নেত্রকোণায় এক শ্রেণির অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র বিশেষ করে লোকালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকা ও ফসলি জমিতে অবৈধ ভাবে গড়ে তুলছে ইট ভাটা। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় তারা সরকারি অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই এসব ভাটা স্থাপন করেছেন। এসব ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, গ্যাস ও ধুলায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। হারিয়ে যেতে বসেছে জীব-বৈচিত্র্য। বিনষ্ট হচ্ছে আমাদের চির চেনা প্রকৃতি ও পরিবেশ।
২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে সংশোধনী এনে ইট ভাটার জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক, নির্দিষ্ট এলাকায় ইট ভাটার জায়গা ও ভাটার সংখ্যা নির্ধারণ, লাইসেন্সবিহীন ইট ভাটা চালালে দুই বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান সংযোজন করে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধন আইন, ২০১৯’ বিল সংসদে পাস হয়েছে। ধারা-৪ এ সংশোধন এনে প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে, ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ইট ভাটা যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার জেলা প্রশাসকের নিকট ইইতে লাইসেন্স গ্রহণ ছাড়া, কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করিতে পারিবে না’।
সূত্রমতে, নেত্রকোণা জেলায় অন্তত ৬০টি ইট ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ২৪টি ভাটা লাইসেন্স নিয়েছে। বাকি ৩০-৩৫ টির জেলা প্রশাসক বা কোনোরকম পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এর মধ্যে ৬-৭টি বৈধ-অবৈধ ইটভাটা বন্ধ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ৬-৭ টি ইট ভাটা বন্ধ থাকলে ও অবৈধ ইটভাটাগুলো এখনো বন্ধ হয়নি। জেলার সব উপজেলায় ইটভাটাগুলো অনায়াসে ইট প্রস্তুত এবং তা পুড়িয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ ও জলবায়ু দূষণের ফলে জনস্বাস্থ্য চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বসতবাড়ির পাশে ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় তারা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। গাছের ফল-ফলাদিও কমে গেছে ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায়। আর এভাবেই ইট ভাটার কার্যক্রম চলছে। ইট ভাটার পাশে বসবাসকারীরা প্রায় সর্দি কাঁশি এবং শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর অবৈধ ইটভাটার তালিকা প্রকাশ করলেও বন্ধ হয়নি অবৈধ ব্যবসা।
এ ব্যাপারে অনুমদোনহীন ইটভাটার মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছি তবুও যদি ইটভাটাকে অবৈধ বলেন তাহলে আমরা কোথায় যাবো?
নেত্রকোণা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাবিকুন্নাহার জানান, ২৪টি ইট ভাটা ছাড়পত্র নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাকী ৩৬টির ছাড়পত্র নেই। জনবল সংকটের কারণে দায়িত্ব পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও ছাড়পত্র ছাড়া যে সব ইটভাটার কার্যক্রম চলছে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও অবৈধ ইটভাটার মালিকদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেট সুহেল মাহমুদ জানান, বৈধ ইটভাটা ছাড়া কোনো ভাটা চলছে না। প্রত্যেক ইটভাটাকে লাইসেন্স নবায়ন করাসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে ব্যর্থ হবেন তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নেত্রকোণা বিভাগের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট সহকারী কমিশনার জানান, জেলায় প্রতিবছর ৪৫ টি ইটভাটার রাজস্ব আদায় করা হয়। এর মধ্যে কোনটা বৈধ কোনটা অবৈধ এই হিসাবে রাজস্ব আদায় হয় না। ইটভাটা চালু থাকলেই তাদের ভ্যাট দিতে হবে। বাকিটা জেলা প্রশাসনের বিষয়।
নেত্রকোণা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, অবৈধ ইট ভাটাগুলোর কারণে ব্যবসায়িকভাবে আর্থিক ক্ষতিতে রয়েছে বৈধ ভাটার মালিক গুলো।
আনন্দবাজার/শহক