ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে একুশে পদকে ভূষিত করা হোক

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে একুশে-স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হোক

পৃথিবীর সাড়ে সাতশ কোটি মানুষের একেকজন একেক কাজে পারদর্শী। বিখ্যাত-প্রখ্যাত। কেউ আবার কুখ্যাত হয়ে আছেন ইতিহাসে। আমরা বিখ্যাত আর প্রখ্যাত মানুষগুলো নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা-পর্যালোচনা করে থাকি। এসব মানুষগুলো সমাজ-দেশের কল্যাণে প্রচুর কাজ করেন। কোন ধরনের বিনিময়ের আশা না রেখেই। তেমনি একজন ব্যক্তিত্ব ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে আমার পরিচয় ২০১৭ সালের শেষের দিকে গণস্বাস্থ্যের ঢাকার সাভারে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্মেলনে। বন্ধুবর এনায়েতুল্লাহ কৌশিকের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছিলাম।

পরবর্তীতে বন্ধুবর (বর্তমানে সময়ের আলোর সাংবাদিক) সাব্বির আহমেদের সহযোগিতায় আমরা ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর গণস্বাস্থ্যের নগরকেন্দ্রে নির্বাচনী ইশতিহার বাস্তবায়নে মনিটরিং সেল গঠনের প্রস্তাবটি তার হাতে তুলে দিয়েছিলাম যেহেতু তিনি ঐক্য ফ্রান্টের ইশতিহার প্রণয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন। আমাদের প্রস্তাবটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরলে তিনি তাতে সম্মতি দিয়ে আরো কিছু বিষয় যুক্ত করার পরামর্শ দেন। সেগুলো আমরা যুক্ত করি। এটি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতিহার প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. আব্দুর রাজ্জাক (বর্তমান কৃষিমন্ত্রী) ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও পাঠানো হয়। তা ছাড়া সরাসরি স্বাক্ষাৎ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককেও দেয়া হয়। সবাই বিষয়টি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন এবং এর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন। ২৩ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করে এটি প্রস্তাব করা হলে দেশের প্রধান প্রধান গণমাধ্যমগুলো বিশেষ গুরুত্ব সহকারে (রিভার্স, বক্স, ৩ কলাম) প্রকাশ করেন। তা ছাড়া চলতি বছরের ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় বাজেট পর্যালোচনা শীর্ষক মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটসের ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন (১৫ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে যেদিন বাসায় ফিরেন সে দিনই)।

যাইহোক আমার আজকের লেখার বিষয় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেবকে নিয়ে। তিনি ২৭ ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে চট্টগ্রামের রাউজানে জন্মগ্রহণ করেন।

একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্যবিদ, সক্রিয়তাবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামক স্বাস্থ্য বিষয়ক এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশের ‘জাতীয় ঔষধ নীতি’ ঘোষণার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তার সবচেয়ে ত্যাগ হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাজ্যে রয়্যাল কলেজ অব সার্জনসে এফআরসিএস পড়াকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না (৪ মাস পর ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়ে) করে লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে আসেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে। আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন এবং এরপরে ডা. এম এ মবিনের সাথে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট “বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল” প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। তিনি সেই স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান দান করেন যা দিয়ে তারা রোগীদের সেবা করতেন এবং তার এই অভূতপূর্ব সেবাপদ্ধতি পরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার “ল্যানসেট”-এ প্রকাশিত হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া (১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২-৯ মে ২০০৯)কে নিজ প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেন। আর তাতে শর্তজুড়ে দেন ধুমপান মুক্ত হতে। চলতি বছরের ২৫ জুন পদ্মাসেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ হেলিকপ্টার পাঠান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অনুরোধ থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যেক রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীকে তিনি দেশের কল্যাণে কাজ করেছেন, নানাবিধ বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়েছেন। বিনিময়ে কারো কাছ থেকে সামান্যতম কোন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেননি। (যদিও তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের বলয়ের বিপরীত রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে স্বক্রীয়ভাবে অংশ নেন-আমি তার এসব কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে।) তবে তিনি দেশের কল্যাণে যেসব কাজ করেছেন, করছেন ও করতে পরামর্শ দিচ্ছেন সেসব কাজের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে একুশে পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাব রাখছি রাষ্ট্রের কাছে।
গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র যে স্বাস্থ্যখাতে গণবিপ্লব করেছে সেটি আমরা অনেকটা জানিই না। অনেকের হয়তো মনে থাকার কথা এক সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে ডায়রিয়া হতে ভালো হওয়ার জন্য খাবার সেলাইন তৈরির একটি পদ্ধতি দেখানো হতো। তা হচ্ছে এক মুঠো গুড়/লাল চিনি আর তিন আঙুলে এক চিমটি লবণ। এটি ব্র্যাক দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়। সেই পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেছিল গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র। তা ছাড়া দেশের সবচেয়ে কম খরচে চিকিৎসা দেয়া, ওষুধ তৈরি ও বিক্রয়ে গণস্বাস্থ্যই দেশে এখন পর্যন্ত দিকপাল।

মানুষের কথা-কাজ-আচরণে কিছু প্রশ্নবোধক থাকাটাই স্বাভাবিক। সেসব বিষয়ের চেয়ের মহৎকাজগুলোকে মূল্যায়ন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ৮১তম জন্মদিনের তার সুস্বাস্থ্য ও সৎকাজ অব্যাহত থাকুক তা প্রত্যাশা করছি। একইসঙ্গে আমাদের ডাকে সাড়া দেয়ায় কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন