করোনাভাইরাসের সংক্রণ প্রতিনিয়িত বেড়েই চলছে। মঙ্গলবার সাড়ে আট হাজার সংক্রণ থাকলেও একদিনের ব্যবধানে তা সাড়ে নয় হাজারে দাঁড়িয়েছে। এ যেন আলোর গতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইলকেও হার মানাচ্ছে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস করোনাভাইরাস মহামারি কোনও জায়গাতেই ফুরিয়ে যায়নি বলে বিশ্ব নেতাদের সতর্ক করেন।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তারের মধ্যে দেশে গত এক দিনে আরও ৯ হাজার ৫০০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।
একদিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ গত বছরের ১২ আগাস্ট, সেদিন ১০ হাজার ১২৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। গতকাল বুধবার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ১১ শতাংশে, যার মানে হল, ১০ জনের নমুনা পরীক্ষা করলে চারজনেরই কোভিড পজিটিভ আসছে। দৈনিক শনাক্ত রোগীর এই হার গতবছরের ১৩ অগাস্টের পর সর্বোচ্চ। সেদিন শানাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২৯৪ জনে। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় গত বছর জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু-হু করে বাড়তে থাকে। ২৮ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। ২০২১ সালের ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৫ ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যু হয়, যা মহামারির মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এরপর বেশকিছু দিন ২ শতাধিক মৃত্যু হয়। এরপর গত ১৩ আগস্ট মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ এর নিচে নামা শুরু করে। দীর্ঘদিন শতাধিক থাকার পর গত ২৮ আগস্ট মৃত্যু ১০০ এর নিচে নেমে আসে। ২০২০ সালের এপ্রিলের পর গত বছরের ১৯ নভেম্বর প্রথম করোনাভাইরাস মহামারিতে মৃত্যুহীন দিন পার করে বাংলাদেশ। সর্বশেষ দ্বিতীয়বারের মতো ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুশূন্য দিন পার করেছে দেশ।
অপরদিকে টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সতর্কতা দিয়ে তিনি বলেছেন, বিশ্বজুড়ে প্রাধান্য বিস্তারকারী নতুন শনাক্ত হওয়া ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে তুলনামূলক মৃদু এবং এই ভ্যারিয়েন্টের মাধ্যমে ভাইরাসের হুমকি নির্মূল হয়ে যাওয়ার ধারণার বিরুদ্ধে।
জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. টেড্রোস বলেছেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাবে গত সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে নতুন করে এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। এই ভ্যারিয়েন্টটি কম গুরুতর কি না সে বিষয়ে এখনও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর মাঝেই এটিকে মৃদু রোগ বলে যে প্রচার করা হচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রধান বলেন, কোনও ভুল করা চলবে না। ওমিক্রনের কারণে হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু এবং এমনকি কম গুরুতর অসুস্থতাও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে পারে।
বিশ্ব নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেছেন, বিশ্বজুড়ে ওমিক্রনের অবিশ্বাস্য বাড়-বাড়ন্তের কারণে আরও নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভাইরাস শনাক্তকরণ এবং মূল্যায়নের ব্যবস্থা এখনও দুর্বল রয়েছে। অনেক দেশে এখনও টিকাদানের হার অত্যন্ত কম। এটা নিয়ে আমি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। টিকাহীন ব্যক্তিদের গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কয়েক গুণ বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি সেবাবিভাগের পরিচালক ডা. মাইক রায়ানও একই ধরনের সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। বলেন, ওমিক্রনের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণশীলতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়েছে; বিশেষ করে যেসব দেশে অল্প কিছু মানুষ টিকা নিয়েছেন, সেসব দেশে।
আনন্দবাজার/এম.আর