খ্রিস্টানদের মহান যীশু যিনি ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নবী হযরত ঈসা (আঃ) নামে পরিচিত। খ্রিস্টানরা নবী যীশুকে খোদার পুত্র মনে করে। কিন্তু মুসলমানরা সেটি অস্বীকার করে।
কারণ পবিত্র কোরানের বর্ণনা অনুযায়ী হযরত ঈসা খোদার নবী হিসেবে তাওহিদ বা একত্ববাদের একজন প্রচারক ছিলেন মাত্র। প্রথম নবী হযরত আদম থেকে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত সকল নবীর মতোই তিনি একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন। পেশায় যিনি ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি।
তবে ঈসা নবী জন্ম বৈশিষ্টের কারণে সকল মানুষের চেয়ে আলাদা ছিলেন। পবিত্র বাইবেল ও কোরানের মতে, তিনি পিতা ছাড়া একজন মহীয়সী নারীর গর্ভে জন্মেছিলেন। সে কারণে হযরত ঈসা এবং তার মা মরিয়ম বা মেরিকে ইসলামে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। যীশু নবীর মায়ের নামে পবিত্র কোরানে একটি সুরা নাজিল হয়েছে।
হযরত ঈসার জন্ম যে পিতা ছাড়া হয়েছিল এ কথা পশ্চিমের বিজ্ঞানীরাও স্বীকার করছেন। তারা বলছেন, পিতা ছাড়া বিশেষ সায়েন্টেফিক কারণে নারীগর্ভ সন্তান ধারণ করতে পারে। তবে ইহুদি সম্প্রদায় হযরত ঈসার পিতা ছাড়া জন্ম বিশ্বাস করে না। কারণ তারা ইসলামের আরেক শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুসা (আঃ) এর পর কোনো নবীকেই স্বীকার করে না।
যেমনটা স্বীকার করে না খ্রিস্টানরা। তারা যীশু নবীর পর আসা ইসলামের শেষ নবী হিসেবে পরিচিত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে স্বীকার করে না।
হযরত ঈসা বা যীশু (আঃ) কে নিয়ে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের মত পার্থক্যের আরেকটি বড় জায়গা হলো তার অন্তর্ধান। খ্রিস্টানরা মনে করে, রাজা হেরোডের আদেশে ক্রুশবিদ্ধ নবী ঈসা মৃত্যুবরণ করেছেন। খোদার পুত্র কীভাবে মরতে পারেন-এর পক্ষে রোমান ক্যাথলিক চার্চের ব্যাখা হলো-তিনি পৃথিবীর সমস্ত পাপ বুকে নিয়ে খোদার কাছে ফিরে গেছেন।
অন্যদিকে মুসলমানদের বিশ্বাস হযরত যীশু মারা যাননি। হেরোদের কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে আসমানে তুলে নিয়েছেন খোদা। ঈসার জায়গায় তার যে সহচর তাকে ধরিয়ে দিয়েছিল তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে মারা হয়েছে। কারণ খোদার ইচ্ছায় ঈসার মতো চেহারা হয়েছিল সেই ব্যক্তির। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা নেই কোরানে।
হযরত ঈসাকে নিয়ে খ্রিস্টান-মুসলমানের অনেক মত পার্থক্যের মধ্যে কিছু মিলও রয়েছে। যেমন দুই সম্প্রাদায়ই বিশ্বাস করে তিনি আবারো পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস হযরত ঈসা প্রত্যাবর্তন করে জেরুজালেম থেকে গ্রেট খ্রিস্টান সাম্রাজ্য গড়ে তুলবেন। তার আগে তিনি ইহুদিদের মসীহ যিনি ইসলামে দজ্জাল বা নিষ্ঠুর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত তাকে হত্যা করবেন।
সে কারণে খ্রিস্টানদের ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করছে বলে ধারনা করা হয়। যদিও এর প্রামাণিক ভিত্তি নেই। ইসরায়েল ফাউন্ডেশন হলে তা শক্তিশালী করতে দাজ্জাল পৃথিবীতে আসবে। আর তিনি এলেই মহান যীশুও চলে আসবেন এবং তাকে কতল করে ক্রিশ্চান সাম্রাজ্য বানাবেন।
তবে মুসলমানদের বিশ্বাস যিশু আসবেন ইহুদিদের দাজ্জালকে কতল করবেন এবং ইসলামিক পৃথিবী গঠন করবেন। অন্যদিকে ইহুদিদের বিশ্বাস দাজ্জাল এসে জেরুজালেমকে রাজধানী করে আরবে ইহুদি সাম্রাজ্য গড়ে তুলবেন। যার নাম দেয়া হয়েছে ডিভাইন স্টেট। তার সাম্রাজ্য হবে নবী সুলাইমান (আঃ) বা রাজা সুলেমানের রাজ্যের সমান। উল্লেখ্য নবী সুলাইমান রাজ্য পরিচালনার জন্য বাতাসে ভর করে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ভ্রমণ করতেন বলে কোরান ও বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে।
অবশ্য দাজ্জালের সাম্রাজ্য যে নবী সুলায়মানের সাম্রাজ্যের সমান হবে এ বিষয়ে কোরানেও ইঙ্গিত রয়েছে। কোরান বলছে, দাজ্জাল এক বছরে পৃথিবীর সব মানুষের কাছে যাবেন। পরিশেষে ঈসা নবীর হাতে মারা যাবেন।
মোর্দা কথা, ধর্মের এসব ব্যাখ্যা আমাদের ভারতবর্ষ বা পৃথিবীর পূর্বাঞ্চলে তেমন আবেদন নেই। তবে ইউরোপ-এমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে যথেষ্ঠ গুরত্বের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের সিনেমা, উপন্যাস, দর্শন, ডকুমেন্টারি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাতে কোরান-বাইবেলের ব্যাখ্যা নিয়ে প্রচুর কাজ হয়। কিন্তু আমাদের অঞ্চলে এসব মৌলবাদের বীজ হিসেবে দেখা হয়। হতে পারে এই বিজ্ঞান বিমুখতাই আমাদের পশ্চিমমুখী করে রেখেছে।
ঈসা বা যীশু নবীর ২০২৩ তম জন্মদিনের (বড়দিন) শুভেচ্ছা।