ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেন্টমার্টিনকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা

সেন্টমার্টিনকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা
  • সুনীল অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে
  • ঘোষণা বাস্তবায়ন জরুরি

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। বর্তমানে দ্বীপটির পরিবেশগত ঝুঁকি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে হতাশা বিরাজ করছে সেন্টমার্টিনবাসীর মনে। পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে নতুন করে অবৈধভাবে আবাসিক হোটেল ও কটেজ নির্মাণের কাজ চলছে।

এমতাবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত জাহাজ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকার চলাচল, মাত্রাতিরিক্ত মৎস্য সম্পদ আহরণ রোধে নতুন করে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সমুদ্রে বর্জ্য ও ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ নিক্ষেপ, প্রবাল উপনিবেশ ধ্বংস, জীববৈচিত্র্য হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সেন্টমার্টিন দ্বীপ এলাকায় ৫৯০ হেক্টর প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল। এবার বঙ্গোপসাগরের ৭০ মিটার গভীর সমুদ্রের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া ঘোষণা করা হয়েছে।

বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলাধীন বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিন দ্বীপের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ৪ জানুয়ারি‘সেন্টমার্টিন মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া’ঘোষণা করে। এ মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়াটি এখন পর্যন্ত দেশের সর্ববৃহৎ এবং দ্বিতীয় মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া।

‘সেন্টমার্টিন মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া’ ঘোষণার ফলে বৈশ্বিকভাবে হুমকির সম্মুখীন গোলাপি ডলফিন, হাঙ্গর, রে মাছ, সামুদ্রিক কাছিম, সামুদ্রিক পাখি, প্রবাল, সামুদ্রিক ঘাস এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও এদের আবাসস্থল সংরক্ষণ; সামুদ্রিক মাৎস্য সম্পদের টেকসই আহরণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকার মানোন্নয়ন; জাতীয় সুনীল অর্থনীতিকে সমৃদ্ধকরণ এবং বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে মনে করছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

তাছাড়া, এই প্রটেক্টেড এরিয়া হতে টেকসই পদ্ধতিতে সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ সীমিত করা হলে এর ফলাফলস্বরূপ প্রটেক্টেড এরিয়ার মধ্যে সামুদ্রিক মাৎস্য সম্পদ ও জলজ প্রাণীর প্রজনন বৃদ্ধি পাবে।

একইসঙ্গে প্রটেক্টেড এরিয়ার বাইরেও সামুদ্রিক মাৎস্য সম্পদ ও জলজ প্রাণীর প্রাচুর্যতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যাবে। সর্বোপরি, মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের মাধ্যমে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ১৪.৫.১ অর্জনের পাশাপাশি জাতীয় সুনীল অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা সহজতর হবে। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত অনন্য এ প্রবাল দ্বীপ এবং এর প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন মুন্না বলেন, ‘পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এ ঘোষণাকে সাধুবাদ জানাই। তবে আগেও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা বা (ইসিএ) ঘোষণা করেও তা সংরক্ষণের কোন বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ দেখিনি। যার কারণে সেন্টমার্টিন যেভাবে ধ্বংস হচ্ছিল সেভাবেই ধ্বংস হচ্ছে। তেমনিভাবে আশঙ্কা রয়েছে এ ঘোষণার পরেও তা আদৌ কতটা বাস্তবায়ন হবে। তবে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করতে চাই। নিশ্চয়ই সরকার সেন্টমার্টিন রক্ষা করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিবে’।

এদিকে ২০৪৫ সালের মধ্যে দ্বীপটি পুরোপুরি প্রবালশূন্য হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক ওশান সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে। দ্বীপটিতে প্রবাল ছাড়াও রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় জলপাই রঙের কচ্ছপ, চার প্রজাতির ডলফিন, বিপন্ন প্রজাতির পাখিসহ নানা ধরনের প্রাণী। ফলে পরিবেশ রক্ষায় এ ঘোষণার পর তা বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন