ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বটগাছের বয়স ৪০০ বছর

বটগাছের বয়স ৪০০ বছর

চার বিঘা জমির ওপর দণ্ডায়মান বটগাছটির নিচে চৈত্রমাসে মেলা বসে। মেলায় দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ আসে। ঈদ অথবা অন্যান্য উৎসবে এখানে অসংখ্য দর্শক হয়। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বেড়াতে আসে। মেলাটি উপজেলার মধ্যে বিখ্যাত

চারদিকে সবুজের সমারোহ। বাতাসে ভেসে আসে পাখির কলকাকলি। গাছের পাতার শীতল বাতাস আর ডালে ডালে বসা পাখির ডাক। সব মিলে তৈরি হয়েছে প্রশান্তির এক আবহ। প্রায় চারবিঘা জমিতে বিস্তৃত এ বট গাছের ডাল পালা ছরিয়ে আছে চারদিকে। গাছের নিচে বসলে উঠতে মন চায় না। পথচারিরা এ গাছের নিচে বসলে প্রকৃতির মায়ায় পড়ে যায়। প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্যের দেখা মিলবে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সরাইদহ বটভূমিতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সরাইদহ গ্রামে রয়েছে হৃদয় ছুয়ে যাওয়া প্রায় চারশ’ বছর বয়সী বটগাছটি। চারবিঘা জমির উপর প্রায় চারশ’ বছর ধরে দাড়িয়ে আছে এ বটগাছটি। গাছের শাখা-প্রশাখা ডাল পালা মাটির সঙ্গে তৈরি করেছে আঙ্গিক সম্পর্ক।

প্রবীণদের মতে, বহু পুরোনো বটতলাটিতে সাধু ঋষিদের ধ্যান ধারনার জায়গা ছিল। এখানে বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা হতো একসময়। বর্তমানে এখানে আর সাধু সন্যাসীদের দেখা না গেলেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীতে ভরপুর থাকে।

জানা যায়, বটতলায় প্রতিবছর চৈত্রমাসে চড়পাড়া মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় হিন্দু মুসলিম সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ মেলা দেখতে আসে লোকজন। চারপাশে গ্রাম, আর মাঝখানে এ গাছটি। তাই গাছটি ধীরে ধীরে তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে। ডাল ভেঙে দেয়ায় গাছটি আর বড় হতে পারছে না। এতে গাছের সৌন্দর্য কিছুটা নষ্ট হচ্ছে। তবুও এলাকার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে সরাইদহ গ্রামের এ বটগাছটি। শীতল ছায়া, পাখির কলকাকলি, সবুজ-শ্যামল এ স্থানটিতে অবসরে বসে থাকলে মনের সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। পথচারি দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে এ অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য।

বটতলার দোকানি আরিফুল ইসলাম বলেন, সরকারি ছুটির দিনে এখানে অনেক দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ আসে। ঈদ অথবা অন্যান্য উৎসবে এখানে অসংখ্য দর্শক হয়। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বেড়াতে আসে। বিশেষ করে চৈত্রমাসে গাছের নিচে মেলা বসে। এ মেলা উপজেলার মধ্যে বিখ্যাত। এ মেলায় সকল ধর্মের মানুষ উপস্থিত হয়। আশি বছর বয়সী ছোরহাব আলী বলেন, আমি জন্মের পর থেকে এ গাছটি এমনই দেখতেছি। গাছের সঠিক বয়স কেউ বলতে পারে না। আমাদের ধারণা এ গাছের বয়স চারশ’ বছরের মতো।

হাফিজুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধ বলেন, এ এলাকার সবচেয়ে প্রবীনব্যক্তি বিশু হাজি। সে একশ’ বিশ বছর বয়সে মারা যাওয়ার আগে বলেছেন, তার বাবাও নাকি বট গাছটি এমনই দেখেছেন। আমরাও জন্মের পর থেকে এমনই দেখতেছি। গাছের সঠিক বয়স আমরা জানি না। তবে সবারই ধারণা গাছটির বয়স চারশ’ বছরের মতো। বেড়াতে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, জায়গাটি অনেক নিরিবিলি এবং খুবই সুন্দর হওয়ায় মাঝে মাঝে এখানে বেড়াতে আসি। এখানে আসলে প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। শীতল বাতাস পাখির কলকাকলিতে মন সতেজ হয়ে যায়।

রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান বলেন, গাছটি অনেক পুরাতন। গাছের সঠিক বয়স বলতে পারবো না। বাবা দাদাদের মুখে গাছের অনেক গল্প শুনেছি। আনুমানিক বয়স চারশ’ বছর। বয়সের সঙ্গে গাছের ডাল পালা চারপাশ ছেয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাছটি দেখতে লোকজন আসে। এ বট গাছ আমাদের এলাকার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন