মহামারী করোনার প্রভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছেনা মৃৎশিল্পীরা। উপজেলার হাঁসাড়া, ষোলঘর, তন্তর, বাঘড়া, শ্রীনগর সদর এলাকার হরপাড়া ও শ্রীনগর বাজার সংলগ্ন পালবাড়িগুলোতে মৃৎশিল্পীদের এখন আর আগের মত কর্মব্যস্ততায় থাকতে দেখা যায় না।
কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রভাবে মৃৎশিল্পীদের আয়ের উৎস প্রায় বন্ধ। করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিধিনিষেধ থাকার কারণে গত দুইবছর কোনো বৈশাখী মেলা ও উৎসব হয়নি। এতে মাটির তৈরি বিভিন্ন উপকরণ সামগ্রী বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
এরই মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণরোধে সরকারের সবশেষ নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকবে। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও উপজেলায় প্রায় শতাধিক মৃৎশিল্প পরিবার বৈশাখী মেলা ও বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে মাটি সামগ্রী তৈরি করছেন। বিভিন্ন পাল বাড়ি ঘুরে এমন চিত্রই লক্ষ্য করা গেছে।
জানা যায়, হাঁসাড়ায় ৪২৭ বছর ধরে এ পেশায় থেকে মাটির হাড়ি-পাতিল, কলশ, খোরা-বাসন, প্রতিমাসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে মৃৎশিল্প পরিবারগুলো ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। করোনারোধে বিভিন্ন সময়ে লকডাউন ও বিধিনিষেধের কারণে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। হাঁসাড়া কুমার পাড়ায় প্রায় ২৫ পরিবারের বসবাস। পরিবারগুলো শতভাগ মৃৎশিল্প কর্মের ওপর নির্ভরশীল। সাংসারিক কাজকর্মের পাশাপাশি এখানকার নারীরাও মাটির সামগ্রী তৈরীর কাজ করেন। এর আগে করোনাকালীন সময়ে উপজেলা প্রশাসন ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মহীন পরিবারগুলোকে বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে।
এ সময় হাঁসাড়ার অরুন পাল, মদন পাল, বিনয় পাল, লক্ষণ পাল, সুরন্ড পাল, মিঠুন পাল বলেন, করোনার প্রভাবে এ পেশায় তাদের ভাগ্যের চাকা থেমে যাচ্ছে। বিভিন্ন মেলা উৎসব বন্ধ থাকায় আগের মত মাটির সামগ্রী বিক্রি হচ্ছেনা। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে সরকারিভাবে যে পরিমাণ সাহায্য সহযোগিতা পান তা দিয়ে সংসার চলেনা। বাধ্য হয়েই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প ছেড়ে অনেকেই অন্যপেশায় সরে যাচ্ছেন।
শ্রীনগর হরপাড়ার গণেশ পাল, অমিত পাল, চঞ্চলা পাল, তপন পাল বলেন, করোনায় তাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। অর্ডার পেলে হাড়ি-পাতিল, দইয়ের খোড়া ও বিভিন্ন প্রতিমা বানান। বৈশাখী মেলার জন্য অল্প করে মাটির খেলনা সামগ্রী বানিয়ে রাখছেন। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও মাটির সামগ্রী তৈরি করার মধ্যে দিয়ে পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পটি ধরে রাখার চেষ্টা করছেন তারা।
আনন্দবাজার/শহক