ঢাকা | শনিবার
২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিওকোভে আতঙ্ক নয়

নিওকোভে আতঙ্ক নয়

দক্ষিণ আফ্রিকাতে শনাক্ত হয়েছিল করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। এটি নিয়ে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। পরে আশার আলোও জাগায় করোনা নতুন ভ্যারিয়েন্ট। বিজ্ঞানীরা জানান ওমিক্রনে দেহে এন্টিবডি তৈরি করছে। এমন স্বস্তির খবরে আবারও দুঃসংবাদ হয়ে আসে আরেকটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘নিওকোভ’।

চীনের গবেষকরা করোনাভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করেছেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বাদুড়ের শরীরে ‘নিওকোভ’ ছড়ালেও আগামীতে মানুষের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জোর দিয়ে বলছে, নিওকোভ নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

ওমিক্রনের আতঙ্ক শেষ না হতেই নিওকোভের দুঃসংবাদ নিয়ে অনেকেই বড় বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, এটি করোনার কোনো ভ্যারিয়েন্ট নয়। কাল্পনিক একটি ভাইরাস।

রোগতত্ত্ববিদ ডা. মুশতাক বলেন, ‘নিওকোভ’ দক্ষিণ আফ্রিকাতে বাদুড় থেকে ছড়াচ্ছে। বাদুড় এখন খেজুরের রস খাচ্ছে। লোকালয়ে চলে এসে কলা খাচ্ছে। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, বন্যপ্রাণিদের আবাসস্থল রক্ষা করতে হবে আমাদের। তাদের খাদ্যসামগ্রীর আধারগুলো ধ্বংস করে দেয়ার কারণে তারা লোকালয়ে চলে আসছে। এতে নানা রোগবালাই বেড়ে যাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে আমরা পরিবেশকে ধ্বংস করে ফেলছি। পশু-পাখি নিজেদের আবাসস্থল হারিয়ে মানুষের সংস্পর্শে আসছে। মানুষ ও বন্যপ্রাণীর ঘনত্ব বাড়ছে। ফলে রোগব্যাধী বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। আমাদের বিভিন্ন পশু-পাখির খামার ভালো একটি দূরত্বে তৈরি করতে হবে। আপাতত নিওকোভে কোনো ভয় না থাকলেও সতর্ক থাকতে হবে।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি চীনের বরাত দিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলেছে, নিওকোভ ধরনটি এখন পর্যন্ত মানুষকে আক্রান্ত করেনি। তবে এর আরও রূপান্তর ঘটলে তা মানবদেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আর এজন্য একটিমাত্র রূপান্তর প্রয়োজন। করোনার অন্যান্য ধরনের মতোই মানবকোষে ঢুকতে পারে।

গবেষকেরা বলছেন, ২০১২ সালে সৌদি আরবে শনাক্ত হওয়া ভাইরাস মার্সের (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) সঙ্গে নতুন ধরনটি খুব সংশ্লিষ্ট। এটি মার্স কভের মতোই প্রাণঘাতী (প্রতি তিনজনে একজনের মৃত্যু) এবং বর্তমান করোনার বিভিন্ন ধরনের মতো উচ্চ সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন হতে পারে। চীনা গবেষকেরা আরও আশঙ্কা করেছেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য বিদ্যমান অ্যান্টিবডি দিয়ে নিওকোভকে ঠেকানো যাবে না।

গবেষণা প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সাময়িকীতে এখনও প্রকাশিত হয়নি। বায়োআরজিভ ওয়েবসাইটে এর পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। রুশ বার্তা সংস্থা তাসের এক প্রতিবেদনে নিওকোভ নিয়ে হু’র বক্তব্যকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, এটি মানবশরীরের জন্য হুমকি তৈরি করবে কি না, তা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, যেসব ভাইরাস মানবদেহকে আক্রান্ত করে, তার ৭৫ শতাংশেরই উৎস বন্যপ্রাণী। বাদুড়সহ বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস শনাক্ত হয়। এসব ভাইরাসের বেশির ভাগেরই প্রাকৃতিক ভাণ্ডার হিসেবে বাদুড়কে অভিহিত করা হয়। প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে তারা নিবিড়ভাবে কাজ করছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন