ঢাকা | শুক্রবার
২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাঁচশ বছরের ‘লাল টিলা মসজিদ’

হবিগঞ্জের যে কয়েকটি ঐতিহ্যবাহি স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম নিদর্শন হল সদর উপজেলার রাজিউড়ার উচাইল শংকরপাশা শাহী মসজিদ

ইতিহাস-ঐতিহ্য

  • সুলতানি আমলের মসজিদটি সংস্কারে নানা উদ্যোগ

হবিগঞ্জের যে কয়েকটি ঐতিহ্যবাহি স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম নিদর্শন হল সদর উপজেলার রাজিউড়ার উচাইল শংকরপাশা শাহী মসজিদ। স্থানীয়ারা এটিকে গায়েবি মসজিদ ও লাল টিলা মসজিদ বলেও ডাকেন। সুলতানি আমলে উচাইল গ্রামে প্রায় ৬ একর জমির ওপর এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে মসজিদটি এখন কালের সাক্ষী।

অত্যন্ত চমৎকার মসজিদটির কারুকাজ আর নির্মাণশৈলী। উন্নতমানের প্রলেপহীন পোড়া ইটকেটে সেঁটে দেওয়া হয়েছে ইমারতে। দেয়ালের বাইরের অংশে পোড়াইটের ওপর বিভিন্ন নকশা এবং অলঙ্করণ সহজেই মুসল্লি ও দর্শনার্থীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মসজিদটি লাল বা রক্তিম বলে অনেকে ‘লাল মসজিদ’ বলে থাকেন। আবার টিলার ওপরে বলে ‘টিলা মসজিদ’ও বলা হয়। দু’টি মিলিয়ে ‘লালটিলা মসজিদ’ও বলা হয়।

জানা যায়, ১৫১৩ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন শাহ মজলিশ আমিন (রা.)। পরবর্তীতে মসজিদের সুদৃশ্য ইমারত বা ভবন নির্মাণ করা হয় সুলতান আলাউদ্দিন হোসাইন শাহের আমলে। ইমারতটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ একই মাপের (২১ ফুট ৬ ইঞ্চি)। বারান্দা ৩ ফুটের সামান্য বেশি। একে অনেক সময় চার গম্বুজ মসজিদও বলা হয়। কেননা মূল বা আসল ভবনের ওপর একটি বড় বা বিশাল গম্বুজ এবং বারান্দার ওপর দেখতে পাওয়া যায় তিনটি ছোট গম্বুজ। দরজা-জানালা আছে প্রায় ১৫টি। দরজা ও জানালা প্রায় একই আকৃতির।

সবদিকের দেয়ালের পুরুত্বই বেশি। তিনদিকের পুরুত্ব প্রায় ৫ ফুট। পশ্চিম দিকের দেয়ালের পুরুত্ব এর প্রায় দ্বিগুণ বা প্রায় ১০ ফুট। মোট ৬টি কারুকার্য শোভিত স্তম্ভ আছে প্রধান কক্ষের চারকোণে ও বারান্দার দুইকোণে। উপরের ছাদ আর প্রধান প্রাচীরের কার্নিশ নির্মাণ করা হয়েছে বাঁকানোভাবে। মসজিদের দক্ষিণ পাশে রয়েছে বড় দীঘি। এটি মসজিদটির সৌন্দর্য যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ধর্মীয় বিশেষ দিনগুলোতে এখানে বেশি ভিড় হয়। তবে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ৫শ’ বছরের পুরোনো মসজিদটি ক্রমেই ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রাচীন মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। তবে এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা।

রাজিউড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বদরুল করিম দুলাল জানান, মসজিদটি অনেক পুরনো। এটি প্রায় ৫শ’ বছরের ঐতিহ্য বহন করে। ইতিমধ্যে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের লোকজন মসজিদটি পরিদর্শন করেছেন। মসজিদটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হলে এখানে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা মসজিদটি পরিদর্শনে আসলে অর্থনৈতিক ভাবেও লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহি কর্মকতা বর্ণালী পাল বলেন, মসজিদটি সংস্কারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বরাদ্দের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওযুখানা নির্মাণসহ বিভিন্ন সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন