এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহার বাড়ছেই। চাহিদা বাড়ায় বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। ফলে যেখানে সেখানে অবৈধভাবে মজুদ করে এই ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডারের বেচাকেনা চলছে। বেশিরভাগ দোকানি বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই এ ব্যবসা করছে। এলপিজি সিলিন্ডার এখন পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে নেই আগুন নির্বাপক যন্ত্র। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রতিকারেরও কোনো ব্যবস্থা নেই।
রংপুর অঞ্চলে গ্যাস সংযোগ না থাকলেও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সিলিন্ডার গ্যাসের। আর এখানেই ঘটছে বিপত্তি। আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে বড় ধরনের দুর্ঘটনার। ক্রেতার চাহিদা বৃদ্ধির কারণেই ব্যবসায়ীরা মজুদ করা শুরু করেছেন অধিকহারে। গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রির নির্দিষ্ট দোকান ছাড়াও বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দোকানে। স্টুডিও, মুদি দোকান, গালামালের দোকান, ওষুধের দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে গ্যাসের সিলিন্ডার। পাশাপাশি রয়েছে ব্যবসায়ীদের অবৈধ মজুদ। সব থেকে ভয়ংকর বিষয় অধিকাংশ ব্যবসায়ী এ সকল মজুদ গড়ে তুলেছেন আবাসিক এলাকার মধ্যে। যদিও অধিকাংশ ব্যবসায়ি অনুমোদনের কোনো তোয়াক্কা করেন না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কিছুদিন আগেও গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার ছিল শহরকেন্দ্রীক। গ্রামীণ মানুষজন এর ব্যবহার জানতো না। তারা তাদের রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতো খড়ি। এখন দিন বদলেছে। গ্রামেও বিস্তার লাভ করেছে গ্যাস সিলিন্ডারের। ষোলআনা নির্ভর না হলেও খড়ির পাশাপাশি গ্রামের বাড়িগুলোতেও রাখা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। প্রয়োজনে দ্রুত চা, দুধ গরম করাসহ ছোট প্রয়োজনে এ গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে।
এক তথ্যে জানা যায়, রংপুর সিটি এলাকার ৭০ ভাগ পরিবার গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছে। যদিও শহরে বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন গ্যাস কোম্পানির পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে প্রশিক্ষণ কর্মশালা করা হয়। তবে গ্রামাঞ্চলে গৃহিনীরা গ্যাস ব্যবহারে দক্ষ নয়। এ কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতো আছেই। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সেনা কল্যাণ সংস্থার গ্যাস ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে বিস্ফোরকদ্রব্যের নিয়মনীতি ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই রংপুর নগরীর আশরতপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বিভিন্ন গ্যাস সিলিন্ডার কোম্পানির গোডাউন, যা ইতিমধ্যে আতংকিত করে তুলেছে বসবাসকারী বাসিন্দাসহ পথচারীদের। আশরতপুর এলাকার মানুষজন জানান, এলাকায় চালকল ও চাতালের ব্যবসা বন্ধ করে সেখানে গোডাউন ঘর তৈরি করে একটি গ্যাস কোম্পানিকে ভাড়া দেওয়ার পর থেকে পুরো এলাকার মানুষ এখন আতংকে রয়েছে। সেখানে মজুদ করা গ্যাস সিলিন্ডার রংপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে লাইসেন্সবিহীন ছোট-বড় মুদি দোকান, পানের দোকানসহ ফ্লেক্সিলোডের দোকানগুলোতে বিক্রি করা হচ্ছে। যার ফলে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
রংপুর ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানায়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫২ ধারা অনুযায়ী, সেবাগ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কাজ করলে তিন বছরের কারাদণ্ড, বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। শিগগিরই অবৈধভাবে এ জ্বালানি বিক্রি বন্ধে অভিযান চালানো হবে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের নামমাত্র ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে রংপুরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় যেসব গ্যাস সিলিন্ডার কোম্পানির গোডাউন ও কেমিক্যাল কারখানা গড়ে উঠেছে, খুব শিঘ্রই অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হবে এবং পরবর্তীতে কোনো অবৈধ কারখানা যাতে সিটি করপোরেশন এলাকায় স্থাপন না হয় সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আনন্দবাজার/শহক