ঢাকা | শনিবার
২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বায়ুদূষণে বাড়ছে বন্ধ্যত্ব-গর্ভপাত

বায়ুদূষণে বাড়ছে বন্ধ্যত্ব-গর্ভপাত

নদীমাতৃক দেশ হওয়া সত্ত্বেও দেশে প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বায়ুদূষণের প্রভাবে বিভিন্ন রোগ-বালাই বাড়ছে। বায়ুদূষণের কারণে শিশুদের নিউমোনিয়া বেড়ে যায়। তাছাড়া দূষণের ফলে দেশে প্রতিনিয়ত কিডনি রোগির সংখ্যা বেড়ে ৮ লাখে দাঁড়িয়েছে। লিভারের বিভিন্ন জটিল সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।

তবে সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় বায়ুদূষণের প্রভাবে নারীদের বন্ধ্যত্ব ও গর্ভপাত বেড়ে যাচ্ছে। বায়ুদূষণের প্রভাব বিষয়ে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ পরিবেশবাদী আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি মনে করেন, বাতাস নষ্ট হওয়া মানে জীবন নষ্ট হওয়া। আর বায়ুদূষণ রোধ করা গেলে দেশে গড় আয়ু সাত বছর বৃদ্ধি করা যেতো।

বায়ুদূষণের প্রভাব বিষয়ে প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. রাশিদা বেগম বলেন, মেইল ইনফারটিলির কারণও বায়ু দূষণ। দূষণের ফলে নারীদের ডিম্বাশয় কল্পনাতিতভাবে কমে যাচ্ছে। প্রজনন বাধাগ্রস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দূষণের মধ্যে বায়ুদূষণ অন্যতম। তাছাড়া মার্কারি, লেড দূষণ বেড়ে যাওয়ায় গর্ভপাতের হার বাড়ছে বলে মনে করেন প্রজনন স্বাস্থ্যের এ অধ্যাপক।

এ ব্যাপারে মতামত তুলে ধরে উদ্ভিদবিদ ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, অত্যধিক বায়ুদূষণে ঢাকার উদ্ভিদের সহ্যের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। গাছ আগের মতো অক্সিজেন তৈরি করতে পারছে না। গাছ ঠিকমতো বেড়েও উঠতে পারছে না। সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় গাছের খাদ্য উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে আগের মতো সবুজও হচ্ছে না গাছপালা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক মনে করেন উন্নয়ন অংশীজনের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে রাস্তায় খানা-খন্দ কমছে না।

বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, বিভিন্ন দেশে বায়ু দূষণের মাত্রা ৩০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি হলে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হয়। তবে আমাদের দেশে তা ৪০০ অতিক্রম করলেও কোনো সতর্কতা জারি করা হয়নি। ফলে মানুষ জানারও সুযোগ পায়নি। তিনি বায়ুদূষণ মনিটরিংয়ে সরকারকে জোর দিতে বলেন। তছাড়া বায়ুদূষণে সংক্ষুদ্ধ মানুষ কেন পরিবেশ আদালতে যেতে পারবে না, সে প্রশ্ন রাখেন। দেশের সব জলধার সংরক্ষণের দাবিও জানান এ পরিবেশবিদ।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ক্যাপসের দেশব্যাপী ৬৪ জেলার বায়ু দূষণ সমীক্ষা ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এসব মতামত তুলে ধরেন।

বিশ্বব্যাপী অসংক্রামক রোগে যে পরিমাণ মানুষের মৃত্যু হয় এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু বায়ুদূষণের কারণে হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতিবছর ৪.২ মিলিয়ন বা ৪২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বায়ুর গুণগত মান সূচক বা একিউআই অনুসারে বাতাসে বস্তুকণা ২.৫ এর মাত্রা শূন্য থেকে ৫০ হলে তাকে ‘ভালো’ আর যদি ৫১ থেকে ১০০ হয় তাহলে তা ‘সন্তোষজনক’ বলে বিবেচনা করা হয়। দেশে আদর্শমাত্রা ৬৫। গত কয়েকদিনে ঢাকায় এই মাত্রা ৪০০-এর কাছাকাছি। এমনকি এর বেশিও রেকর্ড করা হয়েছে। যাকে ‘মারাত্মক’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। এই কণা মানুষের ফুসফুসে ঢুকে গিয়ে মারাত্মকর রকমের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

সম্প্রতি দেশের বায়ুমানের ওপর বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় প্রতিবেদনে দূষণের মারাত্মক চিত্র ওঠে এসেছে। ক্যাপসের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ থেকে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হয়। প্রায় ৩০ ভাগ দূষণ সৃষ্টি করছে নির্মাণ প্রকল্পগুলো।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন