ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলনবিলের শোভা বাড়াচ্ছে অতিথি পাখি

দেশের বৃহৎ বিল চলনবিল এক এক ঋতুতে এক এক রূপ ধারণ করে এই চলনবিল। বর্ষায় চলনবিলের বিস্তৃত জলরাশি যেমন মানুষকে মুগ্ধ করে তেমনি শীত কালের শুরুতে সরিষে ফুলের হলুদে রঙ বিমোহিত করে মানুষকে।

শীত কালের শুরুতেই চলনবিলে আসতে শুরু করে অতিথি পাখি। বড় জলাশয় গুলোতে থেকে যাওয়া পানিতে পাখা ঝাপটে একরাশি সুখ খোঁজে সেই অতিথি পাখিগুলো। কখনও রোদে শুকিয়ে নেয় গা। এসব দৃশ্য চলনবিলের সৈন্দর্য বর্ধণে যোগ করে বাড়তি মাত্রা।

১৯০৯ সালে চলনবিল জরিপের এক প্রতিবেদনে চলনবিলের আয়তন দেখানো হয় ১৪২ বর্গমাইল। এর মধ্যে ৩৩ বর্গমাইল এলাকায় সারা বছর পানি জমে থাকে। ১ হাজার ৭৫৭ হেক্টর আয়তনের ৩৯টি প্রধান বিল রয়েছে চলনবিলে।

বড়াল, চিকনাই, করতোয়া, তুলশী, আত্রাই, নন্দকুজা, গুমানী, চেঁচুয়া, ভাদাই, বানগঙ্গা বরনাইসহ আরো কিছু নদী প্রবাহিত হয়েছে চলনবিলের মধ্য দিয়ে। এসব নদী, বিলের কিছু কিছু অংশে জমে থাকা পানিতে শীতকালে আসে অতিথি পাখি। এবারও আসতে শুরু করেছে।

কিছু প্রজাতির দেশি পাখিও সৈন্দর্য বাড়ায় এসব জলাশয়ের। সব মিলিয়ে চলনবিলের জল ও স্থলভাগ এখন মুখরিত পানকৌড়ি, বক, হরিয়াল, হারগিলা, রাতচোরা, বালিহাঁস, ইতালী, শর্লী, পিঁয়াজ খেকো, ত্রিশূল, বাটইলা, নারুলিয়া, লালস্বর, কাদাখোঁচা, ফেফি, ডাহুক, গোয়াল, শামুকখোল, হটটিটি, ঘুঘুসহ বিভিন্ন দেশি বিদেশী পাখির কলতানে। এসব পাখির দলবদ্ধ বিচরণ মুগ্ধ করছে সবাইকে। এ সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু সৌখিন পাখি শিকারীরা ভক্ষণের উদ্দেশ্যে এবং পেশাদার পাখি শিকারীরা বিক্রির উদ্দেশ্যে কৌশলে পাখি শিকারের চেষ্টা করছেন।

সরজমিন ভাঙ্গুড়া উপজেলার সারুটিয়া গ্রামে, রেললাইনর পাশের খাল পাড়ে গেলে দেখা যায়, শান্ত, বদ্ধ জলে অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ। কেউ যেন এ জলাশয়ে পাখি না মারতে পারে এজন্য থানা কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন। দক্ষিণ সারুটিয়া গ্রামের আব্দুল হান্নান, টগর মাস্টার, মজনু, হানিফ, শিমুল, আবু তারেক রাশেদুল হাসানসহ গ্রামের ছোট বড় সব মানুষ দেখে রাখেন পাখি গুলো।

বেশ কয়েক বছর ধরেই পাখি আসে যৌথ মালিকানাধীন এ খালে। নভেম্বর মাস থেকে পাখি আসতে শুরু করে। শীত শেষে চলে যায়। প্রায় মাস তিনেক পাখিগুলো থাকে এ জলাশয়ে।

সকালে এবং বিকেলে অধিক সংখ্যক পাখি জলাশয়ে অবস্থান নেয়। দিনের অন্য সময়ে আশ পাশে খেতে যায়। রাতে পাখি গুলো লোকালয়ের বাঁশ ঝাঁর ও অন্যান্য গাছে অবস্থান করে। আমাদের পৌর মেয়র গোলাম হাসনায়েন রাসেলের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবং গ্রামবাসী সোচ্চার থাকায় এখানে এখন আর শিকারীরা আসেনা পাখি শিকারে।

চাটমোহরের পাঁচশোয়াইল গ্রামের আলহাজ্ব মোজাম্মেল হক জানান, না বুঝে মানুষ পাখি শিকার করে। এতে করে আমরা নিজেরাই আমাদের পরিবেশকে ধ্বংস করছি। ধংস করছি জীব বৈচিত্র। যে অতিথি পাখিরা একটু উষ্ণতার খোঁজে নিজ আবাস ভূমি ছেড়ে চলে আসে আমাদের দেশে সেই পাখিগুলোর কোন কোনটা আর শীত শেষে নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারে না।

চাটমোহর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফিরোজা পারভীন জানান, অর্থলোভী পাখি শিকারীদের শিকার ও লোভ খুবই বেদনাদায়ক। চলনবিলের জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় এ বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। যে কোন মূল্যে পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন