ঢাকা | বুধবার
১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অধ্যাপক আবু সাইদের জন্য…

আদর্শ বদল করতে সময় লাগে খুবই কম সময়। পাবনার কয়েকজন নেতার কথা বলা যায়। তারা হলেন আওয়ামী লীগ থেকে ডেইজি আজিজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল তারা নানা সময়ে রাজনৈতিক আদর্শচ্যুত হয় এবং কখনো কখনো লোভে মন্ত্রী হওয়ার প্রলোভনে আবার কখনো শাসক দলের ভয়ে আদর্শচ্যুত হয়ে। পরে সমাজে তাদের বেশির ভাগ নেতাই নিন্দিত হয়। আগে আওয়ামী লীগ থেকে লোভ লালসায় যারা অন্য দলে গেছেন তাদের ভাগ্যও নিয়ে গেছেন। ভাগ্য কোথায় নিয়ে গেছেন এদেশের মানুষ তা ভালো করেই জানে। বাংলাদেশের মানুষ জানে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তি ড. কামাল হোসেনের কথাও। তিনি রাষ্ট্রের জন্য রাষ্ট্র সংবিধানের জন্য এবং এই দেশের জনগণের জন্য তা ইতিহাস হলেও আজ তার রাজনৈতিক অবস্থান তাকে আস্তাকুড়ে ফেলেছে।

নিজের দল করে এ পর্যন্ত রাষ্ট্রের এবং জনগণের কি করেছেন তিনি। রাজনৈতিকভাবে পেয়েছেন নিজের দল ভাঙা এবং দলের লোক দ্বারা নিন্দিত হওয়া। এরও আগে আওয়ামী লীগ থেকে মিজানুর রহমান চৌধুরী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে চলে যায় পরে মন্ত্রী হন। আবার তিনি আওয়ামী লীগে ফিরে ছিলেন। কোরবান আলী সাহেব বঙ্গবন্ধু আদরের মানুষ সে এক সময় কুরবানি হয়ে ঈদের আগে এরশাদ সাহেবর মন্ত্রী হলেন। তারপর সরদার আমজাদ হোসেন, শাহ মোহাম্মদ আবু জাফররাও এরশাদের মন্ত্রী ছিলেন। তারা আবার দল ত্যাগ করে কেউ বিএনপিতে কেউ আওয়ামী লীগে। পাবনার কথা বলছিলাম ছাত্র নেতা মোহাম্মদ হাবিব বঙ্গবন্ধুর আদর্শচ্যুত হয়ে বিএনপিতে যোগদান করলেন। প্রায়ই তাকে প্রিন্ট মিডিয়ায় দেখা যায়। কথাবার্তা শুনে তাকে দল ত্যাগি এবং খারাপ মানুষ বলে বিশেষায়িত করে। সে আওয়ামী লীগ হোক আর বিএনপি হোক একই ভাষায় কথা বলে।

ওয়ান ইলেভেনের আগে একজন পাবনার ত্যাগি নেতা আওয়ামী লীগের জন্য অনেক লাঞ্ছনা গঞ্জনার শিকার হয়েছেন। তিনি হলেন অধ্যাপক আবু সাইদ। তার সাথে আমার আলাপ হয় ১৯৬৯ সালে। তার কর্ম দক্ষতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অজস্র শ্রদ্ধা এবং দলের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তার তুলনা করা ভার। কারও কারও প্ররোচনায় হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ থেকে দলচ্যুত হয়ে ড. কামালের দলে গেলেন। কামাল সাহেব তখন বিএনপির আপনজন। সে তার দলের প্রতীক ছেড়ে ধানের শীষেে পক্ষে। কামাল সাহেবের নেতৃত্বে ২০১৮ সালে নির্বাচন হয়। তার দলকে বাদ দিয়ে সে ভাড়াটিয়া হয়ে বিএনপির কাজ করেন। এটা সব মানুষই তাকে নিন্দা জানিয়েছেন। অধ্যাপক আবু সাইদের অনেক লেখা পত্র-পত্রিকায় লেখেন। সাধারণ মানুষ কিছু কিছু বুদ্ধিজীবীরা তার জন্য আফসোস করে। তার সাথের লোকজন এবং বিএনপির লোকজন ও তার জন্য আফসোস করে থাকে। এই সময় সে না পায় আওয়ামী লীগের ভোট আর না পায় বিএনপির ভোট। পাবনার একসময়কার বলিষ্ঠ নেতা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। শুধু রাজনীতি করে জীবন চালান। তার কোনো ব্যবসা বাণিজ্য নেই। এটা সবাই জানে। তার সৎ রাজনীতির কারণে সব মানুষের অন্তরে আছেন।

আমি ৬৯ সালে কাজির হাট হাই স্কুল থেকে বঙ্গবন্ধুর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবাদ করেছিলাম। আইউব খান, মোনায়েম খানের বিরুদ্ধে ১৪ ফেব্রুয়ারি বধ্যপাড়ায় হরতাল করেছিলাম। মাসুমদিয়া ইউপি, রূপপুর ইউপি, সাগরকান্দি ইউপি বাজার বন্ধ করে দিয়ে হরতাল সাকসেসফুল করি।ওইদিন রাতেই পাবনা থেকে পুলিশ সুপার বেড়া থানার প্রায় শতেকখানেক পুলিশ এসে আমাকে এরেস্ট করে নিয়ে যায়। ওই সময় অধ্যাপক আবু সাইদ মিটিং করে বলেছিলেন তাকে মুক্তি দিতে হবে। তখনকার দিনের বিডি মেম্বর চেয়ারম্যান এবং তখনকার দিনের রিয়াজুদ্দিন এমপি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ায় অধ্যাপক আবু সাইদ মিটিং-এ বলেছিলেন তার কর্মী হিসেবে দলীল উদ্দিন দুলাল সারা পূর্ব পাকিস্তানে বধ্যপাড়া গায়ে শেখ সাহেবের জন্য জেলে গেছে।

আমি যেখানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছি তারা সবাই দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন। আমি মনে করি, অধ্যাপক আবু সাইদকে আওয়ামী লীগ থেকে বাদ দেওয়া ঠিক হয়নি। বেড়ার বিচক্ষণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বলিষ্ঠ সাংগঠনিক কার্যকলাপ শত্রুমিত্র কোনো মানুষই ভুলতে পারে না। মানুষ তার সব সময়ই সহানুভূতি কামনা করে। কিন্তু অধ্যাপক আবু সাইদ সাব তারপরও আফসোস করে বলেন তিনি কি করে কামাল হোসেনের দলে গেলেন। তিনি আওয়ামী লীগের নৌকায় নেই তাতে কি হয়েছে। অধ্যাপক আবু সাইদ, আবু সাইদই. আজ তার অনুসারীরা চোখ দিয়ে পানি ফেলে তার জন্য। এখনও ভাবি, আবু সাইদ আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে কি জন্য অন্য দলের সাথে সম্পৃক্ত হলেন?


লেখক : সাবেক ব্যাংকার

সংবাদটি শেয়ার করুন