপতি  আবু সাদাত মোহাম্মদ আবু সায়েমকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি হন জিয়া। জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা পাকাপোক্ত হওয়ার পর দেশদ্রোহের অভিযোগে কোর্ট মার্শালের বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় কর্ণেল তাহেরকে।

১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে সদ্য ষ¦াধীন হওয়া বাংলাদেশ নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে। কেউ জাতির পিতাকে আপনার বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বললেও তিনি কখনোই বিশ^াস করেননি যে এই দেশের মানুষ তাঁকে হত্যা করতে পারে! কিন্তু উচ্চ অভিলাষী বিশৃংখল সেনাবাহিনী সদ্য জন্ম নেওয়া দেশের জন্মদাতা রাষ্ট্রপতিকে মেরে ফেললো। একটা জিনিস সূক্ষভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বর সবগুলো রক্তাক্ত ঘটনা কিন্তু সেনাবাহিনী কতৃক ঘটেছিল। সেনাবাহিনী পেশাদারিত্ব থেকে রাজনৈতিক অভিলাষী হয়ে উঠে বিশেষ করে ১৫ আগস্টের পর থেকে। বস্তুত ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের পর নিজেদের মধ্যে রাজনীতি, বিশৃংখলা ও চেইন অব কমান্ডের অভাব তরান্বিত হয় এবং ৭ নভেম্বর সেনাবাহিনী নিজেদের মধ্যে অন্তর্কলহে জড়িয়ে পড়ে।

১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল অবধি দেখা যায় ক্ষমতা অভিলাষী সেনাবাহিনী রাজনৈতিক দল গঠন করে কিন্তু সেনানিবাসে কোন রাজনৈতিক দলের জন্ম হতে পারে না। আর এই কাজটি করতে গিয়ে কালো চশমার রহস্যময় চরিত্র জিয়াউর রহমান ও জেনারেল এরশাদ যেমন সেনা আইন লঙ্ঘন করেছিলেন তেমনি সংবিধানও লঙ্ঘন করেছিলেন। ৭ নভেম্বরের ঘটনায় লাভবান হয়েছেন জিয়াউর রহমান ও উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আর পরাজিত হয়েছিল বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

স্বাধীন বাংলাদেশে রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের ধারাবাহিকতায় ৭ নভেম্বর দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করা হয়েছে। এইদিন স্বাধীন বাংলাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যার কলঙ্কিত ষড়যন্ত্রের দিন, বিশ্বাসঘাতকতার দিন যার খলনায়ক জিয়াউর রহমান।

ফৌজিয়া নিজাম তামান্না, শিক্ষক ও গবেষক

সংবাদটি শেয়ার করুন