বিয়ের দুই বছর পর চাকরীজীবি দম্পতির কোল আলোকিত করে জন্ম নিলো এক ফুটফুটে কন্যা। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ায় দারুণ খুশি দম্পতি। নাম রাখলেন পারু। দেখতে দেখতে পারু বড় হয়ে উঠে। স্কুলে ভর্তি হয়। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা পারুর গাল টিপে আদর করেন। ক্লাসের অন্য ছাত্রী থেকে পারু দেখতে বেশি সুন্দর। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় পারু লক্ষ্য করে বাসায় অনেক আত্মীয়স্বজন কিংবা পরিচিত কেউ এলে পারুকে ঘনিষ্ঠভাবে আদর করে যা পারুর পছন্দ নয়। সে বুঝে না উঠার কারণে পরিবারের কাউকে বলতে পারি নি। কিছুদিন পরে বুঝলেও মা বাবাকে বলতে সাহস পায় নি।
ফাইভ পাস করে পারু হাইস্কুলে ভর্তি হলো। বড় হওয়ার সাথে সাথে পারুর শারীরিক গঠনও পরিবর্তন হতে শুরু করলো। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পারু খেয়াল করলো স্কুলে যাওয়া আসার সময় কিছু বখাটে টাইপ ছেলে তাকে কিছু বলতে চায়। তারা বিভিন্ন সময় পারুকে ইশারা করে নিজেদের মধ্যে কথা বলে। পারু প্রথমে কিছু না বললেও এক সময় ক্লাসের শিক্ষককে একথা জানায়। শিক্ষক পারুকে সতর্কতার সাথে চলাফেরার পরামর্শ দেন।
একদিন পারু স্কুলে আসার পথে কয়েকটি ছেলে পারুকে ঘিরে ধরে। এর মধ্যে একটি ছেলে পারুকে ভালোবাসা নিবেদন করে। তার সাথে সম্পর্কে আসার প্রস্তাব দেয়। পারু প্রস্তাবে রাজি না হয়ে চলে আসে। প্রথমদিন ছেলেরা কিছু না বললেও কিছুদিন পর ছেলে পারুকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করে। রাস্তা আটকিয়ে কথা বলতে শুরু করে এবং সম্পর্কে না জড়ালে পারুর ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেয়। পারু সেদিন স্কুলে না গিয়ে বাড়িতে ফিরে এসে মা-বাবাকে ঘটনা জানায়।
পরদিন মা মেয়ে কে নিয়ে স্কুলে বিচার দেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বখাটেদের স্কুলে ডেকে কড়া শাসন করেন পরবর্তীতে পারুর সাথে ইভটিজিং করলে পুলিশে দিবেন বলে হুমকি দেন। এরপর আর ছেলেরা পারুকে বিরক্ত করে নি। পারুরও স্কুলের গণ্ডি শেষ হয়। পারু এখন দেখতে অনেক বড় এবং সুন্দর। নতুন এন্ড্রয়েড মোবাইল কেনার মধ্য দিয়ে শুরু কলেজ জীবন। সাথের বন্ধু-বান্ধবের হাতে অনেক দামি মোবাইল। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের বিশাল ফ্যান ফলোয়ার। এই রকম গল্প শুনতে শুনতে সেও একটি ফেইসবুক একাউন্ট খুলে। বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতদের রিকুয়েস্ট পাঠায়। ফেইসবুকে নিজের ছবি পোস্ট করার পরই ব্যাপক সাড়া পায়। অপরিচিতদের রিকুয়েস্ট আসতে থাকে।
কিছুদিন পর পারু লক্ষ্য করলো কিছু আউডি থেকে তাকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করে যাচ্ছে। কমেন্ট বক্সেও অশ্লীল কমেন্ট করছে। অনেকে ইনবক্সে বিভিন্ন খারাপ অফার করে এবং এডাল্ট ছবি পাঠায়। কিছুদিন পর সে দেখলো তার নাম এবং ছবি ব্যবহার করে একাধিক ফেইসবুক একাউন্ট খোলা হয়েছে। এই আইডিগুলো থেকে পরিচিতদের সাথে অশ্লীল কথাবার্তা বলছে। একপর্যায়ে এই ম্যাসেজগুলোর স্ক্রিনশট তার কাছেও আসে। যাদের সাথে কথাবার্তা হয়েছে তারে মনে করেছিলো এটা পারুরই আইডি। পরবর্তীতে কিছু স্ক্রিনশট নিয়ে পারুকে কয়েকজন ব্লেকমেইল করতে শুরু করে।
