রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দূষিত বায়ুর দিন বাড়ছে

দূষিত বায়ুর দিন বাড়ছে

চলতি জানুয়ারি মাসে একদিনের জন্যও ভালো বায়ু সেবন করার সুযোগ হয়নি ঢাকাবাসীর। বায়ুমান বেশিরভাগ সময় ছিল ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায়। শুধু কি তাই? গত ছয় বছরের (২,১৯০ দিন) মধ্যে মাত্র ৩৮ দিন ভালো বায়ু গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছেন রাজধানীবাসী। এর মধ্যে আবার একেবারেই দুর্যোগপূর্ণ বায়ুতে ৩৭ দিন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হয়েছে। এমন তথ্য উঠে এসেছে ঢাকার বায়ুমানের ওপর করা বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, আগের বছরের তুলনায় গত বছরে গড় বায়ু দূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

ঢাকার বায়ুমান নিয়ে ছয় বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পরিচালিত গবেষণার ফলাফল গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। ‘বিপজ্জনক মাত্রায় ঢাকার বায়ুদূষণ: জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রার ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে একে আগ্নেয়গিরিতে বসবাসের মতো অবস্থা বলে উল্লেখ করেন।

গবেষণার ফলাফল তুলে বলা হয়, যেখানে আদর্শ বায়ুমান সূচক ৫০, সেখানে চলতি জানুয়ারি মাসের ২৫ দিনে ঢাকার গড় বায়ুমান সূচক এসে দাঁড়িয়েছে ২১৯ দশমিক ৫২-তে। যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। বায়ুমান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপস গত ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল অবধি ৬ বছরের জানুয়ারি মাসের বায়ুমান সূচক বা একিউআই-এর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ু দূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

গবেষণার তথ্যমতে, গত ছয় বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ২ শতাংশ সময় বা ৩৮ দিন ভালো বায়ু গ্রহণ করেন। এছাড়া ২৮ ভাগ সময় বা ৫১০ দিন চলনসই মানের বায়ু, ২৯ ভাগ সময় বা ৫৭৭ দিন সংবেদনশীল বায়ু, ২২ ভাগ সময় বা ৪৪৩ দিন অস্বাস্থ্যকর বায়ু, ১৯ ভাগ সময় বা ৩৮৫ দিন খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ২ ভাগ সময় বা ৩৭ দিন) দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহণ করেন। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আরো দেখা যায়, চলতি জানুয়ারিতে ঢাকার মানুষের একদিনের জন্যও ভালো বায়ু সেবন করার সুযোগ হয়নি। বায়ুমান বেশিরভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সাধারণত শীতের মৌসুমে গড় বায়ুমান সূচক বাড়তে দেখা যায়। ঋতুর দিক দিয়ে শীতকাল অপেক্ষাকৃত শুষ্ক ঋতু তাই এই সময়ে ধূলোবালির পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। শীতকালে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কম থাকে। ফলে এই সময়ে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায়।

দ্যা ইকোনোমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রতিবছর বসবাস অযোগ্য শহরগুলোর যে তালিকা প্রকাশ করে আসছে সেখানে ঢাকার অবস্থা খুবই নাজুক দেখা যাচ্ছে। পৃথিবীর বসবাস অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক আইকিউ-এয়ার থেকে সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বায়ু দূষণের ভয়াবহ অবস্থা ওঠে আসে। বায়ু দূষণের দিক দিয়ে ২০২০ ও ২০১৯ সালের শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ এবং বিশ্বের রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ঢাকা শহর।

আরও পড়ুনঃ  ঈদের পর করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এমন দূষিত বায়ু জীবাণুর বাহক হিসেবে মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সূত্রমতে, বাংলাদেশে ২০১৮ সালে বায়ু দূষণ জনিত রোগে মারা যায় এক লাখ ৫৩ হাজার লোক। বিশ্ব ব্যাংক-২০১৮ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী শুধু ঢাকায় বায়ু দূষণে ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটছে। প্রতিদিন গড় মৃত্যুর সংখ্যা ২৭ জন।

