চট্টগ্রামের লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দুই তৃতীয়াংশ চলতি বছর চালু করে দেওয়া হচ্ছে। পোর্ট কানেক্টিং রোডের নিমতলা থেকে সী বিচ পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার অংশে চলতি বছরের শেষ নাগাদ গাড়ি চলাচল করবে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও বিমানবন্দরসহ সন্নিহিত অঞ্চলের গাড়ি চলাচলে গতি আনা এবং আউটার রিং রোডের গাড়ির চাপ কমাতে এক্সপ্রেসওয়ের এই অংশটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, নগরীর লালখান বাজার থেকে সী বিচ পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে মাত্র ২০ মিনিটে শহরের মূল কেন্দ্র থেকে বিমানবন্দরসহ সন্নিহিত অঞ্চলে যাতায়াত করা যাবে। এক্সপ্রেসওয়ে লালখান বাজার থেকে শুরু হলেও মূলত বহদ্দারহাট থেকে এর সুফল মিলবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে নানা জটিলতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। লুপ, র্যাম্প, সার্ভিস লাইন, বৈদ্যুতিক লাইন, বৈদ্যুতিক পোল, ওয়াসার পাইপ, গ্যাস সরবরাহ পাইপলাইন, বন্দরের নিরাপত্তাসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়। এতে করে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু শহরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই এক্সপ্রেসওয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু করা জরুরি।
এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকালে শহরের প্রধান সড়কটির যান চলাচলে বেহাল অবস্থা তৈরি হয়। বিশেষ করে আগ্রাবাদ ও ইপিজেডসহ সিমেন্ট ক্রসিং এলাকা বেহাল। বিমানবন্দর সড়কের বেহাল অবস্থায় হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন আউটার রিং রোড ব্যবহার করে পতেঙ্গা অঞ্চলে যাতায়াত করেন। এতে আউটার রিং রোডের ওপর যানবাহনের চাপ তৈরি হয়।
আগামী জুন মাসের দিকে কর্ণফুলীর তলদেশের টানেল চালু করা হলে আউটার রিং রোডের যানবাহনের চাপ অনেক বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে পণ্যবাহী গাড়ির চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। বাড়তি গাড়ির মাঝে বিমানবন্দর ও পতেঙ্গা সী বিচমুখী গাড়ি আউটার রিং রোডে চলাচল করলে জট তৈরি হতে পারে। এই অবস্থায় আউটার রিং রোডের ওপর চাপ কমানোর জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দুই তৃতীয়াংশ চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যে বন্দরের নিমতলা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বড়পুল থেকে নিমতলা পর্যন্ত পোর্ট কানেক্টিং রোড সংস্কার করা হয়েছে। অলংকার থেকে নিমতলা পর্যন্ত পোর্ট কানেক্টিং রোডের সংস্কার কার্যক্রমও দ্রুত শেষ করার তাগাদা রয়েছে। এতে করে বিমানবন্দর কিংবা পতেঙ্গাগামী শত শত গাড়ি আগ্রাবাদ থেকে এক্সেস রোড ধরে বড়পুল হয়ে নিমতলায় এসে র্যাম্পের মাধ্যমে ফ্লাইওভারে উঠতে পারবে এবং পতেঙ্গা অঞ্চলে গিয়ে নামতে পারবে। নিমতলা থেকে মাত্র ১০ মিনিটে বিমানবন্দর কিংবা পতেঙ্গা বিচে পৌঁছতে পারবে যেকোনো গাড়ি। নিমতলা এলাকায় লুপ ও র্যাম্প দিয়ে গাড়ি ওঠানামার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সিডিএ সূত্র জানায়, পতেঙ্গা সী বিচ থেকে নিমতলা পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটারে ইপিজেডের কাছ পর্যন্ত গার্ডার স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। বন্দর এলাকা পর্যন্ত কোনো কোনো অংশে পিলার নির্মাণ শেষ হয়েছে। কোথাও পাইলিং করা হচ্ছে। ওই অংশের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ওই অংশের বাকি কাজ শেষ করে বছরের শেষের দিকে এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
সিডিএর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা পতেঙ্গা থেকে কাজ শুরু করেছিলাম। পতেঙ্গা থেকে ইপিজেড পর্যন্ত কাজ অনেকটা শেষ পর্যায়ে। আগামী মাস কয়েকের মধ্যে নিমতলা পর্যন্ত কাজ শেষ করে চলতি বছরের শেষ নাগাদ যান চলাচল চালু করতে পারব।
সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেন, পুরো প্রকল্প একসাথে চালু করতে গেলে আরো সময় লাগবে। তাই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা না করে চলতি বছরের মধ্যেই এক্সপ্রেসওয়ের নিমতলা থেকে পতেঙ্গা বিচ পর্যন্তএলাকা যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেব। নিমতলা থেকে যেকোনো গাড়ি এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে পতেঙ্গা গিয়ে নামতে পারবে। অপরদিকে পতেঙ্গা থেকে যেকোনো গাড়ি এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে নিমতলায় এসে নেমে বড়পুল হয়ে শহরের যেকোনো অংশে যাতায়াত করতে পারবে।
আনন্দবাজার/শহক