রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মামলা বিচারের এখতিয়ার নিয়ে কোন আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে অং সান সু চির দলের এমপি আর কর্মীদের নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যের ছায়া সরকার (এনইউজি)।
রয়টার্স গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে জানায়, মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আইনপ্রণেতা ও প্রশাসনিক কর্মীদের নিয়ে গঠিত এনজিইউ মামলাটির বিষয়ে প্রাথমিকভাবে আপত্তি জানিয়েছিল, তা প্রত্যাহার করেছে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ অবস্থান তুলে ধরে তারা।
সামরিক জান্তা মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের আগে ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির সরকার প্রাথমিকভাবে এ মামলার বিচারে আইসিজের এখতিয়ার নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সু চি নিজেই নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেসে উপস্থিতি থেকে মিয়ানমার সরকরের পক্ষে শুনানি করেন এবং রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হাতে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে গণহত্যার অভিযোগ এনে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার করা এ মামলার বিচারে আইসিজের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করা মূলত বিচার প্রক্রিয়াকে দেরি করিয়ে দেওয়ার একটি চেষ্টা হিসেবে দেখছেন অনেকে।
‘নির্বাসিত সরকার’ হিসেবে এনইউজির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একটি ‘প্রশাসনিক ধ্যানধারণার মধ্যে থেকে’ আইসিজে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে জান্তার অধীনে থাকা মিয়ানমার দূতাবাসের কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং সেটা নিয়ে তাদের আপত্তি আছে। আইসিজে যদি সামরিক জান্তাকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রক্রিয়ায় থাকে, তাহলে তা জান্তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে এবং মিয়ানমারে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা নৃশংস অপরাধ বাড়িয়ে তুলবে।
এনজিইউ আহ্বান জানিয়েছে, আইসিজে যেন জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি কিয়াও মোয়ে তুনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। এর আগে ২০ জানুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই মামলার বিষয়ে মিয়ানমারের তোলা আপত্তির ওপর গণশুনানির তারিখ ঘোষণা করে আইসিজে। দ্য হেগের পিস প্যালেসে ২১, ২৩, ২৫ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি এই শুনানি হবে।
পাঁচ বছর আগে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে যে বর্বরতা চালানো হয়, তার মধ্য দিয়ে দেশটি ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে এ মামলায়।
২০১৯ সালের ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর আইসিজেতে এ মামলার ওপর প্রাথমিক শুনানি হয়। তাতে গাম্বিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির বিচার বিষয়ক মন্ত্রী আবুবকর তামবাদু। অন্যদিকে মিয়ানমারের পক্ষে শুনানি করেন নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি, যিনি এখন মিয়ানমারের জান্তার হাতেই বন্দি।
গতবছর ফেব্রুয়ারিতে এক সামরিক অভ্যুত্থানে সু চির দল এনএলডির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে আবারও সামরিক শাসন ফিরিয়ে আনে দেশটির সেনা নেতৃত্ব।
আনন্দবাজার/শহক