দূষণের উৎস
গবেষণা মতে, বায়ু দূষণের প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে আবহাওয়াজনিত ও ভোগলিক কারণ উল্লেখযোগ্য। মানবসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা, আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা অন্যতম। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ থেকে সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণ হয়। প্রায় ৩০ শতাংশ দূষণ সৃষ্টি করছে নির্মাণ প্রকল্পগুলো। ঢাকার প্রায় ১২০ স্থানে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় নির্মাণ কাজ চলছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অন্যান্য উৎসগুলোর মধ্যে ইটভাটা ও শিল্পকারখানা ২৯ ভাগ, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ১৫ ভাগ, আন্তঃদেশীয় বায়ু দূষণ ১০ ভাগ, গৃহস্থালী ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত দূষক ৯ ভাগ এবং বর্জ্য পোড়ানোর কারণে ৭ ভাগ বায়ু দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে।

দৈনিক বায়ুমান
দৈনিক ২৪ ঘণ্টা ভিত্তিতে ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের মান সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকে রাতের বেলায়। স্টামফোর্ড ক্যাপসের তথ্য মতে, ঢাকা শহরে বিকেল ৪ টার পর থেকে বায়ু দূষণের মান খারাপ হতে শুরু করে এবং যা রাত ১১ টা থেকে ২টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে। গত ছয় বছরে গড় বায়ুর মান বিশ্লেষণ করে দেখা যায় রাত একটায় বায়ুমান সূচক ছিল ১৬২। যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ এবং আদর্শ বায়ু মানের ৩ গুণের চেয়ে বেশি খারাপ।

কারণ বিশ্লেষণে ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, রাত ১০টার পর উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রচুর মালবাহী ট্রাক ঢাকা শহরে প্রবেশ করে। যার কারণে এসব যানবাহন থেকে রাতে প্রচুর বায়ুদূষণ হয়। এছাড়াও ঢাকা শহরের রাস্তাগুলো রাতের বেলায় সিটি করপোরেশনের যে ঝাড়ু দেওয়ার নিয়ম চালু রয়েছে তাতে বাতাসে ধূলাবালি উড়তে থাকে। রাতের বেলায় দিনের চেয়ে তাপমাত্রা কম থাকায় ধূলাবালি বেশি সময় ধরে বাতাসে অবস্থান করে। রাত তিনটার পর থেকে বায়ুর মানের উন্নতি হলেও আবার সকাল ৬ থেকে ৯টা পর্যন্ত একটি ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা লক্ষ্য করা যায়।

সকালের এই সময়ে অফিসগামী মানুষ এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের চাপের কারণে এই অবস্থা পরিলক্ষিত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। দিনের তাপমাত্রা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকায় এবং ভারী যানবাহনের প্রবেশ দিনের বেলায় বন্ধ থাকায় সকাল ১০টার পর থেকে বায়ু দূষণ ক্রমান্বয়ে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত কম দেখা যায়। বিকেল ৪ টার পর বায়ুর মান খারাপ হতে শুরু করে।

আরও পড়ুনঃ  বঙ্গজ ফ্যক্টরিকে দেড়লাখ টাকা জরিমানা

ঢাকার ১০ স্থানের বায়ুমান
২০২১ সালে ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যয়ন কেন্দ্র (বাপেস) বায়ুতে পিএম ২ বা বস্তুকণা ২.৫ এর উপস্থিতির পরিমাণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করে। সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১০টি স্থানে গড়ে বস্তুকণা ২.৫ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৬৩ মাইক্রোগ্রাম, যা বস্তুকণা ২.৫ এর বাৎসরিক আদর্শ মানের চেয়ে প্রায় ৪.২ গুণ বেশি। গবেষণা থেকে আরো দেখা যায়, ২০২১ সালে ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল তেজগাঁও এলাকা। প্রতি ঘনমিটারে ৭০ মাইক্রোগ্রাম। পরের অবস্থানে রয়েছে শাহবাগ এলাকা (প্রতি ঘনমিটারে ৬৮ মাইক্রোগ্রাম)। তথ্য উপাত্ত থেকে দেখা যায়, প্রত্যকটি স্থানের গড় বস্তুকণা ২.৫ ছিল নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

