ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাগরে বিপুল গ্যাস-শৈবালের সন্ধান

সাগরে বিপুল গ্যাস-শৈবালের সন্ধান
  • ১০৩ ট্রিলিয়ন কিউবিক গ্যাসের সম্ভাবনা
  • রাসায়নিক আমদানিতে হবে বিপুল সাশ্রয়
  • বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আহ্বান

দীর্ঘদিন ধরেই বঙ্গোপসাগরে নীল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছিল। ভারত ও মিয়ানমার থেকে সমুদ্র জয়ের পর আরো একটি সুসংবাদ পাওয়া গেছে দেশের সমুদ্র সীমানা থেকে। টানা দুই বছর ধরে গবেষণার পর প্রথমবারের মতো বিপুল পরিমাণ মূল্যবান সামুদ্রিক শৈবাল বা আগাছা (সি-উইড) এবং মিথেন (গ্যাস হাইড্রেন্ট) পাওয়ার কথা জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালের মেরিটাইম এফেয়ার্স ইউনিট। গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

খরবটিকে দেশবাসীর জন্য সুসংবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মন্ত্রী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম এফেয়ার্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে ‘ইউ-বাংলাদেশ জয়েন্ট কলেবরেশন অন ব্লু ইকোনমি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মাঠ পর্যায়ের এক সমীক্ষা থেকে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, মেরিটাইম এফেয়ার্স ও নেদাল্যান্ডের সহায়তায় সাগরে দুই বছর ধরে মেরিন জেনেটিক রিসোর্স গবেষণা চালানো হয়। এতে পাঁচ প্রজাতির অতি মূল্যবান সি-উইডের সন্ধান পওয়া যায়। যা থেকে বাণ্যিজ্যিক চাষাবাদ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাবে। এসব সি-উইড থেকে বিভিন্ন ধরণের ক্যামিক্যাল ও কসমেটিক উৎপন্ন করা যাবে। দেশে বর্তমানে এ ধরণের ২৮ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যিক ক্যামিকেল আমদানি করা হয়। সি-উইড থেকেই এসব ক্যামিকেল উৎপাদন করে বিদেশেও রফতানি করা যাবে বলে জানান মন্ত্রী।

মেরিটাইম এফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়াল এডমিরাল মু. খোরশেদ আলম জানান, যুক্তরাজ্যের সহায়তায় মহীসোপানের সাড়ে ৬ হাজার বর্গ কিলোমটিার সিসমেক সার্ভের তথ্য বিশ্লেষণ করে গ্যাস হাইড্রেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব গ্যাস মূলত মাটির নিচে বরফ হয়ে চাপা থাকা মিথেন গ্যাস। গাড়িতে এবং বাড়িতে এ গ্যাস ব্যবহার করা হয়। বঙ্গোপসাগরে এ ধরণের ১৭ থেকে ১০৩ ট্রিলিয়ন কিউবিক গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। সার্ভে করার স্থানে নিশ্চিতভাবে ১৭ ট্রিলিয়ন কিউবেক গ্যাসসহ বাকি অঞ্চলে সব মিলিয়ে ১০৩ ট্রিলিয়ন কিউবিক গ্যাস পাওয়ার তথ্য দেন খোরশেদ আলম। যেখানে ১ সেন্টিমিটার কিউব গ্যাসের মধ্যে ১৬৪ সেন্টিমিটার কিউব গ্যাস থাকে। মিথেন গ্যাস অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পরিবেশবান্ধব বলেও জানানো হয়। যদিও এসব গ্যাস ব্যবহারের প্রযুক্তি খুবই দুষ্প্রাপ্য।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইইজি বা একান্ত অর্থনৈতিক এলাকায় ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে সাগরে ২২০ প্রজাতির সি-উইড পাওয়া গেছে। তাছাড়া ৩৪৭ প্রজাতির মাছ, ৪৯৮ জাতের ঝিনুক, ৫২ জাতের চিংড়ি, ৫ জাতের লবস্টার, ৬ জাতের কাঁকড়া ও ৬১ জাতের সি-গ্রাস পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে ৫ জাতের সি-উইড খুবই মূল্যবান। যা কারখানায় ব্যবহার করার মাধ্যমে বড় ধরণের অর্থনৈতিক লাভ করা যাবে। এগুলো থেকে মাছের খাবার তৈরি, প্রাণীদের খাদ্য তৈরি ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। ফুড আগার পাওয়া গেছে যা প্রক্রিয়াজাত খাবার তৈরিতে কাজে লাগবে এবং বিশ্বব্যাপি এসবের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া কিছু সি-উইডে বাল্ক কসমেটিক এজেন্ট রয়েছে। যা কসমেটিক তৈরিতে কাজে লাগে। স্ক্রিন কেয়ার সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার করার মূল্যবান উপাদান পাওয়া গেছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে সমুদ্রের সম্ভাবনা কাজে লাগানের জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানানো হয়। জানানো হয়, সমীক্ষার ভিত্তিতে নয়টি খাতের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক মৎস ব্যবস্থাপনা, মৎস চাষ, বাণিজ্যিক নৌপরিবহণ, সমুদ্রিক পর্যটন, নবায়নযোগ জ্বালানী, জাহাজ নির্মাণ, ম্যানগ্রেভের বস্তুসংস্থান, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও মেরিন স্পেশাল পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন।

সি-উইড নিয়ে যারা কাজ করতে চায় এবং হ্যাচারি ও চাষাবাদের জন্য যোগ্য ও আগ্রহীদের বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হবে। যা কর্মসংস্থান তৈরি ও অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। আর সামুদ্রিক বাণিজ্য থেকে লাভের একটি অংশ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের কল্যানে ব্যয় করা হবে বলেও জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে পেট্রোবাংলা ও গবেষক দলের বিজ্ঞানীরা উপস্থিত ছিলেন।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন