নেত্রকোণার ১০ উপজেলায় চলতি বছর ১ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলের তিন উপজেলা মদন মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীতে বোরো আবাদি জমির পরিমাণ ৪৪ হাজার ৭ ৬৭ হেক্টর।
নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলে শীতকে উপেক্ষা করে কৃষিজমি তৈরি, বোরোর বীজতলা থেকে চারাতোলা ও সেচসহ ফসলের ক্ষেতে রোপন করে হাওরাঞ্চলে শতভাগ জমিতে বোরোর আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। আগাম বন্যার কবল থেকে বোরো ফসল রক্ষায় ৪টি হাওর উপজেলাসহ ৯ উপজেলায় নির্মিত হচ্ছে ১৩২টি ডুবন্ত বাঁধ। ১৭৫টি পিআইসির (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টশন কমিটি) মাধ্যমে পুরোদমে এ বাঁধগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।
এদিকে আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে নেত্রকোণার হাওরে শুরু হয়েছে ফসল রক্ষার বাঁধ নির্মাণ। বন্যার পানি আসার আগেই নির্ধারিত সময়ে বাঁধ নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদিকে কৃষকরা বলছেন, প্রতিবছর বালি মাটি দিয়ে যে বাধ নির্মাণ করা হয় তা ভেঙ্গে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে করে প্রতিবছর অনাবাদি হয়ে পড়ছে অনেক ফসলিজমি। তাই মজবুত ও স্থায়ী বাধঁ নির্মাণের দাবি হাওরবাসির। ফসলি জমি রক্ষায় কোনো কোনো স্থানে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের সুপারিশ করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ৯টি উপজেলায় সর্বমোট ১৮৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। ১৩২টি বাঁধের মধ্যে এক খালিয়াজুরী উপজেলাতেই ৬২টি বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া, মদনে ২৩টি, মোহনগঞ্জে ১৪টি, কলমাকান্দায় ২০টি, বারহাট্টায় ৫টি, পূর্বধলায় ২টি, দুর্গাপুরে ১টি, আটপাড়ায় ২টি এবং কেন্দুয়ায় ৩টি বাঁধ নির্মিত হচ্ছে।
হাওরাঞ্চলে প্রতিবছর বাঁধ নির্মিত হয় আর আগাম বন্যার পানির তোড়ে ভেঙ্গে যায়। কিছু কিছু এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করার কারণে বাঁধ ভেঙ্গে জমিতে বালি প্রবেশ করে নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমি। এতে করে চাষের উপযোগিতা হারাচ্ছে অনেক জমি তাতে সরকার ও কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান হাওরঞ্চালের কৃষকরা।
খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষক মহসিন মিয়া বলেন, হাওর এলাকায় বোরো আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়। আর অকস্মিকভাবে পাহাড়ি ঢল বা আগাম বৃষ্টি হলে হাওরগুলোতে পানি এসে গেলে হাওরের উঠতি বোরো ফসল তলিয়ে যায়। কৃষকরা পাকা ধান আর ঘরে তুলতে পারেন না। এজন্য বাঁধ নির্মাণ খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
নেত্রকোণার হাওর এলাকার পরিবেশ নিয়ে কাজ করা কৃষক নেতা হারুন অর রশিদ বলেন, প্রতিবছরই ডুবে থাকা বাঁধগুলো সংস্কার করা হচ্ছে এবং কিছু বাঁধ নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। এটা ভালো। কিন্তু কোনো কোনো এলাকায় কৃষকের জমি রক্ষার স্বার্থে স্থায়ীবাধ নির্মাণ করা যায় কিনা তা নিয়ে কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে বাধেঁর বালি জমিতে পড়ায় অনাবাদি হয়ে পড়ছে অনেক ফসলি জমি এতে দিন দিন কমে আসছে উৎপাদন। বিষয়টি স্বীকার করে এলাকার কৃষকদের স্বার্থে কিছু কিছু এলাকায় পরিকল্পিতভাবে মজবুত বাঁধ নির্মাণের সুপারিশ করেছেন বলে জানান, নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এফ এম মোবারক আলী।
নেত্রকোণা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং জেলা পিআইসি কমিটির সদস্য সচিব এম এল সৈকত বলেন, বাঁধ নির্মাণে চাহিদা অনুযায়ী ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সাত কোটি টাকা ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও কলমাকান্দার হাওর এলাকায় বিভিন্ন ফসল রক্ষা বাধেঁর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সরকারী নীতিমালা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে দ্রুত গতিতে বাঁধ নির্মাণ এগিয়ে চলছে, বন্যার পানি আসার আগেই বাঁধ নির্মাণ হবে এবং আগামী ২৮ ফেব্রয়ারী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাধঁ নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলেও জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কর্মকর্তা।
নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক ও জেলা পিআইসি কমিটির সভাপতি কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, পিআইসি কমিটিগুলো এবার দ্রুত গঠন করা হয়েছে এবং বাধঁ নির্মাণ কাজও অনেক আগেই শুরু করে দেয়া হয়েছে। বাঁধ নির্মাণে কোনো প্রকার গাফিলতি যাতে না হয়, সেজন্য প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মনিটরিং করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া যথাসময়ে বাঁধগুলোর নির্মাণ কাজ যাতে শেষ হয় সেজন্য পিআইসি কমিটিগুলোকে নির্দেশ প্রদান ও করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।