গবেষণায় অনুযায়ী, আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাপুর, মতিঝিল,ধানমান্ডি-৩২, সংসদ ভবন, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ এবং গুলশান-২ এই এলাকাগুলোতে গড় বস্তুকণা ২.৫ ছিল প্রতি ঘনমিটারে যথাক্রমে ৫৭, ৬২, ৬০, ৬৩, ৫৯, ৬১, ৬৬ এবং ৬৫ মাইক্রোগ্রাম এবং যা নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে প্রায় ৪-৫ গুল বেশি। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এলাকাসমূহে এমআরটি ও বিআরটি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান। মাস অনুযায়ী ১০টি স্থানের গড় বস্তুকণা ২.৫ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসে বস্তুকণা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১০২ মাইক্রোগ্রাম যা জুলাই মাসে মাত্র ২৯.১ মাইক্রোগ্রাম ছিল।

দূষণরোধে ১৫ দফা সুপারিশ
পরিদেশবাদি সংগঠনটির পক্ষ থেকে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী ১৫টি পদক্ষেপের সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ-
১.শুষ্ক মৌসুমে সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধিদপ্তর এর সমন্বয়ে ঢাকা শহরে প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘন্টা পর পর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়। এ বিষয়ে এর আগে হাইকোর্টের নির্দেশনার কথাও উল্লেখ করা হয়।

২. নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নিতে হবে।

৩. রাস্তায় ধূলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪. অবৈধ ইটভাটা গুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়াতে হবে। ৫.ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ফিটনেস বিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে প্রয়োজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের প্রচলনের কথা বলা হয়।

মধ্যমেয়াদী পদক্ষেপ
৬. সরকারি ও বেসরকারি উদ্দ্যোগে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদ বাগান করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে।

৭. ঢাকার আশেপাশে জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে।

৮. আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসাবে সেন্ড বুক এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে।

১০. সিটি গভর্নেন্স এর প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়ন মূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করতে হবে। সেবা সংস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  ঈদের দিন উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মৃদু বৃষ্টির সম্ভাবনা

দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ
১১. নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ যতদ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে।

১২. পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষন স্টেশন (ক্যামস) এর ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর আওতাধীন করতে হবে। এছাড়াও বায়ু দূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন করতে হবে।

১৩. সর্বোপরি সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বায়ু দূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য নির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশের বায়ু দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

১৪. ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।

১৫. পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস এবং পরিবেশ আদালত চালু ও কার্যকর করতে হবে

সভাপতির বক্তব্যে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ঢাকা নগরের বায়ুর মান ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে হতে বিপজ্জনক পর্যায়ে যাওয়ার পরও এ ব্যাপারে নাগরিকদের অবগত না করাটা সরকারের বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে আন্তরিকতা আছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি অবিলম্বে সরকারকে ঢাকা শহরের বায়ুর সম্পর্কে যথাযথ তথ্য যথাসময়ে সাধারণ মানুষকে অবগত করার দাবি জানান। তিনি আরো বলেন, বায়ু দূষণের কারণে ঢাকায় একটি মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে এবং আমরা সেই উন্নয়ন চাই না যে উন্নয়ন জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। তাছাড়া এমআরটি ও বিআরটি প্রকল্পগুলোতে বিদেশি কোম্পানিগুলো দূষণ ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করে এটাকে তিনি দুর্নীতি হিসেবে আখ্যা দেন। এসময় তিনি ইমারত আইন-২০০৬ এর যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানান।

জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো শাহাব উদ্দিন এমপি দৈনিক আনন্দবাজাকে বলেন, উন্নয়ন কাজের দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমরা চেষ্টা করছি। উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি কোম্পানির দূষণ ঠেকাতে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত দেশে তারা প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়ম মেনে কাজ করলেও আমাদের দেশে কেন এভাবে (দূষণ ছড়িয়ে) কাজ করবে’। তাছাড়া অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাজমুল আহসানকে ফোন করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পরিচালকের নিষেধ রয়েছে। তাই তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে অধিদপ্তরের পরিচালককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চান না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার বিষয়ে কথা বলতে কোনো আপত্তি নেই। যে দায়িত্বে আছেন তাকে প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে বাধ্য।

গবেষণার ফলাফল নিয়ে মতামত তুলে ধরেন বাপার বাপা নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এস সিদ্দিকী, ইবনুল সাঈদ রানা, ক্যাপসের গবেষণা শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ আল নাঈম এবং যুব বাপার সদস্য সচিব রাওমান স্মিতাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন