ময়মনসিংহে আন্তঃনগর ট্রেন
ময়মনসিংহ স্টেশন হয়ে প্রতিদিন ৭ টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এর মাঝে একটি ট্রেন ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম সড়কে যাতায়ত করে। আর বাকি ৬টি ট্রেন ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) রুটে চলাচল করে।
ঢাকা অভিমুখে ৬টি ট্রেনে আসন বরাদ্ধ রয়েছে মাত্র ৫২১টি। অথচ শুধু ময়মনসিংহ স্টেশন থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনে ঢাকা যাওয়া আসা করে কয়েক হাজার যাত্রী। এক কথায় শুধু আন্তঃনগর ট্রেনে বরাদ্দকৃত টিকিটের তুলনায় যাত্রীচাপ থাকে ৫ থেকে ৭ গুণ বেশি। টিকিটের জন্য কাউন্টারের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ অনেক যাত্রীর। অনলাইনে এ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কাটার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন অনেকে। সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ কাউন্টারে টিকিট না পাওয়া গেলেও পাওয়া যায় স্টেশনের আশপাশের মুদি দোকান, চায়ের স্টল ও চিহ্নিত কয়েকজন কালোবাজারীর কাছে। অনেকই বাধ্য হয়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে তিন-চারগুণ টাকা বেশি দিয়ে কালোবাজারির কাছ থেকে টিকিট ক্রয় করে যাতায়ত করেন। কালোবাজারির দৌরাত্ম কমানোর পাশাপাশি প্রতিটি ট্রেনে কোচ বৃদ্ধি করে ময়মনসিংহ স্টেশনের জন্য অতিরিক্ত সিট বরাদ্দের দাবি স্থানীয়দের।
ময়মনসিংহ রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা অভিমুখে আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেসে আসন বরাদ্ধ রয়েছে ১৫৩টি, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে ৭৭টি, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে ৯৯টি, যমুনা এক্সপ্রেসে ১০৭টি, হাওড় এক্সপ্রেসে ৪৩টি এবং মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে ৪২টি আসনসহ ময়মনসিংহের যাত্রীদের জন্য ৫২১টি আসন। আর চট্টগ্রাম অভিমুখী আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেসে আসন বরাদ্দ আছে ২২২টি। তাছাড়া প্রতিটি ট্রেনে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ থাকে ৪টি করে আসন। সাধারণ যাত্রীদের জন্য যে আসনগুলো বরাদ্দ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে প্রথমশ্রেণীর আসন খুবই কম। বেশিরভাগই শোভনশ্রেণির আসন। এ নিয়েও যাত্রীদের মাঝেও রয়েছে চরমক্ষোভ।
সম্প্রতি ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় টিকিট কাউন্টারে ঢাকাগামী যাত্রীদের দীর্ঘলাইন। রাত দুইটা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও দুপুর পর্যন্ত কোনো যাত্রী টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করেন একাধিক যাত্রী।
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী হারুন অর রশিদ নামে একযাত্রী বলেন, রাত দুইটা থেকে কাউন্টারে এসে সকাল ৯টার দিকে তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে একটি সিট পেয়েছি।
রোকসানা বেগম নামে আরেক যাত্রী জানান, লেখা-পড়া শেষ করেছি। এখন চাকুরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে ঢাকা যেতে হয়। স্টেশনে এসে কোনো টিকিট পাই না, আর এ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে আরো কঠিন। আমরা যারা বেকার নারী তাদের জন্য ট্রেনে চলাচল নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। টিকিট সংগ্রহ করাটা আমাদের জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে রয়েছে কালোবাজারিদের রাজত্ব। কাউন্টারে টিকিট না পাওয়া গেলেও স্টেশনের মুদি দোকান ও চায়ের স্টলে ঠিকই টিকিট পাওয়া যায়। তবে সেই জন্য যাত্রীদের গুণতে হয় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি অর্থ।
নগরীর গাঙ্গিনারপাড় এলাকার ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান জানান, আমাদের প্রতিসপ্তাহে দুই থেকে তিনবার পণ্য আনার জন্য ঢাকা যাতায়ত করতে হয়। ট্রেনে যাতায়াত করলে আমাদের মাল পরিবহণ করতে সহজ হয়। কিন্তু কাউন্টার থেকে আমরা টিকিট কাটতে পারিনা। প্রতিবারই কালোবাজারিদের কাছ থেকে বেশি দরে টিকিট কিনতে হয়। আমাদের জন্য টিকিট যেন সোনার হরিণ।
নগরীর সানকিপাড়া এলাকার নজরুল ইসলাম প্রতিসপ্তাহের রবিবার যমুনা ট্রেন ধরে ঢাকায় গিয়ে অফিস করেন। আবার বৃহস্পতিবার যমুনা কিংবা ব্রহ্মপুত্র ট্রেন ধরে ময়মনসিংহে যাতায়ত করেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ময়মনসিংহবাসী সবদিক থেকে অবহেলিত। ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর হবার পর যাত্রীচাপ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবারেই দালাল ধরে দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকা বেশি দিয়ে টিকিট কিনতে হয়। অনলাইনেও টিকিট পাওয়া যায় না। তবে কালোবাজারির কাছে নিয়মিত টিকিট পাওয়া যায়।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) জেলা সভাপতি মীর গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ঢাকা-ময়মনসিংহ ডাবল রেললাইন, ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল সড়কে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চালু ও সকল আন্তঃনগর ট্রেনে কোচ বৃদ্ধি। যাতে ময়মনসিংহের যাত্রীরা সকালে ঢাকা গিয়ে অফিস করতে পারে আবার ঢাকায় অফিস করে দিনে দিনে ময়মনসিংহে চলে আসতে পারে। তাহলে এ অঞ্চলের ট্রেনে চলাকারী মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা কমবে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ স্টেশন সুপার জাহাঙ্গীর আলম টিকিট সঙ্কটের কথা স্বীকার কওে বলেন, অনলাইনে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি শুরুর পর থেকে কাউন্টারে প্রাপ্ত টিকিটের সংখ্যা কমে গেছে। তারপরও তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি স্বচ্ছভাবে টিকিট বিক্রিসহ যাত্রী সেবা প্রদানের। টিকিটের জন্য প্রতিদিন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে ফোন আসে। আর বর্তমান করোনা মহামারীর সময়ে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করার কারণে টিকিটও কম পাচ্ছি। আসন সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
কাউন্টারে টিকিট না থাকলেও কালোবাজারিদের কাছে ঠিকই পাওয়া যায় এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্লাটফর্মে কিংবা কাউন্টারের সামনে কোথাও কালোবাজারি হয়না। প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করা হয়। বাহিরে অন্য কোথাও কালোবাজারি হয়ে থাকলেও কারা এর সঙ্গে জড়িত তা চিহ্নিত করা কঠিন।
আনন্দবাজার/এম.আর