এক পর্যায়ে পারু আইডি ডিএক্টিব করে পড়াশুনোয় মন দেয়। কিন্তু এখানেও ঝামেলা। পারু কিছুদিন যাবত খেয়াল করে দেখলো একটি ছেলে ক্লাস চলাকালীন অবস্থায় বিভিন্ন সময় পারুকে দেখার চেষ্টা করছে। কিছুদিন যাবার পর পারুও ছেলেটার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছিলো। একসময় ছেলেটা পারু প্রেমের প্রস্তাব দিলে পারু রাজি হয়। মাস দুয়েক সম্পর্ক ভালোভাবেই চলছিলো। এরপর ছেলেটার আচরণে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেলো। ছেলেটা পারুকে পার্কে কিংবা রেস্টুরেন্টে দেখা করতে বললো। পারুও কিছু না বলে রাজি হলো।
একটা তারিখ নির্ধারণ করে পারু পার্কে দেখা করতে গেলো। পার্কে গিয়ে তো পারুর মাথা ঘুরে গেলো। পার্কে কি হচ্ছে এসব। সে ছেলেকে ডেকে বলে, আমি এখানে থাকতে পারবো না। তুমি অন্যখানে চলো। ছেলেটা পারুকে অনেকক্ষণ বুঝিয়ে পার্কে রাখলো। তারা পার্কে ঘনিষ্ঠভাবে সময় কাটালো। ছেলেটা পারুর শরীরের বিভিন্ন জায়গা স্পর্শ করলো যদিও পারু বাধা দিচ্ছিলো। পারু বিরক্ত হয়ে বাড়িতে চলে এলো।
কিছুদিন পর ছেলেটা আবার পারুকে দেখা করতে বললো। এবার পারু কৌশলে এড়িয়ে যেতে চাইলো। ছেলেটা সেদিন পার্কে পারুর অজান্তে একান্ত মুহূর্তের কিছু ছবি তুলে রেখেছিলো সেই ছবি এবার পারুকে দেখালো এবং যদি ছেলেটার কথা না শোনে তাহলে ছবিগুলো অনলাইনে ভাইরাল করে দেবে। পারু অন্য কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে দেখা করলো। দেখা করার কিছুদিন পর ছেলেটা পারুকে তার রুমে ডাকলো। কিন্তু পারু এবার ছেলেটাকে বিভিন্ন কথাবার্তা বললো এবং তার সাথে সম্পর্কে ইতি টানার কথা জানালো।
ছেলেটা প্রথমে ভয়ভীতি দেখালেও পারু আইনের আশ্রয় নেবে জানালে ছেলেটা কিছুটা ভয় পেয়ে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এদিকে ততদিনে পারুর কলেজ এবং ভার্সিটিলাইফ শেষ হয়। পারুর জন্য মা-বাবা বর দেখা শুরু করলেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে বিভিন্ন কারণে কথা পাকাপাকি হয় না। একবার এক ঈদে পারু শপিংমলে গেলো ঈদের কেনাকাটা করতে। শপিংমলে যাওয়ার সময় কয়েকজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ পারুর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। পারু কিছু না বুঝার ভান করে এগিয়ে যেতে লাগলো। সামনে ঈদ থাকায় মার্কেটে প্রচুর ভিড় ছিলো। পারু খেয়াল করলো কিছু পুরুষ আসা-যাওয়ার সময় তারা ইচ্ছাকৃতভাবে পারুর শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করছে।
ভিড় ঠেলে শপিং শেষ করে পারু বাড়ি ফিরছিলো। গাড়িতে পারুর পাশে একজন বয়স্ক পুরুষ বসলেন। হয়তো পারুর বাবার বয়সী হবেন। পারু নিজেকে নিরাপদ মনে করলো। গাড়ি ছাড়তেই বয়স্ক লোকটি জানালা খুলতে গিয়ে পারুর শরীরে ধাক্কা খেলো। পারু বুঝে গেলো তার সাথে কী ঘটছে। আরেকবার গাড়ি কাদার মধ্যে পড়তেই বয়স্ক লোক টি আবার পারুর শরীরের সাথে ধাক্কা খেলো। পারু এবার দাড়িয়ে প্রতিবাদ শুরু করলো। বয়স্ক লোক এখন এসব অস্বীকার করছে। পারু একাই চিল্লাচিল্লি করে যাচ্ছে। আশেপাশের কেউই পারুকে সহায়তা কিংবা সান্ত্বনাও দিচ্ছে না। এক পর্যায়ে পারু সিট পরিবর্তন করে বাড়ি ফিরে মাকে এসব জানালো। মাকে জানাতেই মায়ের কড়া শাসন আজে থেকে বাইরে যাওয়া বন্ধ। (বাস্তবতার ভিত্তিতে গল্প। চরিত্র কাল্পনিক)
লেখক: সংবাদকর্মী
আনন্দবাজার/শহক