ঢাকা | শনিবার
১২ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘ঐতিহ্য ধরে রেখে পুরান ঢাকার উন্নয়ন করতে হবে’

‘ঐতিহ্য ধরে রেখে পুরান ঢাকার উন্নয়ন করতে হবে’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজস্ব ঐতিহ্যের একটি সংজ্ঞা রয়েছে। যা আমাদের দেশে নেই। নেই ঐতিহ্যের সঠিক সংজ্ঞাও। তাই ঐতিহ্য রক্ষার জন্য কাজ করা যেমন জরুরি তেমনি সেটির সংজ্ঞা এবং সংখ্যা নির্ধারণ করাও জরুরি। আর পুনঃউন্নয়ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই ঐতিহ্য ধরে রেখেই পুরান ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কাজ করতে হবে।

আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও পুনঃউন্নয়ন: কর্তৃপক্ষের করণীয় ও বিশেষজ্ঞ ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। ঢাকায় কর্মরত সেবা খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) এই সেমিনারের আয়োজন করে।

ডুরার সভাপতি মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্ব প্রধান আলোচক হিসেবে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডুরার সাধারণ সম্পাদক শাহেদ শফিক।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, বেশিরভাগ ভবনমালিক বলেন বাবার বাড়ির ঐতিহ্য সংরক্ষণ করবেন। ভালো কথা, তবে আমি কী পেলাম? বর্তমানে ইতিহাসের বিবর্তনে পুরান ঢাকার অনেক ঐতিহ্য হুমকির মুখে। এগুলো রক্ষায় রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা দরকার। আটটি থানা আর ২৩টি এলাকা জুড়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে পুরান ঢাকা। এই এলাকার উন্নয়ন ও পরিবর্তন ছাড়া রাজধানীর পরিবর্তন সম্ভব নয়। অথচ এই জায়গাটুকুতে জনঘনত্ব এতো বেশি! যেটি ভাবা যায় না। পুরান ঢাকার বড় সমস্যা হচ্ছে, পুরাতন জরাজীর্ণ ভবন, ছোট আকারের কক্ষ, পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা না থাকা এবং ঘিঞ্জি পরিবেশ। এছাড়াও পর্যাপ্ত রাস্তার অভাব, হকারদের রাস্তা দখলে রাখাতো আছেই। পানি ব্যবস্থাপনা ও ড্রেনেজ সমস্যাতো রয়েছেই।

তিনি জানান, পুরান ঢাকা ভূমিকম্পের জন্য খুব ঝুঁকিপূণর্, কারণ সরু রাস্তা এবং দূর্বল ভবন কাঠামোর কারণে উদ্ধার অভিযানের সুযোগ নেই। এসব কারণে অগ্নিকা- ঘটলেও অতিরিক্ত ঝুঁকি থাকে। এই জন্য নির্মাণ বিধিমালা মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে। যদিও এটি পুরান ঢাকায় সম্ভব নয়। তাই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লটগুলোকে একত্রিত করে ব্লক ভিত্তিক উন্নয়ন করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে আলাদা বিধিমালা করা যেতে পারে।’

তিনি বলেন, নতুন বিধিমালায় হ্যারিটেজ রক্ষার ক্ষেত্রেও ভাবতে হবে। যারা নিজের সড়ক, উšে§াক্ত স্থান, জলাশয়, হারানো ক্ষতিগ্রস্ত মালিককে বাড়তি সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। ভূমি মালিকদের প্রণোধনা বা অন্যত্র জমির ব্যবস্থা করে পুনঃউন্নয়ন করা যেতে পারে।

এইচবিআরসির নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাদেক বলেন, ঐতিহ্যের কোন সঠিক সজ্ঞা নেই! এটি খুব হতাশার। এতো এতো উদ্যোগ দেখে ভালো লাগছে। একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষ এবং নগরপরিকল্পনাবিদদের মধ্যে মতের অনেকটা মিল দেখেও আশান্বিত হচ্ছি। একই সঙ্গে বলতে হয়, শুধু পরিকল্পনা করলেই হবে না। বাস্তবায়নে নজর দিতে হবে।

ঐতিহ্যের সংজ্ঞা আগে নির্ধারণ করতে হবে বলে মত দেন আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম বলেন, ২০০৯ সালের সরকারি তালিকা অনুযায়ী পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী ভবন ৯৪টি। আবার ২০১৭ সালের তালিকা অনুযায়ী ৭৫টি, কিন্তু ভবন রয়েছে এক হাজার ৮৩১টি। তাই সেই তালিকা ঠিক করা উচিত। ভবন না ভেঙ্গেও সংরক্ষণ করা যায়। সমন্বিতভাবে কাজ না করলে এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা যাবে না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, ‘পুরান ঢাকায় প্রধান সমস্যা যানজট। তাই এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ জর“রি। এছাড়া আমরা দেখি কর্তৃপক্ষের রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী ¯’াপনার পাশে আট দশ তলা ভবন কিভাবে হয়? তারা কিভাবে অনুমোদন নি”েছন? এসব বিষয়ে ভাবার সময় এসেছে।

ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ স্থপতি মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, শুধু ভবন নয়, পুরান ঢাকার সংকীর্ণ রাস্তাও তার ঐতিহ্য। সবসময় রাস্তা ভেঙে বড় করতে হবে, বিষয়টা এমন নয়। সেখানে ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে পারবে না, তা না। সেসব গাড়ি প্রবেশের জন্য কাস্টমাইজড যানবাহনের বিষয়ও ভাবার প্রয়োজন আছে।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের অ্যালামনাই আয়েশা সাঈদ বলেন, পুরান ঢাকাকে পরিবর্তন করতে হলে শুরুতেই কমিউনিটিকে এক করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আমরা যতই বলি সিঙ্গাপুর বা কুয়ালালামপুর করে ফেলবো সেটি সম্ভব না। তবে আমাদের যা আছে তা দিয়ে নিজেদের মতো করে অবশ্যই পুনঃ উন্নয়ন সম্ভব।

সভাপতির বক্তব্যে ডুরা সভাপতি মো. রুহুল আমিন বলেন, ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্র্টার্স অ্যাসোসিয়েশন পেশাগত সাংবাদিকতায় মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সেবাখাতের সংবাদের ক্ষেত্রে যাতে সঠিক তথ্য মানুষ জানতে পারে সে জন্য বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। আজকে পুরান ঢাকার এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিজ্ঞ আলোচকদের মূল্যায়ন এবং পরামর্শ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মূল্যায়ন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানে সভাপতির স্বাগত বক্তব্যের পর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন ডুরার সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শামীম, অর্থ সম্পাদক শাজাহান মোল্লা সাজু, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক বারেক হোসেন।

এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডুরার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়শ্রী ভাদুড়ী, সাংগঠনিক সম্পাদক নিলয় মামুন, প্রচার ও দফতর সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য রফিকুল ইসলাম রনি, সানাউল হক সানি, মুসা আহমেদ।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন