- ট্যুরিস্ট বাসে দশর্নীয় স্থান ভ্রমণে খরচ ৩৫০ টাকা
মৌলভীবাজার জেলার পর্যটন খাতকে আরো সমৃদ্ধ ও পর্যটকবান্ধব করতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে দুটি ট্যুরিস্ট বাস। মাত্র ৩৫০ টাকায় দিনব্যাপী ঘুরে দেখা যাচ্ছে জেলার প্রধান প্রধান দর্শনীয়স্থানগুলো। চালুর পর থেকে এসব বাসে দল বেঁধে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা। শুধু তাই নয় অর্থ সাশ্রয়, স্বল্প সময় ও সার্বিক নিরাপত্তায় চলা এসব বাসে ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন তারা। জেলার প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্রগুলো দেখার ক্ষেত্রে বাস দুটি ভূমিকা রাখবে এমনটাই দাবি পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন দুটি বাস জেলার বড়লেখা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর থেকে ছাড়বে। পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখিয়ে ফের ছেড়ে যাওয়া স্থলে ফিরে আসবে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি এ জেলার সাতটি উপজেলায় রয়েছে প্রাকৃতিক অনেক পর্যটন স্পট। চা বাগানের পাশাপাশি রয়েছে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় জাতীয় উদ্যান। মাধবপুর লেক, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ। শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাইক্কা বিল। চা গবেষণা কেন্দ্র, বধ্যভূমি ৭১, সীতেশ দেবের চিড়িয়াখানা। বড়লেখার মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর। সদর উপজেলার বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, রাজনগরের জলের গ্রাম অন্তেহরি, কুলাউড়ার গগনটিলার মত নয়নাভিরাম পর্যটন স্পট।
প্যাকেজ-১-এর আওতায় রয়েছে চা-বাগান, গগণটিলা, মাধবপুর লেক ও হাকালুকি হাওর। জনপ্রতি ভাড়া ৩০০ টাকা। কেউ দুপুরের খাবার খেতে চাইলে একশ টাকা যোগ করে ভাড়া হবে চারশ টাকা। এ প্যাকেজের বাস প্রতিদিন সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গল থেকে যাত্রী নিয়ে বড়লেখা ঘুরে আসবে।
প্যাকেজ-২-এর আওতায় রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, বাইক্কাবিল। জনপ্রতি ভাড়া ৩৫০ টাকা। যারা দুপুরের খাবার খাবেন তাদের ৪৫০ টাকা করে ভাড়া দিতে হবে। একই সময়ে দ্বিতীয় প্যাকেজের বাস বড়লেখা থেকে ছেড়ে শ্রীমঙ্গল ঘুরে সেখানে ফিরে যাবে।
গতকাল ট্যুরিস্ট বাসে চড়ে জেলার কয়েকটি দর্শনীয় স্থানে গিয়ে কথা হয় যাত্রীদের সঙ্গে। প্রায় সব যাত্রী বাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, খাবার মান ও সংশ্লিষ্টদের আচরণে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা জানান,এ বাসে চড়ে যতগুলো স্থান একদিনে ভ্রমণ করা যায়, যা গণপরিবহনে চড়ে সম্ভব নয়। বিশেষ করে ছোট দলে যারা বেড়াতে আসে তাদের অনেক অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। আবার ব্যক্তিগতভাবে গণপরিবহন ভাড়া করে ঘুরলেও এর চেয়ে বেশি ভাড়া গুনতে হয় পর্যটকদের।
দর্শনীয় স্থানে কথা হয় ঢাকা থেকে স্বপরিবারে ঘুরতে আসা ফারাহ্ তাবাস্সুমের সাথে। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান এ উদ্যোগ তার ভালো লেগেছে। একদিকে অর্থ ও সময় সাশ্রয়, অন্যদিকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এতে জেলায় পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। তবে তিনি সকালে যাত্রার সময়টা আরেকটু এগিয়ে নিয়ে আসার দাবি জানান।
কুমিল্লা থেকে আগত তাজওয়ার তাওসিফ নামের আরেক পর্যটক জানান -সার্বিক দিক বিবেচনা করলে বাসটি চড়ে ভাল লেগেছে। আগেও বেশ ক’বার এখানে এসেছি তবে এভাবে একদিনে সবগুলো স্পট ঘুড়ে দেখা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি অর্থেরও বেশ অপচয় হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়েও খানিকটা শঙ্কা ছিল। তবে এবারের ভ্রমনটা অন্যরকম লাগছে। এ সময় জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি।
স্থানীয় পর্যটক নাজিয়া চৌধুরী তাসপিয়া জানালেন তার ভাল লাগার কথা। বাসের সেবা নিয়ে তিনিও খুশি। আরো জানালেন চলন্ত বাসের ভেতর থেকে প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোও তিনি খুব উপভোগ করেছেন।
ট্যুরিস্ট বাসের সুপার ভাইজার জুবেদ আলী জানান, ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের সহায়তায় গত ১৬ অক্টোবর বাস চলাচল শুরুর পর থেকেই পর্যটকদের আগ্রহ বেড়েছে। সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার বাস দুটো চলাচল করছে। জেলার প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে পারবেন পর্যটকরা। শ্রীমঙ্গল ও বড়লেখায় হানিফ ও শ্যামলী কাউন্টারে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে।
এই প্রতিবেদককে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, এই বাস সেবা চালুর ফলে মৌলভীবাজারের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে,বাড়ছে। পর্যটন খাতের অন্যতম শর্ত হচ্ছে যাতায়াত সুবিধা। অন্য একটা সমস্যা হচ্ছে এখানের অনেক অটোরিকশা, অটোচালকরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া হাঁকেন এসব সমস্যার কারণে সব পর্যটন স্পট দেখতে পারেন না। পাশাপাশি থাকে নিরাপত্তার বিষয়টিও। তাই পর্যটকদের সার্বিক সুবিধার্থে এ বাস চালু করা হয়েছে। সেবার মান ও মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হলে ভবিষ্যতে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলেও উল্লেখ্য করেন তিনি।
আনন্দবাজার/এম.আর